উদ্বিগ্ন: ওই শিশুটির (ইনসেটে) জন্য রক্তের খোঁজে হন্যে এক পরিজন। রবিবার, সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কে। নিজস্ব চিত্র
বিরল রক্তের গ্রুপ নয়। নেগেটিভ গ্রুপও নয়। এনআরএসে জন্ডিসে আক্রান্ত পাঁচ দিনের শিশুর প্রয়োজন ছিল ‘এ পজিটিভ’ গ্রুপের হোল ব্লাড। একুশ ঘণ্টা ধরে কলকাতার একাধিক সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক ঘোরার পরে রবিবার রাতে ছেলের জন্য এক ইউনিট রক্ত হাতে পেলেন বাবা। তবুও আশ্বস্ত হতে পারলেন না। কারণ, চিকিৎসক যে সময়ের মধ্যে রক্ত আনতে বলেছিলেন তা তত ক্ষণে পার হয়ে গিয়েছে।
গত ৫ নভেম্বর এনআরএসে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন বাগুইআটির জগৎপুরের বাসিন্দা রিঙ্কি চক্রবর্তী। জন্মের পরে সদ্যোজাতের জন্ডিস ধরা পড়ে। রবিবার পরিবারের সদস্যেরা জানান, শুক্রবার সকালে সদ্যোজাতের রক্তপরীক্ষা করানো হলে বিলিরুবিন ধরা পড়ে ১৯। শনিবার তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩০.২। এই পরিস্থিতিতে ‘এক্সচেঞ্জ ট্রান্সফিউশন’-এর জন্য দুই ইউনিট হোল ব্লাডের রিকুইজিশন দেন এনআরএসে এসএনসিইউ বিভাগের চিকিৎসক।
সদ্যোজাতের বাবা অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী জানান, ওই রিকুইজিশন নিয়ে তিনি রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ প্রথমে এনআরএসের ব্লাড ব্যাঙ্কে যান। সঙ্গে দু’জন দাতা থাকলেও সেখান থেকে হোল ব্লাড পাননি অনিরুদ্ধ। দুর্যোগের রাতে অটোয় দুই দাতাকে সঙ্গে নিয়ে ছেলের জন্য রক্ত খুঁজতে বার হন বাবা। কোথাও রক্ত পাওয়া যায়নি। অনিরুদ্ধের কথায়, ‘‘কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্ক, বিধাননগর মহকুমা হাসপাতাল, আর জি কর, সাগর দত্ত, বারাসত, এমন কোথাও নেই যেখানে যাইনি। বৃষ্টির মধ্যে অটো বিগড়ে যাচ্ছিল। ওই অবস্থাতেই এক ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে অন্য ব্লাড ব্যাঙ্কে ছুটেছি।’’
রবিবার সন্ধ্যায় রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সমাজকর্মীদের কানে পরিবারটির হয়রানির খবর পৌঁছলে খানিক সুরাহা হয়। রাত সাড়ে আটটা নাগাদ এনআরএস ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে মেলে রক্ত।
‘এক্সচেঞ্জ ট্রান্সফিউশন’ কখন প্রয়োজন হয়? শিশুরোগ চিকিৎসক প্রভাসপ্রসূন গিরি বলেন, ‘‘ব্লাড ব্রেন বেরিয়ারের জন্য আমাদের মস্তিষ্কে কোনও টক্সিক পদার্থ জমাট বাঁধতে পারে না। আনকনজুগেটেড বিলিরুবিনের মাত্রা খুব বেশি হলে তা সেই বাধা টপকে মস্তিষ্কে জমা হতে পারে এবং তা হতে থাকলে চিন্তার বিষয়। ফোটোথেরাপির সাহায্যে বিলিরুবিন কমানোর চেষ্টা হয়। কিন্তু এর পরেও লোহিত রক্ত কণিকা ক্রমাগত ভাঙতে থাকলে এবং তার সঙ্গে বিলিরুবিন বাড়তে থাকলে তখন এক্সচেঞ্জ ট্রান্সফিউশন ছাড়া রাস্তা থাকে না। মস্তিষ্কে বিলিরুবিন জমে যে পরিস্থিতি তৈরি হয় তাকে ‘কার্নিকটেরাস’ বলে। সেরিব্রাল পলসির অন্যতম কারণ হল এই কার্নিকটেরাস।’’
অনিরুদ্ধ বলেন, ‘‘ডাক্তারবাবু আজ দুপুরের মধ্যে রক্ত আনতে বলেছিলেন। কোথাও পাচ্ছি না শুনে বললেন, সন্ধ্যা ছ’টার মধ্যে রক্ত না আনলে তিনি বাচ্চার দায়িত্ব নেবেন না। সেই এনআরএস-ই তো রক্ত দিল! বাচ্চার কিছু হলে ওঁরা দায়িত্ব নেবেন?’’
এ পজিটিভ গ্রুপের রক্ত পেতে হয়রানি কেন? রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সমাজকর্মীদের বক্তব্য, প্লেটলেটের জন্য এখন কম্পোনেন্ট তৈরির উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। সেটা একটা কারণ। বাকিটা সদিচ্ছার অভাব।
সদিচ্ছার অভাবের কথা অস্বীকার করে এনআরএস ব্লাড ব্যাঙ্কের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক দিলীপ পাণ্ডা বলেন, ‘‘শিশুটি আমাদের এখান থেকেই রক্ত পেয়েছে। রাতে কী হয়েছে বলতে পারব না।’’ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগের প্রধান প্রসূন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ওই শিশুর হোল ব্লাড পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy