বিপজ্জনক: শহরের বিভিন্ন জায়গায় হলুদ ডাস্টবিনে সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গে মিশে এ ভাবেই উপচে পড়ছে কোভিড-বর্জ্য। নিজস্ব চিত্র।
কোভিড-বর্জ্যের সঙ্গে মিশে থাকছে সাধারণ বর্জ্য। কোভিড-বর্জ্য সংগ্রহের দায়িত্বপ্রাপ্ত ‘কমন বায়োমেডিক্যাল ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট ফেসিলিটিজ়’ (সিবিডব্লিউটিএফ) সেগুলি সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তার পরে অবশিষ্ট সাধারণ বর্জ্য নিয়ে যাচ্ছেন কাগজকুড়ানিরা। ফলে এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাজ্যে সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়ছে কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চয়তা কোথায়— বিশেষজ্ঞদের একাংশ তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। এমনকি কোভিড-বর্জ্য সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ এবং নষ্টের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরির জন্য রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ যে কমিটি গড়েছে, তারাও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
পর্ষদ গঠিত কমিটির সদস্যদের একাংশের বক্তব্য, প্রথমত খোলা জায়গায় যে ভাবে বিন বসানো হয়েছে, তা ঠিক হয়নি। কারণ বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আইন অনুসারে, এই ধরনের সংক্রামক বর্জ্য খোলা জায়গায় ফেলে রাখা যায় না। বরং কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্দেশে সেই বর্জ্য দ্রুত সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াকরণের কথা বলা হয়েছে। কমিটির প্রস্তাবের ভাষ্য অনুযায়ী—‘কোভিড-বর্জ্যের জন্য খোলা জায়গায় রাখা হলুদ বিন জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশগত বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।’
কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘‘হলুদ বিনে ফেলা কোভিড-বর্জ্য প্রায় উপচে পড়ছে। অথচ এই ধরনের সংক্রামক বর্জ্য ঢাকা দিয়ে রাখার কথা।’’ কমিটির আর এক সদস্যের কথায়, ‘‘সেই মার্চ মাসে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ কোভিড-বর্জ্য নিয়ে নির্দিষ্ট নীতির কথা বলেছিল। অথচ, আট মাস পরেও বিষয়টি নিয়ে সুসংহত পরিকল্পনা করা গেল না!’’ সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্য তথা ‘স্টেট আর্বান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি’ (সুডা)-র যুগ্ম অধিকর্তা আশিস সাহার কথায়, ‘‘কোভিড-বর্জ্য ফেলার সমস্যা নিয়ে আলোচনা হলেও হলুদ বিনগুলি কোথায়, কী ভাবে বসানো হচ্ছে বা হয়, সেটা আমরা দেখি না।’’ সুডা সূত্রের খবর, কলকাতা পুরসভা বাদ দিয়ে অন্য পুর এলাকায় সংস্থা শুধু হলুদ বিন কিনে দেয়। কিন্তু সেটি বসানোর দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট পুরসভার। তবে কলকাতা পুর এলাকায় এই কাজ করেন পুর কর্তৃপক্ষই। কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক নব দত্ত বলেন, ‘‘কোভিড-বর্জ্য নিয়ে যে চূড়ান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীনতা দেখা যাচ্ছে, সেটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।’’
আরও পড়ুন: জনস্বার্থে যে কোনও সময়েই সেতু চালু করতে পারে রাজ্য, জানাল রেল
কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় কোভিড-বর্জ্য সংগ্রহের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিবিডব্লিউটিএফ আবার জানাচ্ছে, পুরসভা হলুদ বিন বসালেও সাধারণ মানুষ সেখানে কোভিড-বর্জ্যের পাশাপাশি প্রতিদিন রান্নাঘরে তৈরি বর্জ্যও (কিচেন ওয়েস্ট) ফেলছেন। সংশ্লিষ্ট সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর রমাকান্ত বর্মণ জানান, বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের জন্য যে যন্ত্র নির্দিষ্ট, তাতে সাধারণ এবং কোভিড-বর্জ্য একসঙ্গে দিলে যন্ত্র বিকল হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে পুরো শহরের কোভিড-বর্জ্য সংগ্রহের ব্যবস্থাই ভেঙে পড়বে। তাঁর কথায়, ‘‘তাই হলুদ বিন থেকে আমরা শুধু কোভিড-বর্জ্য সংগ্রহ করি। অন্য বর্জ্য তেমনই পড়ে থাকে।’’
কলকাতা পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য তথা কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা দফতরের প্রাক্তন মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদার বলেন, ‘‘হলুদ বিনের বিষয়টি জঞ্জাল অপসারণ দফতর দেখে না। সেটা স্বাস্থ্য দফতর বলতে পারবে।’’ পুর স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘হলুদ বিনে শুধুমাত্র কোভিড-বর্জ্য ফেলার জন্য নাগরিকদের সচেতন করা হয়েছে। কিন্তু তার পরেও অনেকেই সেটা মানছেন না।’’
আরও পড়ুন: কলকাতায় ওসি স্তরে বড়সড় রদবদল, আরও বদলের সম্ভাবনা জেলাতে
বিষয়টি নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলার আবেদনকারী সুভাষ দত্তের বক্তব্য, ‘‘শুধু হলুদ বিন বসালেই হবে না। সেই বিনে ঠিক মতো কোভিড-বর্জ্য ফেলা হচ্ছে, না কি অন্য বর্জ্যের সঙ্গে তা মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার।’’ প্রসঙ্গত, এই মামলায় পরিবেশ আদালত কোভিড-বর্জ্য সংক্রান্ত ‘স্টেটাস রিপোর্ট’ জমা দিতে বলেছে রাজ্যকে। পরিবেশমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেন, ‘‘এই সংক্রান্ত সমস্যাগুলি আমাদেরও নজরে পড়েছে। যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মেনেসেই সংক্রান্ত রিপোর্টও নির্দিষ্ট সময়ে দেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy