পুনর্নির্মিত: নতুন করে সেজে উঠেছে মেট্রো প্রেক্ষাগৃহ। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
মেট্রো প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতা প্রায় ভুলতে বসেছিলেন শহরবাসী। কিন্তু শীঘ্রই সেখানে ফের সিনেমা দর্শন শুরু হতে চলেছে। সব ঠিকঠাক থাকলে পরশু, রবিবার পুনর্নির্মিত মেট্রোর উপরের দু’টি তলে দু’টি স্ক্রিনের উদ্বোধন হওয়ার কথা।
নাগরিকদের একাংশের বক্তব্য, দু’টি স্ক্রিনের উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে শুধুই সেখানে সিনেমা দর্শন শুরু হবে না। বরং তা অতীতের স্মৃতিকেও জাগিয়ে তুলবে। এক হেরিটেজ বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘এমন শহরবাসী খুঁজে পাওয়া কঠিন, যিনি কোনও দিন এই সিনেমা হলের চৌহদ্দির মধ্যে আসেননি। মেট্রো তো শুধুই সিনেমা হল নয়, এটি একটি দিকচিহ্ন (ল্যান্ডমার্ক) যা শহরের সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত।’’
যে সংস্কৃতির সূত্রপাত ৮৬ বছর আগে। যখন কলকাতার সিনেমাপিপাসু ব্রিটিশদের বিনোদনের জন্য মেট্রো-গোল্ডউইন-মায়ের (এমজিএম) সংস্থা— যা বিশ্বের অন্যতম পুরনো প্রযোজনা ও বিপণন (ডিস্ট্রিবিউশন) সংস্থাও বটে, তারা কলকাতার চৌরঙ্গিতে মেট্রো সিনেমা তৈরি করেছিল। সে-ই শুরু। কিন্তু গত দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে পুরনো কাঠামোর ভগ্নদশা, সিনেমা হল চত্বরে নানা অসামাজিক কাজের কারণে সংখ্যাগরিষ্ঠ শহরবাসীই এই প্রাণকেন্দ্র এড়িয়ে চলতেন।
কিন্তু বছর দুই আগে ফের এই প্রাণকেন্দ্রের দরজা খুলে যায়। যেখানে বর্তমানে চারতলা জুড়ে প্রায় ৫০ হাজার বর্গফুটের বিপণি রয়েছে। আর উপরের দু’টি তল মিলিয়ে দু’টি সিনেমার স্ক্রিন করা হয়েছে। তবে একেই পুরনো কাঠামো, তার উপরে ঘিঞ্জি এলাকা, সব সময়ে লোক চলাচল, তার মধ্যে মেট্রো সিনেমাকে নতুন রূপ দেওয়া রীতিমতো কঠিন ছিল বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। কলকাতা পুরসভার ‘হেরিটেজ কনজ়ার্ভেশন কমিটি’ স্পষ্ট জানিয়েছিল, মেট্রোর বাইরের মূল কাঠামো অক্ষত রেখেই যা করার করতে হবে। কারণ, মেট্রো সিনেমা হল ছিল শিল্পকলা ও স্থাপত্যের ‘আর্ট ডেকো মুভমেন্ট’-এর অন্যতম নিদর্শন। যা ১৯২০-’৩০ সালে ইউরোপ, আমেরিকা থেকে শুরু করে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল।
ইতিহাস বলছে, এই সিনেমা হলের স্থপতি ছিলেন থমাস ল্যাম্ব। যিনি ১৯৩৮ সালে মুম্বইয়ে আর একটি মেট্রো সিনেমা তৈরি করেছিলেন। তবে অনেকের বক্তব্য, নবনির্মিত মেট্রোর ঔপনিবেশিক ধারার ‘ভারতীয়করণ’ হয়েছে এত দিনে। কারণ, এর মূল স্থপতি হলেন এক জন ভারতীয় তথা বাঙালি সুবীর বসু। যিনি আবার রাজ্য সরকারের ‘ওপেন এয়ার থিয়েটার’ তথা সাংস্কৃতিক অঙ্গন ‘উত্তীর্ণ’-রও নকশা করেছেন। সুবীরবাবু বলছেন, ‘‘হেরিটেজ শৈলী অক্ষুণ্ণ রেখে সমস্ত দফতর থেকে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র নিয়েই এই নতুন মেট্রো তৈরি করা হয়েছে। আমাদের একটাই লক্ষ্য ছিল— শহরের পুরনো প্রজন্মের সঙ্গে নতুন প্রজন্মের কাছেও এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরা।’’ রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের চেয়ারম্যান শুভাপ্রসন্নের কথায়, ‘‘হেরিটেজ শৈলী অক্ষুণ্ণ রেখেই নতুন মেট্রো নির্মাণ করা হয়েছে।’’
‘নস্ট্যালজিয়া’ উস্কে যা অচিরেই শহরে সিনেমা দর্শনের অন্যতম ঠিকানা হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy