Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Durga Puja 2022

মহালয়ার আগেই উদ্বোধন, শুরু বিতর্ক

মহালয়ার তিন দিন আগেই পিতৃপক্ষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুজোর ঘোষণা করে দিয়েছেন। মণ্ডপে মণ্ডপে গিয়ে প্রতিমার পায়ে পুষ্পাঞ্জলিও দিয়েছেন।

টালা প্রত্যয়ের দুর্গাপুজো উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

টালা প্রত্যয়ের দুর্গাপুজো উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:৩৯
Share: Save:

মূর্তি উন্মোচনের সময় জানতে চাওয়ায় হীরক রাজার উদ্দেশে মুচকি হেসে রাজ-জ্যোতিষী বলেছিলেন, ‘‘লগ্ন তো সম্রাটের হাতে, পঞ্জিকা কী বলে, কী এসে যায় তাতে।’’

মহালয়ার তিন দিন আগেই পিতৃপক্ষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুজোর ঘোষণা করে দিয়েছেন। মণ্ডপে মণ্ডপে গিয়ে প্রতিমার পায়ে পুষ্পাঞ্জলিও দিয়েছেন। যা নিয়ে সমাজমাধ্যমে শুরু হয়েছে বিতর্ক। জল গড়িয়েছে রাজনীতির অঙ্গনেও। আবার তাঁর এই পুজো উদ্বোধনের বিষয়টিকে ধর্মের মোড়ক থেকে উৎসবকে পৃথক করে বার করে আনার মনোভাব বলেও মনে করছেন অনেকে।

এ দিন মুখ্যমন্ত্রী উদ্বোধন করেন শ্রীভূমি, এফডি ব্লক ও টালা প্রত্যয়ের পুজো। অনেকেরই মতে, মুখ্যমন্ত্রীর এই পুজো উদ্বোধনে পরম্পরার বিষয়টি গুরুত্বহীন হয়ে গিয়েছে। মহালয়ার তিন দিন আগে এ ভাবে উদ্বোধন শুরু হওয়ায় দুর্গাপুজোর রীতিতেও পরিবর্তন ঘটে গেল বলে মনে করছেন অনেকে।

মুখ্যমন্ত্রী প্রথমে শ্রীভূমির পুজোর উদ্বোধন করে জানান, বৃহস্পতিবার থেকেই পুজো শুরু হয়ে গেল। তবে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘এখনও মা গয়নাগুলো পরেনি। মা ক্ষমা করো। চণ্ডীপুজো-সহ অনেক ধরনের ব্যাপার আছে। তাই মাকে আমরা ফুল দিয়ে, মোম দিয়ে, মন দিয়ে অর্পণ করে ডেকে গেলাম।’’

এফডি ব্লকে এসে তিনি পুজোর মঞ্চকে বেছে নেন বাংলা ভাষার প্রচারের মাধ্যম হিসাবে। বলেন, ‘‘আপনার সন্তানদের ইংরেজি কবিতাও পড়ান। সেই সঙ্গে ধনধান্য পুষ্প ভরাও শেখান।’’ টালা প্রত্যয়ের মণ্ডপ প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে উৎসবের আনন্দের মূল সুর বেঁধে দিতে চাইলেন তিনি। বললেন, ‘‘আমি বাড়ির বৌদের বলি, নতুন শাড়ি না ভাঙলে আর শাড়ি দেব না। আমি সাত দিনে সাতটা শাড়ি বেছে রাখি। যদিও সেই এক রং, তবে আমার মনটা রঙিন!’’

নেটিজেনদের অনেকেরই মতে, এত দিন মহালয়া থেকে উদ্বোধন শুরু করতেন মুখ্যমন্ত্রী। তাতেও একটা দিন-মাহাত্ম্য ছিল। অন্তত বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের ‘আশ্বিনের শারদপ্রাতে’ ভাষ্যের মহিমাটুকু অক্ষুণ্ণ থাকত। এ বছর যেন বীরেন ভদ্রকেও ছাপিয়ে গেল পুজো উদ্বোধন।

প্রবীণ পুরোহিত শম্ভুনাথ স্মৃতিতীর্থ বিতর্ক এড়িয়ে বললেন, ‘‘দেশের সর্বত্র স্থানীয় সরকারের আইনই রীতি। এ নিয়ে বিতর্কে ঢুকে কী হবে?’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘দুর্গা মন্দিরগুলিতে সারা বছর পুজো হয়। তার সঙ্গে দেবীপক্ষেরও সম্পর্ক থাকে না।’’ উদ্যোক্তাদের ব্যাখ্যা, মুখ্যমন্ত্রী উদ্বোধন করেছেন থিমের। এফডি ব্লকের পুজোর সভাপতি বাণীব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘অযথা বিতর্ক। পুজো রীতি মেনেই হবে। উনি মণ্ডপ-প্রতিমা দর্শন করে গেলেন। থিমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হল।’’

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য, ‘‘পিতৃপক্ষে দুর্গাপুজোর উদ্বোধন করলেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী! পিতৃপক্ষে পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে তর্পণ করা হয়, প্রেত-দোষ মুক্ত করতে উত্তরপুরুষ ব্রতী হন। এখন কোনও শুভ কাজ হয় না। বাঙালির সবটাই একা শেষ করে দেওয়ার সঙ্কল্প নিয়েছেন উনি!’’ কংগ্রেসের বর্ষীয়ান সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘পিতৃপক্ষ মানে প্রেতপক্ষ। এই সময়ে দুর্গাপুজোর উদ্বোধন কী ভাবে হয়! প্রশাসনিক ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যা খুশি করতে পারেন, কিন্তু পুজো করতে গেলে শাস্ত্র, এত কালের নিয়ম তো মানতে হবে।’’

ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের চেয়ারম্যান পার্থ ঘোষ অবশ্য বলছেন, ‘‘বোঝাই যাচ্ছে, উনি (মমতা) পুজোর ধর্মীয় আচার নয়, উৎসবকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এর মধ্যে দুর্গাপুজোর ধর্মনিরপেক্ষ দিকেরও প্রকাশ। ইউনেস্কোর স্বীকৃতিতে পুজো এ বার অন্য মেজাজে। উৎসবের ক’টা দিন বাড়লে ক্ষতি কী!’’ তবে যে পুজোগুলির উদ্বোধন হয়েছে তাতে দর্শনার্থীরা এলেও সবাইকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja 2022 Mahalaya Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy