Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Train accident

যা দেখলাম, ট্রেনে চড়ার আর সাহস পাব বলে মনে হয় না

কয়েক জনের সঙ্গে ওখানেই রাজমিস্ত্রির কাজ করতাম। কিন্তু হঠাৎ বাড়ি থেকে খবর এল যে শাশুড়ি মারা গিয়েছেন। সেই জন্যই তড়িঘড়ি ফেরা।

যশবন্তপুর-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসের যাত্রী, এন আর এসে ভর্তি। — নিজস্ব চিত্র।

যশবন্তপুর-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসের যাত্রী, এন আর এসে ভর্তি। — নিজস্ব চিত্র।

শঙ্কর দাস, (যশবন্তপুর-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসের যাত্রী, এন আর এসে ভর্তি)
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২৩ ১০:০০
Share: Save:

বিশেষ দরকারে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরার জন্য শেষ মুহূর্তে জেনারেল কামরার ঠাসাঠাসি ভিড়ে কোনও মতে একটা aজায়গা পেয়েছিলাম।

কোলেই ব্যাগপত্র রেখে আগের রাত থেকে বলতে গেলে নিজের জায়গায় বসে। সারাদিনের ট্রেনযাত্রার ক্লান্তির সঙ্গে ঠিক মতো খাওয়াদাওয়া না হওয়ার কারণে চোখটা লেগে এসেছিল। হঠাৎ তীব্র ঝাঁকুনিতে ঘুম ভাঙল। কিছু বুঝে ওঠার

আগেই দেখি, ট্রেনের গোটা কামরা এ দিক-সে দিক পাল্টি খেতে খেতে যাচ্ছে। কামরার ভিতরে একে অন্যের উপরে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন যাত্রীরা। সেই সঙ্গে চিৎকার, চেঁচামেচি আর কান্নার আওয়াজ। এর পরের কয়েক ঘণ্টা তো সারা জীবনেও ভোলার মতো নয়।

মাসখানেক আগেই সন্দেশখালির রামপুরের বাড়ি থেকে বেঙ্গালুরু গিয়েছিলাম। পাড়ার আর

কয়েক জনের সঙ্গে ওখানেই রাজমিস্ত্রির কাজ করতাম। কিন্তু হঠাৎ বাড়ি থেকে খবর এল যে শাশুড়ি মারা গিয়েছেন। সেই জন্যই তড়িঘড়ি ফেরা। বৃহস্পতিবার রাতেই কোনও মতে জেনারেলের

টিকিট কেটে যশবন্তপুর-হাওড়া সুপার ফাস্ট এক্সপ্রেসে উঠেছিলাম। কিন্তু আমার জন্য যে এমন বিপদ অপেক্ষা করছে, তা দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি।

শুক্রবার তখন সন্ধ্যা ৭টা হবে। সবে অন্ধকার হয়েছে। মাঠের মাঝখানে হঠাৎ ট্রেনের তীব্র

ঝাঁকুনিতেই বুঝে গিয়েছিলাম, বড় কিছু ঘটেছে। কিন্তু বাইরে যে এমন ভয়াবহ দৃশ্য অপেক্ষা করছে, তা স্বপ্নেও ভাবিনি! ট্রেন দুর্ঘটনার পরে আমাদের কামরাটা বেশ কিছুটা দূরে গিয়ে উল্টে গিয়েছিল। চারদিকে ঘুটঘুটে

অন্ধকার, চিৎকার-চেঁচামেচির সঙ্গে শরীরের অসহ্য যন্ত্রণা। কোনও মতে ওই দোমড়ানো-মোচড়ানো

কামরা থেকে বাইরে বেরিয়ে আসি।

বেরিয়ে দেখি, চারদিকে লোকজন যেমন তেমন করে পড়ে। শুধু রক্ত আর রক্ত। আশেপাশের

গ্রামের লোকজন চলে এসেছেন। তাঁরাই ট্রেনের উপরে উঠে লোকজনকে টেনে টেনে বার করছেন। কোনও মতে আমি বেরিয়ে আসি। তখন পা দিয়ে রক্ত ঝরছে। কিন্তু চারদিকে একের পর এক বীভৎস দৃশ্য দেখতে দেখতে নিজের আর চলার শক্তি

ছিল না। ঘণ্টাখানেক ওখানেই ওই ভাবে বসে ছিলাম। তার পরে স্থানীয় কয়েক জন এসে তুলে নিয়ে হাইওয়েতে নিয়ে যান। আমার থেকে নম্বর নিয়ে বাড়িতে ফোন করে ওঁরাই একটা

বাসে তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু সারা রাত আর চোখের পাতা এক করতে পারিনি।

সকালে বাবুঘাটে বাস থেকে নামি। বাড়ির লোকজন এন আর এসে নিয়ে এসে ভর্তি করেছে। হাসপাতাল থেকে বলেছে,

পাঁজরের ছ’টি হাড় ভেঙেছে। কিন্তু হাড় ভাঙলেও যে প্রাণ নিয়ে ফিরতে পেরেছি, এটাই কপালের জোর। তবে দুর্ঘটনার যে ছবি দেখলাম, কাজের জায়গায় ফিরতে ট্রেনে চড়ার আর সাহস পাব বলে মনে হয় না!

অনুলিখন: চন্দন বিশ্বাস

অন্য বিষয়গুলি:

Train accident NRS Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy