Advertisement
২১ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus in Kolkata

এক বস্তিতেই আক্রান্ত ১৬ জন, তা-ও ফেরেনি হুঁশ

এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ওই এলাকায়। প্রশ্ন উঠেছে, করোনা পজ়িটিভ হলেও কেন কাউকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হল না?

অসচেতন: অনেকে আক্রান্ত হলেও সুরক্ষা-বিধি মেনে চলার চিত্র দেখা যায়নি বাগবাজারের এই বস্তিতে। বুধবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

অসচেতন: অনেকে আক্রান্ত হলেও সুরক্ষা-বিধি মেনে চলার চিত্র দেখা যায়নি বাগবাজারের এই বস্তিতে। বুধবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২০ ০৫:৪৩
Share: Save:

মুম্বইয়ের ধারাভি বস্তিতে করোনা সংক্রমণে শোরগোল পড়েছে। এ বার খাস উত্তর কলকাতার বাগবাজারের একটি বস্তিতে একসঙ্গে ১৬ জন করোনা আক্রান্তের খোঁজ মিলল বুধবার। স্থানীয় পুর প্রশাসন জানাচ্ছে, মঙ্গলবার রাতে স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট আসার পরেই আক্রান্ত ১৬ জনকে নিউ টাউনের কোয়রান্টিন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের পরিবারের সদস্য আরও ২৬ জনকে পাঠানো হয়েছে হাওড়ার একটি কোয়রান্টিন কেন্দ্রে।

এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ওই এলাকায়। প্রশ্ন উঠেছে, করোনা পজ়িটিভ হলেও কেন কাউকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হল না? ওই এলাকাটি কলকাতা পুরসভার সাত নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। স্থানীয় ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর বাপি ঘোষ বলেন, ‘‘কারও মধ্যেই সংক্রমণের কোনও উপসর্গ নেই। অকারণে হাসপাতালে পাঠিয়ে কী হবে? রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে। বস্তির মানুষকে সচেতন করতে এবং আশপাশের এলাকার লোকেদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই আক্রান্তদের কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়েছে।’’

বাগবাজার উইমেন্স কলেজের ঠিক পাশেই ফুটপাত ঘেঁষা ৬০ ফুট বাই ৭০ ফুট জায়গা জুড়ে ওই বস্তিটি। ঘিঞ্জি এলাকায় এক-একটি ঘরে সাত-আট জনের বাস। পুরসভার হিসেব, বস্তিতে মোট ১৩৫টি ঘরে অন্তত এক হাজার লোক থাকেন। সেই থেকেই সেটির নাম ‘হাজার বস্তি’। চলতি মাসের শুরুতে বস্তির কয়েক জনের জ্বর হয়। জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকে। বিষয়টি পৌঁছয় স্থানীয় পুর প্রশাসনের কানেও। তার পরেই ৪৫ জনকে চিহ্নিত করা হয়, যাঁদের জ্বর কিছুতেই কমছিল না। গত ৬ জুন ওই ৪৫ জনের করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয় বস্তিতেই। বাপিবাবু জানান, সরকারি হাসপাতালের পরীক্ষক গিয়ে সেখানকার বাসিন্দাদের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করেন। সেই পরীক্ষার রিপোর্টই এসেছে মঙ্গলবার রাতে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ১৬ জন আক্রান্তের মধ্যে তিরিশ থেকে আশি— সব বয়সের লোকই আছেন।

আরও পড়ুন: কোভিড পজ়িটিভ, শুনেই পালালেন রোগিণী

যদিও একসঙ্গে এত জন আক্রান্ত হওয়ার পরেও সচেতন হননি বস্তির বাসিন্দারা। এ দিন দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, বস্তির সামনের ফুটপাতে জড়ো হয়ে গল্পে মেতেছেন অনেকে। কয়েক জনের মুখে মাস্কও নেই। যে বাড়ির বাসিন্দা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, সেই বাড়ির দেওয়ালেই হেলান দিয়ে গা-ঘেঁষাঘেঁষি করে বসে তাস খেলতেও দেখা গেল কিছু লোককে। সুরক্ষা-বিধি বলতে স্রেফ পুলিশের বসিয়ে দিয়ে যাওয়া গার্ডরেল। সময়ে সময়ে তা সরিয়েই বেরিয়ে পড়ছেন বস্তির বাসিন্দারা।

নিমাই সর্দার নামে এক বাসিন্দা বললেন, ‘‘এখানে জলের কল মাত্র একটি। এক বাড়ির দেওয়াল ঘেঁষে অন্য বাড়ি উঠেছে। দূরে দূরে থাকব কী করে?’’ সজল তিওয়ারি নামে আর এক জন দাবি করলেন, ‘‘কারও কিছুই হয়নি। আমাদের এখান থেকে তুলে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। তাই জোর করে করোনা হয়েছে বলে ফাঁসানো হল। যাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তাঁদের ফেরানো না-হলে আমরা রাস্তায় নামব।’’

আরও পড়ুন: বিমানবন্দরের মেঝেতেই পিপিই ফেলছেন বহু যাত্রী

বাপিবাবুর দাবি, ‘‘অনেক শ্রমিক বাইরে থেকে এসে ওখানে উঠেছেন। তাতেই সংক্রমণ রুখতে পারলাম না।’’ বিষয়টিকে বিশেষ আমল দিতে চাননি কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য তথা পুর স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতীন ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘ওটা ছোট জায়গা। অত চিন্তার কিছু নেই। সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’ তবে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, ‘‘একটা জায়গা থেকে একসঙ্গে এত জন আক্রান্ত হলে চিন্তা তো থাকেই। দ্রুত ওই এলাকা ঘিরে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছি।’’

যদিও সেই নির্দেশে কাজ হবে কি না, তার স্পষ্ট উত্তর কোনও তরফেই পাওয়া যায়নি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy