Advertisement
E-Paper

অনেক কর্মীর বেতন সময় মতো হচ্ছে না কলকাতা পুরসভায়, অথচ ‘আতিথেয়তা ভাতা’ আট বছরে আট গুণ!

শুধু ভাতা বাড়াই নয়, দেখা যাচ্ছে, এই ভাতা তখনও বেড়েছে যখন করোনার জেরে হয় দফতর পুরো বন্ধ ছিল বা পুরসভায় লোকজনের যাতায়াত উল্লেখযোগ্য ভাবে কম ছিল।

A Photograph of money

‘আতিথেয়তা ভাতা’ বাবদ ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত প্রতি মাসে ৪৫০০ টাকা বরাদ্দ ছিল। প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৩ ০৬:৫০
Share
Save

এক দিকে আর্থিক টানাটানির জন্য একাংশের কর্মীদের বেতন বা অবসরপ্রাপ্তদের পেনশন সময় মতো দেওয়া যাচ্ছে না। অন্য দিকে, এক আধিকারিকের ‘আতিথেয়তা ভাতা’ বাবদ খরচ করা হচ্ছে মাসে পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা! এমনই পরস্পর বিরোধী চিত্র কলকাতা পুরসভার। এই বিপুল পরিমাণ মাসিক ভাতার বিষয়টি সামনে আসতেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। সরব হয়েছেন বিরোধীরাও।

মহম্মদ সেলিম আনসারি নামে ওই ব্যক্তি রাজ্য সরকারের একাধিক দফতরে আইন আধিকারিকের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি কলকাতা পুরসভার মুখ্য আইন আধিকারিকর (চিফ মিউনিসিপ্যাল ল’ অফিসার) অতিরিক্ত দায়িত্ব সামলান। ‘আতিথেয়তা ভাতা’ বাবদ ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত প্রতি মাসে ৪৫০০ টাকা বরাদ্দ ছিল। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ওই ভাতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫০০০ টাকায়! অর্থাৎ, আট বছরেরও কম সময়ে ভাতা বেড়েছে প্রায় আট গুণ!

শুধু ভাতা বাড়াই নয়, দেখা যাচ্ছে, এই ভাতা তখনও বেড়েছে যখন করোনার জেরে হয় দফতর পুরো বন্ধ ছিল বা পুরসভায় লোকজনের যাতায়াত উল্লেখযোগ্য ভাবে কম ছিল। আধিকারিকদের কাছে আসা অতিথিদের চা-স্ন্যাক্সের খরচ বাবদ ওই ভাতা দেওয়া হয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, করোনা-কালে ২০২০ সালেই দু’দফায় বাড়ানোর পরে ২০ হাজার থেকে ভাতা দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার টাকায়! আর চলতি বছরের জানুয়ারিতে ফের ওই ভাতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ হাজার টাকায়।

পুরসভা থেকে পাওয়া তথ্যেই দেখা যাচ্ছে, ২০১৫ সালের জুন থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ন’দফায় ভাতা বাড়ানো হয়েছে। প্রত্যেক ক্ষেত্রে অনুমোদন নিতে পুর কর্তৃপক্ষের কাছে একই মর্মে চিঠি লেখা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, ‘‘মুখ্য আইন আধিকারিকের অফিসে দিন দিন অতিথির আনাগোনার সংখ্যা বাড়ছে। এই অবস্থায় অতিথিদের চা, স্ন্যাক্স বরাদ্দের জন্য খরচ বেড়ে যাওয়ায় ভাতার পরিমাণ বাড়ানো হোক।’’ পুর কমিশনারকে লেখা ন’টি চিঠিই মঞ্জুর করা হয়েছে। ওই চিঠিগুলির কোথাও পুর কমিশনার, কোথাও বা মেয়রের স্বাক্ষর রয়েছে।

বিরোধীদের অভিযোগ, পুরসভার কোষাগারের হাল শোচনীয়, সেই অবস্থায় এক জন আধিকারিকের জন্য এই ভাতার পরিমাণ যে ভাবে বাড়ানো হয়েছে, তা নিন্দনীয়। পুরসভার বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষের অভিযোগ, ‘‘অনেক বিভাগে কর্মীরা সময় মতো বেতন পাচ্ছেন না। অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা অবসরকালীন টাকা থেকে বঞ্চিত। অথচ এক জন আধিকারিকের চা, স্ন্যাক্সের খরচ বিপুল পরিমাণে বাড়ানো হবে? পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হোক।’’ কংগ্রেস কাউন্সিলর সন্তোষ পাঠকের অভিযোগ, ‘‘পুরসভার টাকা বাজে কাজে খরচ হওয়ার জন্যই বছরের পর বছর ঘাটতি বাজেট পেশ করতে বাধ্য হচ্ছেন মেয়র।’’

যাঁকে নিয়ে বিতর্ক, সেই মহম্মদ সেলিম আনসারির ফোন একাধিক বার বেজে গিয়েছে। এসএমএস করা হলেও জবাব মেলেনি। পুরসভার মেয়র পারিষদ (আইন) বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মুখ্য আইন আধিকারিক সৎ মানুষ। তিনি আতিথেয়তা ভাতা পেতেই পারেন। এই সমালোচনা অনুচিত।’’ কিন্তু লকডাউনে যেখানে অতিথির সংখ্যা হাতেগোনা ছিল, তখন ভাতা বাড়ানো অনৈতিক নয় কি? মেলেনি উত্তর।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Hospitality Sector allowance

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}