Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Canal

Charial Extension Canal: ‘নালা’ না ‘খাল’? বিতর্কের কেন্দ্রে এ বার চড়িয়াল

১৩ নম্বর বরোর কোঅর্ডিনেটর সুশান্ত ঘোষের বক্তব্য, ‘‘পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখেই সব কাজ করা হচ্ছে।’’

চড়িয়াল খালের সংযোজিত অংশে এ ভাবেই নিকাশি প্রকল্পের কাজ চলছে।

চড়িয়াল খালের সংযোজিত অংশে এ ভাবেই নিকাশি প্রকল্পের কাজ চলছে। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২১ ০৬:১৯
Share: Save:

প্রকল্প রূপায়ণকারী সংস্থার দাবি, খাল নয়। বরং খালের সংযোজিত অংশকে (যা বর্তমানে এক দুর্গন্ধময় নালায় পরিণত হয়েছে) মাইক্রো টানেলিং পদ্ধতির মাধ্যমে মাটির নীচ দিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। উল্টো দিকে, পরিবেশকর্মীদের দাবি, খালের সংযোজিত অংশকে ‘উদ্দেশ্যমূলক’ ভাবে নালা বা নর্দমা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, যাতে বাস্তুতন্ত্রের নিরিখে তার গুরুত্ব হ্রাস করে সেটি বুজিয়ে ফেলা যায়। আর এই দাবি-পাল্টা দাবির মাধ্যমে বিতর্কের কেন্দ্রে এখন চড়িয়াল খাল, যা শহরের পাঁচটি জলনিকাশি খালের মধ্যে অন্যতম।

সংশ্লিষ্ট খালের সংযোজিত অংশে (চড়িয়াল এক্সটেনশন ক্যানাল) কলকাতা পুরসভার অধীনস্থ ‘কলকাতা এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্রুভমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম’-এর (কেইআইআইপি) তরফে নিকাশি পরিকাঠামোর উন্নয়নের কাজ করা হচ্ছে। পুর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, চড়িয়াল খালের সংযোজিত অংশে (যা প্রায় ২.৮ কিলোমিটার বিস্তৃত) নানা ধরনের বর্জ্য এসে পড়ায় সেটি পচা, দুর্গন্ধময় নালায় পরিণত হয়েছে। ওই নালাকেই ভূগর্ভস্থ বড় পাইপের মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। তার পরে তার উপরে মাটি ফেলে রাস্তা তৈরি হবে। এতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থেকে যেমন মুক্তি মিলবে, তেমনই বেহালা এলাকায় একটি নতুন রাস্তাও হবে। পুর প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘চড়িয়াল খাল এবং তার সংযোজিত অংশ— দু’টিই সেচ দফতরের অধীনে। ওই দফতরের সম্মতি নিয়েই এই কাজ করা হচ্ছে। তেমন অসুবিধা থাকলে নিশ্চয়ই অনুমতি দিত না। তা ছাড়া, এই কাজ শুধু সংযোজিত অংশে হচ্ছে, মূল চড়িয়াল খালে কিছু করা হচ্ছে না।’’

প্রশাসন সূত্রের খবর, পুরসভার ১৩ নম্বর বরোর অধীনস্থ ১২২ নম্বর ওয়ার্ড এবং ১৬ নম্বর বরোর অধীনস্থ ১২৩, ১২৪ নম্বর ওয়ার্ডে ওই কাজ হচ্ছে। ১২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কোঅর্ডিনেটর সুদীপ পোল্লে বলছেন, ‘‘চড়িয়াল খালের সংযোজিত অংশের এলাকায় বসবাসকারীদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছে পচা, দুর্গন্ধময় পরিবেশের কারণে। ভূগর্ভস্থ নিকাশি নালার কাজ সম্পূর্ণ হলে সেই পরিবেশ থেকে তাঁরা মুক্তি পাবেন।’’ ১৩ নম্বর বরোর কোঅর্ডিনেটর সুশান্ত ঘোষের বক্তব্য, ‘‘পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখেই সব কাজ করা হচ্ছে।’’

যদিও পুরসভার এই যুক্তি মানতে নারাজ পরিবেশকর্মীরা। তাঁদের আশঙ্কা, সংযোজিত অংশে ওই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে তা সামগ্রিক নিকাশি ব্যবস্থার উপরেই প্রভাব ফেলবে। কারণ যাদবপুর, বেহালা, জোকা-সহ শহরের একটা বিস্তীর্ণ এলাকার নিকাশি জল চড়িয়াল খালে গিয়ে পড়ে। নদী-বিশেষজ্ঞ সুপ্রতিম কর্মকার জানাচ্ছেন, পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তেই খাল-নদীকে টানেলের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হলে বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তা ইতিমধ্যেই একাধিক ক্ষেত্রে প্রমাণিত। চড়িয়াল খালের সংযোজিত অংশ এই নিয়মের ব্যতিক্রম হতে পারে না। তাঁর কথায়, ‘‘সংযোজিত অংশকে পাইপের মধ্যে দিয়ে না নিয়ে গিয়েও কী ভাবে দূষণমুক্ত করা যায়, তা নিয়ে বিকল্প পথ ভাবার দরকার ছিল।’’ এক পরিবেশবিজ্ঞানীর মন্তব্য, ‘‘খালের সংযোজিত অংশকে ইচ্ছাকৃত ভাবে নালা বা নর্দমা হিসেবে দেখানো হচ্ছে, যাতে তা বুজিয়ে ফেলা যায়। বাস্তবে জল নিষ্কাশনের পাশাপাশি, জলজ ও জল সংলগ্ন বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষায় খালের সংযোজিত অংশের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’’ পরিবেশবিজ্ঞানী তপন সাহার প্রতিক্রিয়া— ‘‘চড়িয়াল খালের সংযোজিত অংশকে যে ভাবে বোজানো হচ্ছে, তা শহরের নিকাশি ব্যবস্থার ক্ষেত্রে অত্যন্ত বিপজ্জনক।’’

ফলে এই পরিস্থিতিতে খাল নিয়ে বিতর্কের জল কত দূর গড়ায়, এখন সেটাই দেখার!

অন্য বিষয়গুলি:

Environment Canal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy