প্রতীকী ছবি।
দিন তিনেক আগেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে রাজ্যে ছ’মাসের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে মারা গিয়েছে বারো বছরের এক বালক। দু’টি ক্ষেত্রেই ডেঙ্গি শকের কারণে বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতির কথা তাদের ডেথ সার্টিফিকেটে উল্লেখ করা হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, স্বাভাবিক ভাবেই শিশুদের সহ্য ক্ষমতা বড়দের থেকে অনেক কম। তাই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে শরীরের ভিতরে রক্তক্ষরণ শুরু হলে, তার সঙ্গে লড়াই করা সম্ভব হয় না শিশুর। সেখানেই বড় বিপদ খুদেদের।
এ রাজ্যের ডেঙ্গি পরিস্থিতি যখন ক্রমশ উদ্বেগজনক হচ্ছে, তখন শিশুদের আক্রান্ত হওয়াও দুশ্চিন্তার বড় কারণ হয়ে উঠছে বলে মত চিকিৎসকদের। এই দুশ্চিন্তার নেপথ্যে সব থেকে বড় কারণ হিসাবে তাঁরা তুলে ধরছেন, জ্বর হলেও শিশুকে চিকিৎসকের কাছে না নিয়ে গিয়ে পরিজনদের ‘ডাক্তারি’ করার অভ্যাসকেই। শহরের শিশুরোগ চিকিৎসকেরা বার বার বলছেন, ডেঙ্গির ক্ষেত্রে ঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করাটা অত্যন্ত জরুরি। না হলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি হওয়ার প্রভূত আশঙ্কা রয়েছে। চিকিৎসকেরা এটাও জানাচ্ছেন, সরকারি হাসপাতাল বা ব্যক্তিগত চেম্বারে আসা, জ্বরে ভোগা শিশুদের বড় অংশেরই ডেঙ্গি ধরা পড়ছে। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের শিশুরোগ চিকিৎসক অসীম মল্লিকের কথায়, “সাধারণ ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয় না। কিন্তু ডেঙ্গি হেমারেজিক শক, অর্থাৎ, শরীরের ভিতরে রক্তক্ষরণ হতে শুরু করলেই বিপদ। তাই জ্বর হলে অবহেলা নয়। সবার আগে ডেঙ্গি পরীক্ষার কথা লেখা প্রয়োজন। এখন ওই পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা উচিত।”
শিশুরোগ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, অনেক ক্ষেত্রেই জ্বরে আক্রান্ত শিশুকে বাড়িতে থাকা পুরনো প্রেসক্রিপশন দেখে ওষুধ খাওয়াচ্ছেন বাবা-মা। এ ভাবে পাঁচ-ছয় দিন কাটার পরে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাচ্ছেন। সেখানে আবার এক-দুই দিনের ওষুধ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। কিন্তু জ্বর যদি ডেঙ্গির কারণে হয়ে থাকে, তা হলে এতটা দেরি বিপদ বাড়বে। যেমন, বেলুড়ের শিশুকন্যাটির প্রথমে হালকা জ্বর, সর্দি-কাশি ছিল। তখন রক্ত পরীক্ষা করানো হয়নি। দিন পাঁচেক পরে পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, সে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। তার পরদিন ভর্তি করা হয়েছে। অসীম বলেন, “বেশ কয়েকটি দিন নষ্ট হয়েছে। ডেঙ্গির ক্ষেত্রে ঠিক সময়ে ঠিক চিকিৎসা শুরু করা জরুরি। না হলে শরীর ধাক্কা সামলাতে পারে না।”
করোনার আতঙ্ক সরিয়ে এখন স্কুল খুলে গিয়েছে। শিশুরা খেলাধুলো করছে। কিন্তু স্কুলের মাঠে বা বাগানে মশা নিয়ন্ত্রণের কী বন্দোবস্ত থাকছে, সে দিকে কড়া নজর দেওয়ার কথা জানাচ্ছেন ‘ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্স’-এর জাতীয় স্তরের সহ-সভাপতি তথা শিশুরোগ চিকিৎসক অতনু ভদ্র। তিনি এটাও জানাচ্ছেন, এই মরসুমে কোনও ভাবেই শিশুদের হাত-পা খোলা জামাকাপড় পরা উচিত নয়। বরং ফুলহাতা জামা, পাজামা জাতীয় প্যান্ট পরাতে হবে। যাতে মশার কামড় থেকে রেহাই পাওয়া যায়। অতনু বলেন, “ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে শিশু যদি হেমারেজিক শকে চলে যায়, তা হলে বড় বিপদ। ডেঙ্গির প্রতিরোধে কোনও প্রতিষেধক এখনও বেরোয়নি। তাই সতর্কতাই একমাত্র পথ।”
অনেকেই সপ্তাহান্তে বাড়ির খুদে সদস্যকে নিয়ে বেড়াতে যাচ্ছেন। সেখানেও অতি সতর্কতার কথা জানাচ্ছেন অতনু-সহ অন্য চিকিৎসকেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, যে জায়গায় বেড়াতে যাওয়া হচ্ছে, সেখানকার ডেঙ্গি পরিস্থিতি বা মশার প্রকোপ সম্পর্কে আগাম জেনে নেওয়া প্রয়োজন। তাঁরা এটাও জানাচ্ছেন, পুরনো প্রেসক্রিপশন দেখে বা আন্দাজে অ্যান্টিবায়োটিক খাইয়ে তাড়াতাড়ি জ্বর কমানোর চেষ্টা আদতে ডেঙ্গি আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে বড় বিপদ ডেকে আনে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের শিশুরোগ বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক দিব্যেন্দু রায়চৌধুরীর কথায়, “বহু সময়েই জ্বর কমানোর জন্য সাধারণ প্যারাসিটামলের পরিবর্তে অনেকেই ‘আইবুপ্রোফেন’ ও ‘মেফেনামিক অ্যাসিড’ জাতীয় ওষুধ শিশুকে খাওয়াচ্ছেন। যদি ডেঙ্গি হয়ে থাকে, তা হলে ওই ওষুধ মারাত্মক ক্ষতি করবে।” তাঁর মতে, জ্বরে আক্রান্ত শিশুকে সাধারণ প্যারাসিটামল খাওয়ালেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy