Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

‘মুখ ঢাকাই ক্রমশ হয়ে উঠুক শহুরে সংস্কৃতির অঙ্গ’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) তথ্য বলছে, কোভিড ১৯-এর প্রথম রিপোর্টে চারটি সংক্রমিত দেশের মধ্যে চিন বাদ দিয়ে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ছিল।

সতর্ক: মাস্ক পরে সপরিবার। বুধবার, ই এম বাইপাসের কালিকাপুর এলাকায়। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

সতর্ক: মাস্ক পরে সপরিবার। বুধবার, ই এম বাইপাসের কালিকাপুর এলাকায়। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

দেবাশিস ঘড়াই
শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২০ ০৫:৩১
Share: Save:

সংক্রমিত হওয়ার আতঙ্ক। বিশেষ করে ড্রপলেটের মাধ্যমে শ্বাসযন্ত্রে ভাইরাস সংক্রমণের অভিজ্ঞতা যে দেশ বা শহরের বেশি, সেখানকার সংস্কৃতিতে মাস্ক ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে গিয়েছে। আর কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোখার ক্ষেত্রে ওই মাস্ক-সংস্কৃতিই সংশ্লিষ্ট দেশ-শহরকে বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে। যেমন জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া। সংক্রমণের তথ্য বিশ্লেষণ করে এমনটাই জানাচ্ছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং চিকিৎসকদের একটি অংশ। করোনার দাপট থেকে শিক্ষা নিয়ে এ শহরেও মাস্ক-সংস্কৃতি চালুর ক্ষেত্রে সওয়াল করছেন অনেকে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) তথ্য বলছে, কোভিড ১৯-এর প্রথম রিপোর্টে চারটি সংক্রমিত দেশের মধ্যে চিন বাদ দিয়ে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার পর্যন্ত জাপানে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা সাত হাজার ৬৪৫ জন, প্রতিদিন গড়ে ৮৮ জন সংক্রমিত হয়েছেন। দক্ষিণ কোরিয়ায় সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ১০ হাজার ৫৬৪ জন, প্রতিদিন সে দেশে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা গড়ে ১২৪ জন। আবার হংকং-এও মঙ্গলবার পর্যন্ত আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল হাজারের মতো। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকদের একটি অংশের বক্তব্য, অতীতে স্প্যানিশ ফ্লু-র সময়ে জাপানে প্রায় পাঁচ লক্ষ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছিল। সেই সঙ্গে পরবর্তীকালে যোগ হয়েছিল শিল্পায়নের ফলে দূষণ এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার সংক্রমণ। এ সব থেকে বাঁচতে মাস্ক সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত সে দেশ। এক গবেষকের কথায়, ‘‘তথ্য বলছে, প্রতি বছর জাপানে প্রায় চারশো কোটি মাস্কের উৎপাদন হয়। গত বছর জাপানের জনসংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৬৮ লক্ষ ৬০ হাজার প্রায়। অর্থাৎ, এক জন নাগরিক প্রতি বছর গড়ে ৩১টি মাস্ক ব্যবহার করেন।’’ একই ভাবে বিশ্বের অন্যতম ঘন জনবসতিপূর্ণ শহর হংকং মাস্কের সচেতনতার কারণেই ২০০২-’০৩ সালে সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) সংক্রমণ রুখতে সফল হয়েছিল। এ বার এখনও পর্যন্ত কোভিড ১৯-ও!

‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস’-এর বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের প্রাক্তন প্রধান চন্দনা দাস বলেন, ‘‘ড্রপলেটের মাধ্যমে সংক্রমণ রোখার ক্ষেত্রে মাস্কের বড় ভূমিকা রয়েছে। কারণ, ঢাকা থাকলে নাক বা মুখ দিয়ে ভাইরাস প্রবেশের আশঙ্কা যে অনেকটাই কমে তা প্রমাণিত।’’ ততটা জোর না দিলেও ঠিক ভাবে মাস্ক পরলে ড্রপলেটের মাধ্যমে সংক্রমণ আটকানো যে সম্ভব, তা মেনে নিয়েছে হু। মাস্ক পরলে নিজেকে বাঁচানোর পাশাপাশি আশপাশের মানুষকে অনেকটাই সুরক্ষিত রাখা যায়, সে বিষয়ে জোর দিয়েছেন হু-র গবেষকেরা। ইএনটি চিকিৎসক অর্জুন দাশগুপ্তের কথায়, ‘‘রাস্তাঘাটে সাধারণ সর্দি-কাশির জন্যও যদি কেউ হাঁচেন-কাশেন, সেখানেও মাস্ক পরা বা মুখ ঢাকা থাকলে সুরক্ষিত থাকা যায়।’’ একটি বেসরকারি হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগের প্রধান সংযুক্তা দত্ত আবার বলছেন, ‘‘বাড়িতে সাধারণ কাপড়ও দুটো স্তরে ভাঁজ করে মাস্কের মতো করে পরা যায়। তাতে সংক্রমণের আশঙ্কা অনেকটাই কমে। পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে মুখ ঢাকাই ক্রমশ হয়ে উঠুক শহুরে সংস্কৃতির অঙ্গ। সেটাই সমাজের পক্ষে মঙ্গল।’’

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অন্য একটি অংশ অবশ্য মাস্ক-সংস্কৃতির কারণে জাপান, হংকং-সহ অন্য জায়গায় সংক্রমণের হার কমার যুক্তিতে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, ওই সব জায়গায় পরীক্ষা কম হয়েছে, তাই সংক্রমণের হার কম। ‘পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়া’র সিনিয়র জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানী তথা ‘ইনস্টিটিউট অব সাসটেনেবল হেলথ ইনোভেশন’-এর অধিকর্তা প্রিয়া বালসুব্রহ্মণ্যম বলেন, ‘‘মাস্কের কারণে জাপান ও অন্য দেশে সংক্রমণ কমার তত্ত্ব এখনও প্রমাণিত নয়। তবে ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়ানো সংক্রমণ থেকে সাবধানতায় মুখ ঢাকা সব সময়েই জরুরি। তা ছাড়া মুখ ঢাকা থাকলে মানসিক জোরও পাওয়া যায়। সেটাও এই পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ।”

আরও পড়ুন: লকডাউন-বিধি মানাতে লাঠি হাতে পথে মহিলা বাহিনী

আরও পড়ুন: নবজাতকের মা-বাবাও করোনা আক্রান্ত

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy