জল-যোগ: করোনা-আতঙ্কে বারবার হাত ধোয়ায় বাড়ছে জল সঙ্কটের আশঙ্কা। নিজস্ব চিত্র
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি, কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকানোর আর একটি সহজ পথ হল জল দিয়ে বারবার হাত ধোয়া। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) তেমনই পরামর্শ দিয়েছে। সেই পরামর্শ আলাদা মাত্রা পেয়েছে রবিবার, ‘বিশ্ব জল দিবসে’র আবহে। কারণ, অদূর ভবিষ্যতে জলসঙ্কটের মুখে দাঁড়ানো শহর কী ভাবে সংক্রমণ ঠেকানোর পাশাপাশি জল-খরচের হার কমাতে পারে— বিশেষজ্ঞদের আলোচনায় উঠে এসেছে সেই প্রসঙ্গও। জল অপচয় না কমালে শহরের জলসঙ্কট আরও তীব্র আকার ধারণ করবে এবং অবশ্যম্ভাবী সেই বিপদের দিন দ্রুত এগিয়ে আসছে বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তাঁরা।
‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’-এর (সিএসই) সমীক্ষা বলছে, সাবান দিয়ে হাত ধুতে এক জন ব্যক্তির গড়ে ৩০-৪৫ সেকেন্ড সময় লাগে। দেখা গিয়েছে, সাবান হাতে ঘষার সময়ে বেশির ভাগ মানুষই কল খুলে রাখেন। ফলে সেই সময়ে কল থেকে অনবরত জল পড়তে থাকে। এমন প্রতিটি ক্ষেত্রেই গড়ে ৪ লিটার জল খরচ হয়। সেই হিসেবে সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে এক জন ব্যক্তি যদি দিনে ১০ বার হাতে সাবান দেন, তা হলে শুধুমাত্র তাঁর হাত ধুতেই জল খরচের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৪০ লিটার। ২০১১ সালের জনগণনা এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কের ‘টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স কনসালট্যান্স রিপোর্ট’ অনুযায়ী, শহরের জনসংখ্যা ও একই ঠিকানায় থাকা বসবাসকারী ব্যক্তির গড় সংখ্যা হল যথাক্রমে প্রায় ৪৫ লক্ষ এবং পাঁচ জন। ফলে পাঁচ জন থাকা একটি বাড়িতে শুধু হাত ধুতেই জল লাগছে দিনে গড়ে ২০০ লিটার! আর পুরো শহরের হাত ধুতে প্রতিদিন জল খরচ হচ্ছে প্রায় ৯০ কোটি লিটার!
এমনিতেই জল অপচয়ের নিরিখে দেশের মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে কলকাতা। শহরের পাশেই গঙ্গা থাকায় সেখান থেকে প্রয়োজন মতো জল তুলে জলপ্রকল্পের মাধ্যমে পরিশোধন করে তা কলকাতা পুরসভা সরবরাহ করে। পুরসভা সূত্রের খবর, প্রতিদিন শহরে ২০২ কোটি ৭৫ লক্ষ লিটার জল সরবরাহ করা হয়। কিন্তু জল-অপচয়ের জন্য কোনও জরিমানা না থাকায় শহরবাসীর একাংশ নির্দ্বিধায় সেই জল খরচ করে থাকেন। ফলে প্রতিদিন শহরে সরবরাহ করা জলের ৩৮ শতাংশ, অর্থাৎ ৭৮ কোটি ২৫ লক্ষ লিটার জলই অপচয় হয়ে থাকে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এই জল-অপচয়ের মাত্রাকেই আরও বহু গুণে বাড়িয়ে দিয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।
তাঁদের বক্তব্য, করোনা ঠেকাতে বারবার হাত ধোয়ার পাশাপাশি যাতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত জল খরচ না হয়— সে দিকেও খেয়াল রাখা প্রয়োজন। কারণ একাধিক সমীক্ষা ইতিমধ্যেই দেখিয়েছে, কী ভাবে শহরের ভূগর্ভস্থ জলস্তর ক্রমশ নিম্নমুখী। সিএসই-র সিনিয়র ডিরেক্টর (ওয়াটার অ্যান্ড ওয়েস্টওয়াটার ম্যানেজমেন্ট) সুরেশ রোহিল্লা বলছেন, ‘‘হাতে সাবান দেওয়ার সময়ে যদি
কল বন্ধ রাখা যায়, তা হলে হাত ধোয়ার ক্ষেত্রে মাথাপিছু দৈনিক দু’লিটার জল সাশ্রয় করা সম্ভব। এই জরুরি পরিস্থিতিতে সেটাও সচেতন ভাবে করা দরকার।’’ সচেতন ভাবে জলের কল বন্ধ রাখা গেলে হাত ধোয়ার জন্য জল-খরচের পরিমাণ প্রায় অর্ধেক কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। সে ক্ষেত্রে প্রতিদিন হাত ধোয়ার জন্য ৪৫ কোটি লিটার জল সাশ্রয় করা সম্ভব বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। এক বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘হাত ধোয়া অবশ্যই দরকার, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু সেখানেও যদি একটু সচেতন হওয়া যায়, তা হলে কিন্তু জলসঙ্কটের আশঙ্কা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব
হবে। করোনা-আতঙ্ক যেন জল অপচয়ের অজুহাত না হয়, বিশ্ব জল দিবসে সে ব্যাপারেও সকলকেই সতর্ক হতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy