Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
Parae Samadhan

এ বার ‘পাড়ায় সমাধান’-এর পুর রিপোর্ট তৈরি নিয়ে বিতর্ক

স্থানীয় স্তরে সমস্যা সমাধানে এমন নির্দেশ পুর কর্তৃপক্ষের সক্রিয়তাকেই প্রমাণ করে বলে মনে করছেন অনেকে।

—ফাইল চিত্র

—ফাইল চিত্র

দেবাশিস ঘড়াই
শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:৪৩
Share: Save:

নির্বাচনের আগে রাজ্য সরকারের ‘পাড়ায় সমাধান’ কর্মসূচি নিয়ে বিতর্ক চলছেই। এ বার সেই বিতর্ক আলাদা মাত্রা পেল কলকাতা পুরসভাকে কেন্দ্র করে। কারণ সম্প্রতি পুর কর্তৃপক্ষ প্রত্যেক দফতরের কন্ট্রোলিং অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছেন, রোজ বিকেল সাড়ে পাঁচটার মধ্যে এই কর্মসূচিতে পুর পরিষেবা সংক্রান্ত এলাকাভিত্তিক অভিযোগের যাবতীয় তথ্য পুর ‘গ্রিভ্যান্স সেল’-এ জানাতে হবে। তার পর সেই অনুযায়ী দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।

আপাতদৃষ্টিতে এই নির্দেশে অস্বাভাবিকতা কিছু নেই। স্থানীয় স্তরে সমস্যা সমাধানে এমন নির্দেশ পুর কর্তৃপক্ষের সক্রিয়তাকেই প্রমাণ করে বলে মনে করছেন অনেকে। কিন্তু একই সঙ্গে এই প্রশ্নও উঠছে, তা হলে কি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাজে খামতি রয়েছে বলেই পুরকর্তা-আমলাদের কর্মসূচিতে সরাসরি যোগ দেওয়ার এমন নির্দেশ? অর্থাৎ, বরো কোঅর্ডিনেটরদের উপরে আস্থা নেই বলেই কি প্রয়োজন পড়ছে ‘পাড়ায় সমাধান’-এর? সে কারণে প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশ থেকে শুরু করে বিরোধীদের মতে, ‘পাড়ায় সমাধান’ আসলে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাজে ‘ত্রুটি’ ঢাকার মরিয়া চেষ্টা! প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘স্থানীয় স্তরে সমস্যার কথা সব চেয়ে বেশি জানার কথা এলাকার জনপ্রতিনিধির। তিনি বাসিন্দাদের সমস্যা শুনে তা সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকদের জানাবেন। সেই অনুযায়ী কাজ হবে। কিন্তু তাঁদের কাজে খামতি থেকে গিয়েছে বলেই হয়তো এখন আধিকারিকদের উপরে ভরসা করতে হচ্ছে।’’

পুরসভা সূত্রের খবর, বিকেল সাড়ে পাঁচটার মধ্যে অভিযোগের তথ্য জানানোর পাশাপাশি এলাকাভিত্তিক সমস্যার রিপোর্ট নির্দিষ্ট ফর্ম্যাটে সরকারি পোর্টালে আপলোড করার জন্যও দফতরের ডিজি-দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফর্ম্যাটে সমস্যার সংক্ষিপ্তসার, আনুমানিক কত বাসিন্দা সমস্যায় ভুগছেন, সমাধানের প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রে দরপত্র আহ্বান করতে হবে কি না-সহ একাধিক বিষয় উল্লেখ করতে বলা হয়েছে। যদিও প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের অভিযোগ, পুরসভার স্বশাসিত ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে এই কর্মসূচির মাধ্যমে। শাসক দল পুর দফতরকে দলীয় কার্যালয়ে পরিণত করেছে! তাঁর আরও বক্তব্য, স্থানীয় স্তরে জনপ্রতিনিধিদের দায়বদ্ধতা অনেক বেশি। কারণ, তাঁকে এলাকার সকলে চেনেন। কোন কাজটা হয়েছে বা হয়নি, সেটা তাঁরা সরাসরি সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিকে জানাতে পারেন। বিকাশবাবুর কথায়, ‘‘কিন্তু শাসক দলের জনপ্রতিনিধিরা পারেননি বলেই এখন দলীয় কর্মী-পুর আধিকারিকদের প্রয়োজন পড়ছে। তাঁদের ন্যক্কারজনক ভাবে রাজনৈতিক স্বার্থ পূরণের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।’’

আরও পড়ুন: প্রিয়াঙ্কা ঘুঁটি মাত্র? টলি-প্রভাবশালীর হাত জুনিয়র খুনে? খুঁজছে সিবিআই

আরও পড়ুন: শহরে ‘বিবেকের ডাকে’ ১২ জানুয়ারি শুভেন্দু-দিলীপ, মুকুল-কৈলাস

যদিও শাসক দলের কোঅর্ডিনেটরদের বক্তব্য, এলাকায় উন্নয়নমূলক কাজ সংক্রান্ত তেমন অভিযোগ নেই। কিন্তু রাজনৈতিক মতবিরোধ থাকায় অনেক বাসিন্দাই স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কাছে অভিযোগ জানাতে আসেন না। এক বরো কোঅর্ডিনেটরের কথায়, ‘‘কেউ হয়তো আমাদের বিরোধী দলের। তিনি অনেক সময়েই স্বচ্ছন্দ বোধ করেন না আমাদের কাছে এসে সমস্যার কথা বলতে। কিন্তু তাঁদের সমস্যারও যাতে সমাধান হয়, সে কারণেই এই পাড়ায় সমাধান কর্মসূচি।’’

কিন্তু এর মানে কি এই যে, ভোটের সমীকরণ মাথায় রেখে এক জন জনপ্রতিনিধি ‘বৈষম্যমূলক আচরণ’ করতে পারেন ভেবেই কোনও বাসিন্দা তাঁর কাছে যাননি বা যেতে সাহস পাননি? ‘‘একেবারেই তা নয়।’’ জবাব দিলেন এক নম্বর বরোর কোঅর্ডিনেটর তরুণ সাহা। তাঁর কথায়, ‘‘স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও তো মানুষ। ফলে তাঁদের দিক থেকেও অনেক জায়গায় ছোটখাটো ভুল থাকতে পারে অথবা অনেক বিষয় তাঁদের নজরে না-ই আসতে পারে। সেগুলির যাতে যথাযথ সমাধান হয়, তাই এই কর্মসূচি।’’ ১৩ নম্বর বরোর কোঅর্ডিনেটর সুশান্ত ঘোষ আবার বলছেন, ‘‘ব্যক্তিগত কারণে অনেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করেন না। কিন্তু তার সঙ্গে এলাকাভিত্তিক উন্নয়নমূলক কাজের সম্পর্ক নেই।’’

কিন্তু ঘটনা যা-ই হোক, ‘ডেডলাইন’ বিকেল সাড়ে পাঁচটার বিতর্ক এত সহজে থামবে না বলেই মত অনেকের।

অন্য বিষয়গুলি:

Controversy Parae Samadhan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy