গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
দু’টি মঞ্চের দূরত্ব মেরেকেটে ৩০০ মিটার। সেই দূরত্বে বৃহস্পতিবার দুপুরে বর্ষামুখর ধর্মতলা দেখল বাম এবং কংগ্রেসের অন্য রকম জোট। যে জোট ‘অ-মাইক’ বললে অত্যুক্তি হবে না।
কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে বুধবার থেকে ডোরিনা ক্রসিংয়ের কোনায় ধর্না-অবস্থান করছে কংগ্রেস। বৃহস্পতিবার ছিল সেই কর্মসূচির শেষ দিন। পাশাপাশিই, আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবারেই ধর্মতলায় সমাবেশ ডেকেছিল বাম ছাত্র, যুব এবং মহিলা সংগঠনগুলি। বেলা ১টায় বাম জমায়েতের সময় থাকলেও দুর্যোগের কারণে হাওড়া, শিয়ালদহ এবং পার্ক স্ট্রিট থেকে ধর্মতলায় তিনটি বড় মিছিল সভাস্থলে পৌঁছতে আড়াইটে বেজে যায়। একটি ম্যাটাডর দাঁড় করিয়ে তার পাশে পাটাতন জুড়ে দ্রুততার সঙ্গে মঞ্চ গড়ে বামেরা। মাইকও বাঁধা হয়ে গিয়েছিল তত ক্ষণে। দেখা যায়, কংগ্রেসের অবস্থানে লোক কম হলেও মাইক লাগানো রয়েছে অনেক দূর পর্যন্ত। বামেদের সভাস্থলের সামনেও। যদিও বামেদের সভার মাইকও লাগানো হয়েছিল কংগ্রেসের মঞ্চের সামনে। কোনও পক্ষই অবশ্য তা নিয়ে কিছু বলেনি। সমান্তরাল ভাবে দু’টি মঞ্চ থেকেই চলেছে প্রতিবাদ। তবে দুই শিবিরের সমর্থকদের কানে অনেক সময় দুই মঞ্চের বক্তৃতা তালগোল পাকিয়ে গিয়েছে।
সূত্রের খবর, মাইকের ‘সংঘাত’ নিয়ে সকাল থেকে সিপিএম এবং কংগ্রেসের নেতৃত্ব নিজেদের মধ্যে বারংবার কথা বলেও কোনও সমাধানে পৌঁছতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়, দু’পক্ষই দু’পক্ষের প্রতি ‘সম্মান এবং সংহতি’ দেখাবে। বাম গণসংগঠনগুলির একের পর এক বক্তা যখন বক্তৃতা করেছেন, তখন কংগ্রেসেরও সভা চলেছে সমানতালে। ব্যতিক্রম একটি ক্ষেত্রে। যখন বলতে উঠলেন সিপিএমের যুবনেত্রী মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। তখন কংগ্রেসের মঞ্চ নিঃশব্দ। মিনাক্ষী বলা শেষ করার পরে বামেদের আরও অন্তত চার-পাঁচ জন বক্তৃতা করেন। তখন কিন্তু কংগ্রেসের মঞ্চে আবার বক্তৃতা শুরু হয়ে গিয়েছে। আবার কথা কাটাকুটি।
বামেদের কর্মসূচি শুরুর আগেই কংগ্রেসের মঞ্চে পৌঁছে গিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি অধীর চৌধুরী। কংগ্রেসের মঞ্চ থেকেই অধীর বলেন, ‘‘আমি মিনাক্ষীদের সাবাশি দিতে চাই। ওঁরা রাস্তার দখল নিয়েছেন। ওঁদের প্রতি নৈতিক সমর্থন জানাই।’’ মিনাক্ষীও বক্তৃতার শুরুতেই বলেন, ‘‘আমাদের পাশেই একটি দল তাদের কর্মসূচি করছে। আমরা তাদের সংহতি জানাতে চাই।’’ মাইকে জোট না হলেও দুই মঞ্চই জোটে থাকারই বার্তা দিতে চেয়েছে বৃহস্পতিবার। দুর্যোগের মধ্যেও বাম জমায়েতে ভিড় হয়েছিল চোখে পড়ার মতো। তবে মাঝে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় সেই ভিড় কিছুটা পাতলা হয়ে গিয়েছিল। মিনাক্ষী বলা শুরু করতে ফের জমাট বাঁধে ভিড়। তবে বক্তৃতায় আবার ‘ভুল’ করে বসেছেন বাম যুবনেত্রী।
গত ৭ জানুয়ারি ব্রিগেডের মঞ্চে কবিতার লাইন উদ্ধৃত করতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলেছিলেন মিনাক্ষী। তাঁর স্বগতোক্তি ছিল, ‘‘ভুলে গেছি।’’ বৃহস্পতিবার ধর্মতলার মঞ্চে ‘বাংলার বাঘ’ সম্পর্কে বলতে গিয়ে আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের পদবি ভুল বলেন সিপিএমের যুবনেত্রী। অনুব্রত মণ্ডল জামিন পাওয়ার পরে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেছিলেন, ‘‘বাংলার বাঘ বেরিয়ে আসছে। এ বার বিরোধীরা পালাবে।’’ সেই প্রসঙ্গের অবতারণা করে মিনাক্ষী বলেন, ‘‘গরু পাচারের আসামি (যদিও অনুব্রত ‘দোষী’ নন। তাঁর বিচার চলছে। তিনি এখনও ‘অভিযুক্ত’) জামিন পেয়েছে! তাকে বলছে বাংলার বাঘ। আমরা বাংলার বাঘ বলতে স্যার আশুতোষ বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানি। কোনও গরু পাচারকারীকে নয়।’’ মিনাক্ষী অবশ্য বুঝতে পারেননি যে, তিনি স্যার আশুতোষের পদবি মুখোপাধ্যায়ের বদলে বন্দ্যোপাধ্যায় বলে বসেছেন! তবে মঞ্চের নীচে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে।
সভা থেকে বিচারের দাবিতে আন্দোলন জারি রাখার বার্তা দিয়েছেন বাম ছাত্র, যুব এবং মহিলা নেতৃত্ব। এমনকি, আসন্ন পুজোর সময়েও আন্দোলন করার বার্তা দিয়েছেন মিনাক্ষী। পাশাপাশিই তিনি নিচুতলার পুলিশের উদ্দেশে বলেছেন, ‘‘আপনারা কেউ ফোনের অর্ডারে কাজ করবেন না। লিখিত অর্ডার চাইবেন। না হলে আপনাদেরও টালা থানার ওসির মতো দশা হবে। আর বড়বাবুরা এসি ঘরে বসে থাকবেন!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy