একসঙ্গে: গঙ্গায় লক্ষ্মী প্রতিমার বিসর্জন দিলেন মহম্মদ সায়জান আলি, মহম্মদ আফতাবেরা। সোমবার, জাজেস ঘাটে। নিজস্ব চিত্র
গত দু’বছরের কঠিন সময়ে তছনছ হয়ে গিয়েছিল অনেকের জীবন। কোভিডে মৃত্যুর পাশাপাশি রুজি-রুটি হারিয়েও পথে বসতে হয়েছিল অনেক পরিবারকে। সেই বিপর্যয় ধর্মীয় পরিচয় দেখে আঘাত হানেনি। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন সকলেই। এ বছর পরিস্থিতি যখন পাল্টেছে, জীবন যখন ফের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে, তখন সেই দুঃস্বপ্নের দিনগুলো আর যাতে ফিরে না আসে, তার জন্য ধনদেবীর কাছে প্রার্থনা করলেন ওঁরা সকলে মিলেই। যে প্রার্থনায় অন্য অনেকের সঙ্গে শামিল হলেন মহম্মদ সায়জান আলি ও মহম্মদ আফতাবেরাও।
সোমবার বিকেলে গঙ্গার জাজেস ঘাটে এসেছিলেন মহম্মদ সায়জান। দু’হাতে পরম যত্নে ধরে থাকা লক্ষ্মী প্রতিমা। বিসর্জন দেবেন একটুপরেই। সায়জান বললেন, “মা লক্ষ্মী হলেন ধনসম্পত্তির দেবী। তাঁর কাছে প্রার্থনা করে বলেছি, গত দু’বছরে আর্থিক পরিস্থিতি যা হয়েছে, সেখান থেকে আমাদের বার করে আনো মা।”
সায়জান বেকবাগানের একটি বাড়িতে মাসমাইনের গাড়িচালক। তিনি বলেন, “আমি কমলিকাদাশগুপ্ত নামে এক ম্যাডামের বাড়িতে গাড়ি চালাই। সেই বাড়িতে বড় করে লক্ষ্মীপুজো হয়। পুজোরআয়োজন থেকে সব কিছুর দায়িত্ব ম্যাডাম আমাকেই দিয়েছেন। গড়িয়াহাটে গিয়ে ঠাকুর কেনা থেকে শুরু করে লক্ষ্মী প্রতিমা বিসর্জন, সবই আমার দায়িত্ব। ছ’বছর ধরেম্যাডামের বাড়িতে গাড়ি চালাচ্ছি। প্রথম থেকেই পুজোর সিংহভাগ দায়িত্ব আমার কাঁধে।” পার্ক সার্কাসের বাসিন্দা সায়জান জানান,পুজোর খুঁটিনাটি আয়োজন, সবই তাঁর মুখস্থ।
সায়জানের সঙ্গেই জাজেস ঘাটে লক্ষ্মী প্রতিমা বিসর্জন দিতে এসেছিলেন বেকবাগানের যুবক মহম্মদ আফতাব। তিনি বলেন, “গত কয়েক বছর ধরে আমাদেরবাড়ির ছাদে প্যান্ডেল করে লক্ষ্মীপুজো করছি। এ নিয়ে আলাদা করে কোনও গর্ব নেই। এটাই তো স্বাভাবিক।” আফতাবের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সায়জানের প্রশ্ন, “সারা বছরই তো হিন্দু ভাইদের সঙ্গে মিলে আমরা একসঙ্গে কাজ করি। জন্মদিন পালন করলে একসঙ্গে কেক কেটে খাই। শীতকালে পিকনিক করি। দিঘায় বেড়াতেও একসঙ্গে যাই। তা হলে ধর্মীয় উৎসব পালন করার সময়ে কেন আলাদা হয়ে যাব?”
সায়জানরা জানান, ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে কলকাতায় তাঁরা এ ভাবেই মিলেমিশে আছেন বছরের পর বছর। শুধু লক্ষ্মীপুজোই নয়, পার্ক সার্কাসেরদুর্গাপুজোতেও তাঁরা সকলের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শামিল হয়েছেন। আর সেই কারণেই শহরে কোথাও বেসুরো কিছু বাজলে তাঁদের মনখারাপ হয়ে যায়। সায়জানদের মনে হয়, যাঁরা বেসুরো বাজানোরচেষ্টা করেন, তাঁরা আসলে জীবন থেকেই বিচ্ছিন্ন। তাঁর কথায়, ‘‘এরা কি কোনও দিনই একসঙ্গে হাঁটতেশিখবে না?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy