Advertisement
০৫ জানুয়ারি ২০২৫

বাসে-বাসে ধাক্কা, দু’কান ছিঁড়ল যাত্রীর

বাঁ দিক থেকে বাসের ধাক্কায় দু’টি কান কী ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হল?

এই বাসেই ছিলেন সমীরবাবু। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

এই বাসেই ছিলেন সমীরবাবু। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৯ ০২:৫৮
Share: Save:

বাঁ কানের বাইরের অংশের প্রায় পুরোটাই ঝুলছে। কোনও মতে লেগে রয়েছে চামড়াটুকু। ডান কানের উপরের অংশ ছেঁচে গিয়েছে। লতির উপরে চামড়ায় ঢাকা হাড় বেরিয়ে এসেছে। প্রৌঢ় বাসযাত্রীর দু’কানের ওই অবস্থা দেখে শিউরে উঠেছিলেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। বিকেলেই পঞ্চসায়র থানার অন্তর্গত এক বেসরকারি হাসপাতালে দু’টি কানের অস্ত্রোপচার হয়েছে হালতুর বাসিন্দা, ৬৫ বছর বয়সি সমীর পালের। আপাতত তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, কানে আঘাত লাগার পাশাপাশি সমীরবাবুর বাঁ হাতের কনুইও ভেঙে গিয়েছে।

শুক্রবার সকালে গড়িয়াহাট মোড়ে এই দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে দু’রকম ব্যাখ্যা পাওয়া গিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ২১২ নম্বর রুটের বাসযাত্রী সমীরবাবু মুখ বাড়িয়ে থুতু ফেলার সময়ে ওই বাসে ধাক্কা মারে ৩সি/২ রুটের একটি বাস। একই দাবি করেছেন জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেট্‌সের সভাপতি আশুতোষ দাসও। যদিও প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, ভিড় বাসের পাদানিতে দাঁড়িয়েছিলেন প্রৌঢ়। আচমকা চালক ব্রেক কষায় তিনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যান। তখন বাঁ দিক থেকে বেপরোয়া গতিতে ২১২ নম্বর রুটের বাসটিকে ওভারটেক করছিলেন ৩সি/২ বাসের চালক। ওই বাসের গায়ে ধাক্কা লেগে সমীরবাবুর দু’টি কান ছিঁড়ে যায়। তাঁর ছেলে সৌভিকও থুতু ফেলতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটার দাবি ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

বাঁ দিক থেকে বাসের ধাক্কায় দু’টি কান কী ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হল?

প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারণা, বাঁ দিক থেকে বেপরোয়া গতিতে আসা বাসের ধাক্কায় ওই যাত্রী নিজের উপরে ভারসাম্য রাখতে পারেননি। দু’টি বাসের মধ্যে দূরত্বও খুব বেশি ছিল না। বাঁ দিকে ধাক্কা খেয়ে পড়ার সময়ে অভিঘাতে ডান কানে চোট পেয়ে থাকতে পারেন তিনি।

পুলিশ জানিয়েছে, সমীরবাবুর ছেলে সৌভিক হিসাবশাস্ত্রের ছাত্র। এ দিন তাঁর তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা ছিল। ছেলেকে নিয়ে ভবানীপুরের কলেজে যাচ্ছিলেন বাবা। দুর্ঘটনাটি ঘটে সাড়ে ন’টা নাগাদ। গড়িয়াহাট মোড়ে কর্তব্যরত ট্র্যাফিক পুলিশের কর্মীরা জানিয়েছেন, দু’টি বাস বালিগঞ্জ স্টেশনের দিক থেকে গড়িয়াহাট মোড়ের দিকে আসছিল। আচমকা লোকজনের চিৎকার শুনে তাঁরা গিয়ে দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় ২১২ নম্বর বাসের নীচে পড়ে আছেন সমীরবাবু। স্থানীয়দের সাহায্যে তাঁকে উদ্ধার করার পরে কানের অবস্থা দেখে আঁতকে ওঠেন সকলে। প্রথমে ওই প্রৌঢ়কে ঢাকুরিয়ার এক বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁকে পঞ্চসায়রের বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেন পরিজনেরা। ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীদের একাংশ জানান, সৌভিকের পরীক্ষা আছে জানার পরে তাঁকে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

ঘটনার খবর পেয়ে পঞ্চসায়রের হাসপাতালে চলে আসেন সমীরবাবুর বড় ছেলে সুমিত পাল-সহ অন্য আত্মীয়েরা। পুলিশকে সুমিত জানিয়েছেন, তাঁর দিদির শ্বশুরবাড়ি বালিগঞ্জে। নাতনিকে স্কুল থেকে আনার সময়ে গড়িয়াহাট মোড়ে জটলা দেখে এগিয়ে যান দিদির শ্বশুর। তাঁর থেকেই ঘটনার কথা জানতে পারেন সুমিতেরা। উল্লেখ্য, সপ্তাহখানেক আগে হাওড়াগামী একটি বেসরকারি বাসের পাদানিতে দাঁড়িয়ে ঝুলছিলেন নারায়ণ মালিক নামে এক যাত্রী। টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপোর কাছে অন্য একটি বাসকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময়ে কানে গুরুতর চোট পান নারায়ণবাবু। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এ দিনের ঘটনা।

ট্র্যাফিক পুলিশ জানিয়েছে, নিয়ম ভেঙে বেপরোয়া গতিতে ৩সি/২ রুটের বাসটি ওভারটেক করায় দুর্ঘটনা ঘটেছে। একই সঙ্গে এক তদন্তকারী অফিসার জানান, ওই বাসের চালক তৎপরতার সঙ্গে ব্রেক কষায় চাকার তলায় পিষ্ট হননি সমীরবাবু।

পঞ্চসায়রের বেসরকারি হাসপাতালটির চিফ এগজিকিউটিভ (মেডিক্যাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) সিঞ্চন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘প্লাস্টিক সার্জন প্রদীপ সেনের নেতৃত্বে প্রৌঢ়ের কানের চিকিৎসা চলছে। কনুইয়ের চিকিৎসা করবেন হাড়ের চিকিৎসক সোমনাথ দে। কানের ক্ষতি কতটা, অস্ত্রোপচারের পরেই তা বোঝা যাবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Injury Accident Bus Gariahat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy