মলিকিউলার বায়োলজিস্ট রিচার্ড জন রবার্টস
গত জুলাইয়ে আনন্দবাজার পত্রিকাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের সংক্রমণ ক্ষমতার পাশাপাশি দক্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্বের অভাব বিশ্ব জুড়ে দিশাহারা পরিস্থিতির জন্য দায়ী। এ-ও জানিয়েছিলেন, যে সব দেশ ঠিক সময়ে মানুষের সঙ্গে মানুষের ‘কন্ট্যাক্ট’ আটকাতে পেরেছে, সেই দেশগুলিতে সংক্রমণের হার তুলনামূলক ভাবে কম। মলিকিউলার বায়োলজিস্ট তথা নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী রিচার্ড জন রবার্টস যখন এ কথা বলেছিলেন, তখনও প্রতিষেধক বাজারে আসেনি। তার ৯ মাস পরে একাধিক প্রতিষেধক বাজারে এলেও করোনা-নীতি নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারকে। ভারতের সাম্প্রতিক করোনা-বিপর্যয়, প্রতিষেধকের ঘাটতি-সহ একাধিক বিষয়ে আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিনিধি দেবাশিস ঘড়াইয়ের সঙ্গে কথা বললেন এই নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী।
প্রশ্ন: এক দিকে দৈনিক সংক্রমিতের সংখ্যার নিরিখে অন্য সব দেশকে ছাপিয়ে শীর্ষে উঠে এসেছে ভারত। অন্য দিকে, প্রতিষেধকের হাহাকার চলছে দেশ জুড়ে। এই দিশাহারা পরিস্থিতির কারণ কী বলে আপনার মনে হয়?
রিচার্ড জন রবার্টস: এর পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে বলে আমি মনে করি। কিন্তু আমার মতে, এই পরিস্থিতি তৈরির অন্যতম মূল কারণ হল চাহিদা অনুযায়ী প্রতিষেধকের উৎপাদন না হওয়া। করোনা প্রতিরোধে রেকর্ড সময়ে একাধিক প্রতিষেধক বাজারে এসেছে ঠিকই। কিন্তু, তা চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত নয়। এখন এই ঘাটতি মেটানোর বিকল্প ব্যবস্থা করতেও সময় লাগবে।
প্রশ্ন: গত জুলাইয়ের সাক্ষাৎকারে আপনি বলেছিলেন, আমেরিকার মতো দেশে রাজনৈতিক নেতৃত্বের দূরদর্শিতার অভাবে কোভিড পরিস্থিতি জটিল হয়েছে, যার সমাধান দ্রুত হবে বলে মনে হচ্ছে না। ভারতও বর্তমানে সেই সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। ভারতের ক্ষেত্রেও কি পরিকল্পনার ঘাটতি রয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর: এর উত্তর আপনারা ভাল দিতে পারবেন। তবে আমার যেটা মনে হয়, পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে কেন্দ্রীয় সরকারকে সংক্রমণ রোধে দ্রুত পদক্ষেপ করতে হবে। এবং এই মুহূর্তে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে সেটাই প্রত্যাশিত। না হলে অতিমারির কারণে যে অর্থনৈতিক ও মানবিক ক্ষতি হচ্ছে, তার মূল্য চোকানো যাবে না। একমাত্র যথাযথ পরিকল্পনার মাধ্যমেই সকলের কাছে প্রতিষেধক পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। সকলের প্রতিষেধক নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই। প্রয়োজনে প্রতিষেধক উৎপাদন ও সরবরাহে কেন্দ্রীয় সরকারকে আরও বিনিয়োগ করতে হবে।
প্রশ্ন: কিন্তু প্রতিষেধক নিয়েও তো বিতর্ক রয়েছে। যেমন এই মুহূর্তে বাজারে যে প্রতিষেধকগুলি রয়েছে, তা সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের নতুন স্ট্রেনের মোকাবিলায় কার্যকর কি না, তা নিয়ে তো বিতর্ক চলছে।
উত্তর: বিতর্ক তো থাকবেই। কিন্তু তাই বলে তো গবেষণা বন্ধ করা যাবে না। সেটা আমাদের করে যেতেই হবে। কারণ, একমাত্র পরীক্ষা-নিরিক্ষার মাধ্যমেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসবে। যা আদতে সংক্রমণ রুখতে সাহায্য করবে বলে আশা করা যায়।
প্রশ্ন: সাম্প্রতিক করোনা-বিপর্যয় কবে মিটবে বলে মনে হয়?
উত্তর: সেটা বলা মুশকিল। কারণ, এই বিপর্যয়ের সঙ্গে একাধিক বিষয় জড়িত।
প্রশ্ন: যেমন?
উত্তর: যেমন, কত দ্রুত ভাইরাসের নতুন স্ট্রেন চিহ্নিত করা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে নমুনা পরীক্ষা, প্রতিষেধক প্রদানের হার-সহ নানা বিষয়ও সাম্প্রতিক বিপর্যয় মোকাবিলার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে।
প্রশ্ন: তার মানে এখনই বর্তমান বিপর্যয় থেকে মুক্তির কোনও সম্ভাবনা নেই?
উত্তর: ঠিক তা নয়। আসলে আমি যেটা বলতে চাইছি তা হল, অদূর ভবিষ্যতে সাম্প্রতিক বিপর্যয় মিটলেও সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের সংক্রমণ হয়তো থেকে যাবে।
প্রশ্ন: অর্থাৎ, অন্য অনেক রোগের তালিকায় এ বার সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের সংক্রমণও যুক্ত হল!
উত্তর: হ্যাঁ। কারণ এখনও পর্যন্ত সংক্রমণের যে প্রবণতা, তাতে সেটাই দেখা যাচ্ছে। বলতে পারেন, অনেকটা ফ্লু-র মতোই সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের সংক্রমণ একটা ধারাবাহিক সমস্যা হিসেবে থেকে যেতে পারে।
প্রশ্ন: সে ক্ষেত্রে কী করণীয়?
উত্তর: প্রতিষেধকের পাশাপাশি করোনা-বিধি মেনে চলা। কারণ, এখনও বিশ্বের অনেক দেশ প্রতিষেধক দেওয়ার ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার থেকে পিছিয়ে রয়েছে। ফলে আগের সাক্ষাৎকারে যা বলেছিলাম, এ বারও সেটাই বলছি। তা হল, সংক্রমিতের থেকে দূরে থাকা, মাস্ক পরা— এগুলোই সংক্রমণ রুখতে পারে। সেই সঙ্গে নমুনা পরীক্ষাও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। কারণ, কে সংক্রমিত আর কে নন, সেটা পরীক্ষার মাধ্যমেই বোঝা যাবে। ফলে এক দিকে যেমন প্রতিষেধক দেওয়ার হার বাড়াতে হবে, সমান্তরাল ভাবে এই নিয়মগুলিও মেনে চলতে হবে। আপাতত এ ছাড়া পথ নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy