উদ্ধার হওয়া মাদক। নিজস্ব চিত্র
নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে নিয়ে এক বার স্কুল বা কলেজ চত্বরে ঢুকতে পারলেই নিশ্চিন্ত। ব্যবহারকারীরা জানেন, সেখানে পুলিশও কিছু করতে পারবে না! কারণ কর্তৃপক্ষ অনুমতি না দিলে শিক্ষাঙ্গনে পুলিশ প্রবেশ করতে পারে না। পুলিশের সেই ‘অসহায়তা’কে কাজে লাগিয়েই শহরের স্কুল-কলেজে মাদক কারবার রমরমিয়ে চলছিল বলে লালবাজার সূত্রের খবর। গত সপ্তাহে আশুতোষ কলেজ চত্বর এবং গার্ডেনরিচ এলাকা থেকে গ্রেফতার হওয়া মোট ১৩ জনকে (ধৃতদের মধ্যে অনেকেই পড়ুয়া) জিজ্ঞাসাবাদ করে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন লালবাজারের নার্কোটিক্স শাখার তদন্তকারীরা। তাঁদেরই এক জন বললেন, ‘‘দু’মাসের স্কুল-কলেজের ছুটি নিয়ে নানা লোকে নানা কথা বলছেন। আমাদের এতে সুবিধাই হয়েছে।’’
তদন্তকারীরা বলছেন, গার্ডেনরিচ থেকে শনিবার গ্রেফতার হওয়া মহম্মদ পারভেজ শিক্ষাঙ্গনে মাদক পাচারের মূল চাঁই। স্কুল-কলেজ চলাকালীন দক্ষিণ কলকাতায় তাঁর ‘লোক’দের কাছ থেকেই মাদক কিনতেন নেশাগ্রস্ত পড়ুয়ারা। তার পরে তা নিয়ে ঢুকে যেতেন শিক্ষাঙ্গনে। সেখানে হাত ঘুরে ওই মাদকই পৌঁছে যেত অন্য পড়ুয়াদের কাছে। আর পিছু করেও তাঁদের ধরতে শিক্ষাঙ্গনের ভিতরে হানা দিতে পারতেন না তদন্তকারীরা। তাই ভোটের আগে থেকেই মাদক কারবারিদের উপরে নজর রেখেও কাজের কাজ করা যাচ্ছিল না বলে জানাচ্ছেন এক গোয়েন্দা।
তবে শিক্ষাঙ্গনে ছুটি পড়তেই সুযোগ এসে যায় গোয়েন্দাদের কাছে। ছুটি থাকলেও স্রেফ নেশার খোরাকের ব্যবস্থা করতে স্কুল-কলেজ চত্বরে আসছিলেন বহু পড়ুয়া। কিন্তু, মাদক কেনার পরে তা নিয়ে আর শিক্ষাঙ্গনে ঢুকতে পারছিলেন না তাঁরা। বসতে হচ্ছিল রাস্তায় বা কোনও নাইট ক্লাবে। এই সুযোগেই বৃহস্পতিবার রাতে পিছু নিয়ে আশুতোষ কলেজ চত্বর থেকে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে কেউ বিবিএ (ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) করছেন, কেউ কলেজে পড়েন অ্যাকাউন্টেন্সি অনার্স নিয়ে। কারও আবার সদ্য বি-টেক ইলেক্ট্রিক্যালের পড়া শেষ করে বেসরকারি সংস্থায় চাকরি হয়েছে। এঁদের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখা আরও অনেক পড়ুয়াকেও আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের দাবি। তবে তাঁরা স্রেফ ব্যবহারকারী, পাচারচক্রে জড়িত নন। ফলে তাঁদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে রিহ্যাবেরও ব্যবস্থা করছে পুলিশ। এমনই এক নেশাগ্রস্ত পড়ুয়া পুলিশকে জানান, তিনি স্কুলে মাদক কিনে ব্যাগে ভরে রাখতেন। স্কুলের পরে কলেজ স্ট্রিটের একটি জায়গায় ইকনমিক্স পড়েন তাঁরা। সেখানেই বন্ধুরা মিলে মাদক সেবন করতেন। পড়া শেষ করে কিছু ক্ষণ আড্ডা দিতে বেরোনোর নামে চলত সেই আসর। আর এক পড়ুয়ার আবার দাবি, তাঁদের কলেজের ইউনিয়ন রুম থেকেই টাকার বিনিময়ে মিলত মাদক।
এই সূত্রেই মধ্য কলকাতার এক নামী কলেজের কয়েক জন দ্বাররক্ষীও পুলিশের নজরে রয়েছেন বলে ওই তদন্তকারীর দাবি। তাঁদের হাত দিয়েও মাদক পাচার হচ্ছে জানিয়ে পুলিশের তরফে ওই স্কুল-কর্তৃপক্ষকে ইতিমধ্যেই সতর্ক করা হয়েছে।
তদন্তকারীরা বলছেন, মাদক সেবনের কৌশলও ইদানিং বদলে ফেলেছেন ওই সব পড়ুয়া। মূলত হেরোইন এবং কিছু ‘সিন্থেটিক ড্রাগ’ কিনছিলেন তাঁরা। হেরোইন নিয়ে ফয়েলে করে তা ব্যবহার করার বদলে সিগারেটে ভরে নিচ্ছিলেন। এক তদন্তকারী আধিকারিকের কথায়, ‘‘সিগারেটের তামাক বার করে তাতে হেরোইন ভরে নিলে তা ধরা কষ্ট। স্কুল-কলেজে ঢুকে ও ভাবে সিগারেট বানিয়ে নিয়ে পড়ুয়ারা ছড়িয়ে পড়ছিলেন নানা জায়গায়। এমনকি, নাইট ক্লাবেও। কিন্তু সঠিক প্রমাণ না থাকলে আর হাতেনাতে ধরতে না ধরলে কাউকে মাদক কারবারি হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না। দীর্ঘ ছুটি পড়ায় আমাদের হাতেনাতে ধরতেই সুবিধা হয়েছে।’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy