Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
coronavirus

করোনা-ভয়ে মেডিক্যালে রোগী ‘হয়রানি’ চলছেই

এই অভিযোগের উৎসের হদিস মিলল রোগীদের খাবার সরবরাহের কাজে নিযুক্ত হাসপাতালের দুই কর্মীর কথায়।

ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০২০ ০৩:০১
Share: Save:

চিকিৎসা করানোর ক্ষেত্রে সুমিত্রা মান্নার পরিবারের কাছে ভরসার জায়গা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। তাই করোনা আক্রান্ত সন্দেহে স্বামী সুব্রত মান্নাকে এম আর বাঙুর থেকে সেখানে রেফার করা হলে আশ্বস্ত হয়েছিলেন সুমিত্রা। কিন্তু গ্রিন বিল্ডিংয়ে গত এক সপ্তাহের অভিজ্ঞতার নিরিখে শুক্রবার সুমিত্রার বক্তব্য, ‘‘রোগীকে যখন ফেলেই রেখে দিয়েছে তখন ছুটি দিয়ে দিক। আমার স্বামী তো শেষ হয়ে যাচ্ছে!’’

ঢাকুরিয়ার বাসিন্দা সুমিত্রা জানান, গত বুধবার তাঁর স্বামীকে বাঙুর থেকে মেডিক্যাল কলেজের গ্রিন বিল্ডিংয়ে স্থানান্তরিত করা হয়। এ দিন সুমিত্রা বলেন, ‘‘খুব শ্বাসকষ্ট হচ্ছে দেখে সিস্টারকে বললাম। কেউ দেখতেই এলেন না! স্বামী ফোনে বলছেন, কষ্ট হচ্ছে বললেও কেউ ছুঁয়ে দেখছেন না।’’ বৃহস্পতিবার সুব্রত খাবারও পাননি বলে অভিযোগ।

এই অভিযোগের উৎসের হদিস মিলল রোগীদের খাবার সরবরাহের কাজে নিযুক্ত হাসপাতালের দুই কর্মীর কথায়। এক কর্মী গ্রিন বিল্ডিংয়ে খাবার দিয়ে আসছিলেন। অন্য জন সুপার স্পেশ্যালিটি ব্লকে খাবার দিতে যাচ্ছেন। গ্রিন বিল্ডিং ফেরত কর্মী বললেন, ‘‘টেবিলে খাবার নামিয়ে দেওয়ার পরে নার্সরা বলছেন রোগীদের কাছে দিতে। আমি বললাম, পিপিই নেই, কাছে গিয়ে খাবার দিতে পারব না।’’ সে কথা শুনে অপর জন বলেন, ‘‘খাবার পড়ে থাকলে থাকবে। বেড পর্যন্ত দেওয়ার প্রশ্নই নেই।’’

আরও পড়ুন: রেড জ়োনে রেশনের কুপনের আবেদনে দীর্ঘ লাইন

আরও পড়ুন: ‘গ্রিন জ়োন’ হওয়ার পথে বেলগাছিয়া বস্তি এলাকা

লক্ষ্মীকান্তপুরের বাসিন্দা, বাইশ বছরের রমজান আলি শেখের এক আত্মীয়ের অভিযোগ, ‘‘ছেলেটার গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। ফোনে বলছে, সকালে ওষুধ দিয়েছে। এখন জ্বর বাড়লেও ওষুধ দেওয়ার লোক নেই!’’

বৃহস্পতিবার এক বৃদ্ধের চিকিৎসা না-পাওয়ার অভিযোগ এবং ইডেন বিল্ডিংয়ের কাছে তাঁর দেহ পড়ে থাকার ঘটনা নিয়ে কম হইচই হয়নি। কিন্তু তার পরেও মেডিক্যাল কলেজ জুড়ে করোনা নিয়ে ভীতি ও আশঙ্কারই খণ্ডচিত্র দেখা গেল।

কাঁকুড়গাছির বাসিন্দা, মধ্যবয়সি তপন দে-র একটি হাত নেই। জ্বর, শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি কয়েক দিন ধরে খাবারে কোনও রুচি নেই। শুক্রবার বেলেঘাটা আই ডি হাসপাতাল থেকে মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয় তাঁকে। তপনবাবুর পরিবারে বৃদ্ধা কাকিমা ছাড়া কেউ নেই। কোভিড হাসপাতালে ভর্তি হতে রোগী তাই একাই দৌড়ঝাঁপ করছিলেন।

ভর্তির কাগজ থাকা সত্ত্বেও গ্রিন বিল্ডিংয়ের এক কর্মী তাঁকে ফিরিয়ে দিচ্ছিলেন। অন্য রোগীর পরিজনেরা প্রতিবাদ করলে দূর থেকে কাগজ দেখে তাঁকে ওয়ার্ডে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন এক রক্ষী।

মেডিক্যাল কলেজের পরিষেবা নিয়ে এ দিন চিকিৎসকদের সংগঠন সার্ভিস ডক্টর্স ফোরামের তরফে একটি বিবৃতি জারি করা হয়েছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলেন, ‘‘সরকারি পরিকল্পনাহীনতার জন্যই মেডিক্যাল কলেজে রোগীরা সুষ্ঠু পরিষেবা পাচ্ছেন না। চিকিৎসক, জুনিয়র চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরাও ভুক্তভোগী।’’

এ দিন সন্ধ্যায় নতুন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে খবর। এক শীর্ষ প্রশাসক-চিকিৎসক বলেন, ‘‘শুধুই রোগীর পরিজনেদের কথা শুনে সিদ্ধান্তে আসা ঠিক নয়। এ ধরনের রোগীদের অবস্থার দ্রুত অবনতি হয়। তাই তাঁরা কেমন আছেন, তা পরিজনদের জানানোর জন্য ট্যাবের মাধ্যমে ভিডিয়ো কলের বিষয়টি দেখা হচ্ছে।’’ তিনি জানান, খাবারের সমস্যা নিয়ে রান্নাঘর কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা হয়েছে। এত দিন আয়ারা রোগীদের শয্যায় খাবার পৌঁছে দিতেন। তাঁরা না থাকায় ফয়েল প্যাকের মাধ্যমে খাবার দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, ‘‘এটা নতুন অসুখ। অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে আগের মতো পরিষেবা দিতে সময় লাগছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

corona virus covid 19 medical college
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy