ইউনেস্কোর প্রতিনিধিদের পুজোর গন্তব্য থেকে বাদ গিয়েছে অনেক নাম করা পুজোও।
‘‘বাংলার দুর্গাপুজো অনুভব করতে তিন সপ্তাহ বাদে ফের কলকাতায় আসছি।’’— রেড রোডে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি উদ্যাপন অনুষ্ঠানে এ কথাই জানিয়েছিলেন দিল্লিতে নিযুক্ত ইউনেস্কোর প্রতিনিধিরা। এর পরে ধরেই নেওয়া হয়, পুজোর আগে কলকাতায় এসে তাঁরা মণ্ডপ ঘুরে দেখবেন না, তা-ও কী হয়! তাই কোমর বেঁধে দ্রুত মণ্ডপের কাজ শেষ করতে ময়দানে নেমে পড়েছিল বহু পুজো কমিটিই— ‘আমরা তৈরি রয়েছি, দেখতে হলে আমাদের মণ্ডপ দেখুন’-এর প্রতিযোগিতায়।
প্রস্তুতি যতই শেষ পর্যায়ে হোক, ইতিমধ্যেই ইউনেস্কোর প্রতিনিধিদের পুজোর গন্তব্য হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে শহরের ২৪টি বারোয়ারি পুজোকে। আর সেই বাছাই ঘিরেই শুরু বিতর্ক। তালিকায় ঠাঁই না মেলা পুজো কমিটিগুলি এখন প্রশ্ন তুলছে, এই মনোনয়ন করলেন কারা ও কিসের ভিত্তিতে? তাদের দাবি, তালিকায় নাম থাকা কিছু পুজো গত চার-পাঁচ বছরে নাম করেছে। কিন্তু ১০০ বছর পেরোনো, ভিড়ের নিরিখে প্রতিবারই শোরগোল ফেলা বহু পুরনো পুজো বাদ পড়ে গিয়েছে। ফলে তালিকায় নির্বাচন নিয়ে রীতিমতো তাল ঠোকাঠুকি চলছে পুজো কমিটিগুলির মধ্যে। এমনকি, ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’-এর সদস্য কিছু পুজোকর্তার মধ্যে এ নিয়ে মুখ দেখাদেখিও বন্ধ!
সূত্রের খবর, ইউনেস্কোর প্রতিনিধিরা রেড রোডে ঘুরে যাওয়ার পরেই শহরের কিছু এলাকায় হলুদ কালিতে প্রশ্নচিহ্ন ছাপা ব্যানার দেখা গিয়েছিল। তাতে ইউনেস্কো এবং ব্রিটিশ কাউন্সিলের নাম ছিল। এমন ব্যানার তৈরি করা হয়েছিল প্রায় ১৩৫টি। দক্ষিণ কলকাতার এক পুজো কর্তার কথায়, ‘‘আমাদের মণ্ডপের সামনে ব্যানার টাঙানো হয়। প্রশ্ন করে জানতে পারি, সরকার থেকে তা লাগানো হচ্ছে। রটানো হয়, যে যে মণ্ডপে ইউনেস্কোর প্রতিনিধিরা যেতে পারেন, তাদের সামনেই ব্যানার টাঙানো হচ্ছে। কিছু দিন পরে আবার খুলেও নেওয়া হয় সেটি। পরে তালিকা বেরোলে দেখা যায়, আমাদের পুজোর নাম নেই।’’ পরে জানা গিয়েছে, রাজ্য সরকার নয়, ব্যানার লাগিয়েছিল ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থা। তালিকায় ২২টি বারোয়ারি পুজো কমিটি ছাড়াও রয়েছে দু’টি সাবেক বারোয়ারি এবং দু’টি বনেদি বাড়ির পুজোর নাম।
তালিকায় ব্রাত্য টালা বারোয়ারির পুজোকর্তা অভিষেক ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘আমাদের পুজো ১০০ বছর পেরিয়েছে। বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। সেই ঐতিহ্যে যদি ১০০ বছরের পুজোর অবদান না থাকে, তা হলে কার রয়েছে ভাবছি!’’ বাদ গিয়েছে কলেজ স্কোয়ার, মহম্মদ আলি পার্ক, শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের মতো বারোয়ারি পুজো। সাবেক পুজোর বিভাগে জায়গা পায়নি একডালিয়া এভারগ্রিন। তালিকা থেকে বাদ হিন্দুস্থান পার্কের পুজোকর্তা সুতপা দাস বললেন, ‘‘কিসের ভিত্তিতে বাছাই, বুঝতে পারছি না।’’ আর এক ‘ব্রাত্য’ সমাজসেবী সঙ্ঘের কর্তা অরিজিৎ মিত্রের দাবি, ‘‘এতে অন্য সেটিংয়ের গন্ধ আছে। দেখা যাচ্ছে, এক শিল্পীর তিনটি পুজো তালিকায় উঠে গিয়েছে, বাকিদেরটা জায়গা পায়নি।’’
ওই তালিকায় নাম রয়েছে চেতলা অগ্রণীর। সেখানের পুজোকর্তা সমীর ঘোষ বললেন, ‘‘তালিকায় আছি জানি। কী ভাবে নাম উঠেছে বলতে পারব না।’’ সুরুচি সঙ্ঘের পুজোকর্তা কিংশুক মৈত্রের দাবি, ‘‘কী কারণে আমাদের পুজোর নাম রয়েছে, বলা শক্ত। তবে পুজো ইতিহাসে সুরুচি সঙ্ঘের অবদান কী কম!’’ হাতিবাগানের কাশী বোস লেনের পুজোকর্তা সৌমেন দত্ত আবার বললেন, ‘‘বিতর্ক নিয়ে ভাবতে চাই না। আমরা এখন ব্যস্ত ২২ তারিখের মধ্যে কাজ শেষ করতে। আপ্যায়নের যাতে ত্রুটি না হয়, সেটাই দেখব।’’
ইউনেস্কোর পুজো পরিক্রমার নেপথ্যে থাকা সংস্থার তরফে ধ্রুবজ্যোতি বসু ওরফে শুভ টালা প্রত্যয়ের পুজোর সঙ্গে যুক্ত। তিনি অবশ্য বললেন, ‘‘পুজোকর্তা হিসাবে কিছু বলব না। তবে ইভেন্টটির সংগঠক হিসাবে বলতে পারি, অনেকেই তো প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন, কিসের ভিত্তিতে কোন পুজোকে বেছে নেওয়া হয়, তা কি খুলে বলা হয়? এ ক্ষেত্রে বলতে পারি, পুজোর থেকেও শিল্পকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy