Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Fire Accident

অন্যান্য শপিং মলেও সিঁড়ি অবরুদ্ধ! আগুনের ঘটনাতেও হুঁশ নেই

শুক্রবার অ্যাক্রোপলিস মলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নীচে নামার সময়ে সিঁড়ির বিপদের কথা জানিয়েছিলেন অনেকেই। প্রকাশ্যে এসেছিল ওই শপিং মলের সিঁড়িতে বস্তা ফেলে রাখার ছবি।

অ্যাক্রোপলিস মলের সিঁড়িতে জিনিসপত্র রাখা ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রে। একই  চিত্রের দেখা মিলল (বাঁ দিকে) মণি স্কোয়ার ও লেক মলের সিঁড়িতেও (ডান দিকে)।

অ্যাক্রোপলিস মলের সিঁড়িতে জিনিসপত্র রাখা ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রে। একই চিত্রের দেখা মিলল (বাঁ দিকে) মণি স্কোয়ার ও লেক মলের সিঁড়িতেও (ডান দিকে)। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০২৪ ০৬:৫৯
Share: Save:

সিঁড়িতে কোথাও স্তূপ করে রাখা স্টোরে বিক্রির জন্য নিয়ে আসা পোশাকের বস্তা, কোথাও অন্য সামগ্রী। কোথাও পড়ে রয়েছে রেস্তরাঁর আসবাবপত্র, থালা-বাসন থেকে রেফ্রিজারেটরের অংশ। এমন সিঁড়িও চোখে পড়ল, যেখানে নির্মাণ সামগ্রীর বস্তার সারি পড়ে। রয়েছে লোহার রড, বাঁশ, কাঠ এবং শপিং মলের দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত নানা জিনিসও। পরিস্থিতি এমন যে, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামাই কঠিন!

শুক্রবার অ্যাক্রোপলিস মলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নীচে নামার সময়ে সিঁড়ির বিপদের কথা জানিয়েছিলেন অনেকেই। প্রকাশ্যে এসেছিল ওই শপিং মলের সিঁড়িতে বস্তা ফেলে রাখার ছবি। ১২ ফুট সিঁড়ির মাত্র চার ফুট যাতায়াতের জন্য ছাড়া থাকায় জরুরি সময়ে পদপিষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও ছিল বলে অভিযোগ।

শনিবার শহর ঘুরে দেখা গেল, শুধু কসবার অ্যাক্রোপলিস মলেই নয়, সিঁড়ির বেহাল অবস্থা কম-বেশি সর্বত্রই। কিন্তু, হুঁশ নেই ওই সব মলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের। বেশির ভাগই এমন সিঁড়িতে ‘ফায়ার এক্সিট’ স্টিকারের তলায় নিজেদের মতো করে স্টিকার লাগিয়েছেন। তাতে লেখা, অগ্নিকাণ্ডের মতো জরুরি সময় ছাড়া অন্য কোনও সময়ে সিঁড়ি ব্যবহার করা যাবে না। কিছু জায়গায় আবার সিঁড়ি ব্যবহার করে ধরা পড়লে জরিমানা করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি রয়েছে। উত্তর কলকাতার একটি শপিং মলের এক কর্মীর মন্তব্য, ‘‘সিঁড়ির ব্যবহার বন্ধ করা গেলে বস্তা বা অন্য সামগ্রী সেখানে রাখার জায়গা হয়। তাই সব মলই চায়, সিঁড়ির ব্যবহার বন্ধ থাক।’’

ইএম বাইপাসের মণি স্কোয়ার শপিং মলের সিঁড়ির কী অবস্থা? সেখানে এক দিকে পাঁচতলা শপিং মল ও লাগোয়া দশতলা অফিস ভবন রয়েছে। ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার পৃথ্বীরাজ গঙ্গোপাধ্যায় জানালেন, দশতলা অফিস ভবন থেকে দু’টি আর শপিং মল থেকে ছ’টি, মোট আটটি সিঁড়ি নেমেছে। পৃথ্বীরাজ বলেন, ‘‘নিরাপত্তার সমস্ত বন্দোবস্ত রয়েছে আমাদের। ১ লক্ষ ২৮ হাজার লিটার করে মোট তিনটি জলের ট্যাঙ্ক রয়েছে।’’ যদিও মলের সিঁড়ি দিয়ে নামার সময়ে চোখে পড়া লোহার জিনিসের স্তূপ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি পৃথ্বীরাজ। এক কর্মীর দাবি, ‘‘মলের ১৬ বছরের জন্মদিনে রঙের কাজ হয়েছে, তাই কিছু জিনিস সিঁড়িতে রাখা হয়েছে হয়তো!’’

একই দৃশ্য দক্ষিণ কলকাতার লেক মলে। সেখানে এক দিকের সিঁড়িতে একাধিক বস্তা রাখা। অন্য দিকে নানা বৈদ্যুতিন সামগ্রী। কিন্তু কোনও ভাবেই সিঁড়ি দেখতে দিতে নারাজ নিরাপত্তাকর্মীরা। তাঁদেরই এক জন বললেন, ‘‘সাধারণের জন্য এই সিঁড়ি নয়।’’ কিন্তু অগ্নিকাণ্ডের মতো বিপদ ঘটলে তো এই সিঁড়িই বাঁচার ‘লাইফ-লাইন’? সেই উত্তর মেলেনি। উল্টে সেখানকার নিরাপত্তা আধিকারিকেরা বেরিয়ে যেতে বলেন। ধর্মতলার শ্রীরাম আর্কেডের অবস্থাও আলাদা নয়। সেখানে লিফ‌্টে ঢোকা-বেরোনোর পথে তো বটেই, সিঁড়িতেও স্তূপ করে রাখা পোশাকের বস্তা। সে সবের ভিড়ে হাঁটাই কঠিন।

কিন্তু এ সবের মধ্যেই আলাদা দৃশ্য পার্ক সার্কাসের কোয়েস্ট মল এবং প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের সাউথ সিটি মলে। এই দুই জায়গায় সিঁড়ি ব্যবহার না করার নির্দেশ লেখা স্টিকার থাকলেও সিঁড়িতে কিছু রেখে পথ অবরুদ্ধ করা হয়নি। সাউথ সিটি মলের জেনারেল ম্যানেজার দীপ বিশ্বাস বললেন, ‘‘আমাদের সিঁড়ি সব সময়ে খালি রাখা হয়। অ্যাক্রোপলিস মলের খবর শুনে নিরাপত্তার দিকে আরও জোর দেওয়া হয়েছে।’’

অন্যান্য মলে সিঁড়ির যা পরিস্থিতি, তাতে নিরাপত্তায় গাফিলতির ক্ষেত্রে কী পদক্ষেপ করা হবে? দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু এ দিন বলেন, ‘‘নতুন করে সব অডিট করা হবে। এর পরেও কেউ সিঁড়িতে কিছু ফেলে রাখলে তার দায় মল কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে। যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy