Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Dilapidated House

Child death: বোন হলে কোন খেলনা, বেছে রেখেছিল সুন্দরী

এ দিন সকালে বৃষ্টির মধ্যেই ভেঙে পড়ে আহিরীটোলা স্ট্রিটের একটি পুরনো বাড়ি। সৃজিতার মা গঙ্গার মা-বাবার বাড়ি সেটি।

মর্মান্তিক: বৃষ্টিতে এই বাড়ি ভেঙেই মৃত্যু হয় শিশু-সহ দু’জনের। বুধবার, আহিরীটোলায়। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

মর্মান্তিক: বৃষ্টিতে এই বাড়ি ভেঙেই মৃত্যু হয় শিশু-সহ দু’জনের। বুধবার, আহিরীটোলায়। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৫:০৪
Share: Save:

ভাই হলে নিজের কোন খেলনাটা দেবে, আর বোন হলে কোনটা— সবই ঠিক করে রেখেছিল সে! কিন্তু সেই সুযোগ আর এল না আহিরীটোলার বাসিন্দা, ছোট্ট সৃজিতা ঘড়াইয়ের জীবনে। বাড়ি ভেঙে চাপা পড়ে বুধবার সকালে ঘুমের মধ্যেই মৃত্যু হল বছর তিনেকের ওই শিশুটির। সে জানতেও পারল না যে, সে দিনই সন্ধ্যায় তার একটি ফুটফুটে বোন জন্মেছে!

এ দিন সকালে বৃষ্টির মধ্যেই ভেঙে পড়ে আহিরীটোলা স্ট্রিটের একটি পুরনো বাড়ি। সৃজিতার মা গঙ্গার মা-বাবার বাড়ি সেটি। পরিবারে নতুন সদস্য আসছে বলে গত কয়েক দিন ধরে মেয়েকে নিয়ে ওই বাড়িতেই থাকছিলেন গঙ্গা। আজ, বৃহস্পতিবার সন্তান প্রসবের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কথা ছিল তাঁর। তার আগে বুধবার ভোরেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়া বাড়ির নীচে চাপা পড়েন তাঁরা। গঙ্গার মা চাঁপা গড়াইয়ের পাশাপাশি মৃত্যু হয় মেয়ে সৃজিতারও। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন স্বামী সুশান্ত ঘড়াইও। স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে হবে বলে সুশান্তও মঙ্গলবার রাতটা থেকে গিয়েছিলেন শ্বশুরবাড়িতে। লালবাজারের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীতে দীর্ঘ দিন কাজ করে সদ্য সেন্ট্রাল ডিভিশনে যুক্ত হওয়া ওই যুবক বুঝতেই পারেননি, পরিবারে খুশির খবর আসার আগেই জীবনে নেমে আসবে চরম বিপদ!

এ দিন ঘটনার পরেই তড়িঘড়ি আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করা হয় গঙ্গাকে। সেখানে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার পরে ঝুঁকি নিতে না-চেয়ে সিজ়ার করার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকেরা। বিকেলে একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন গঙ্গা। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, মা ও মেয়ে দু’জনেই সুস্থ।

ভেঙে পড়া বাড়ির উল্টো দিকের গলিতেই গঙ্গার শ্বশুরবাড়ি। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, মাঝেমধ্যেই জ্ঞান হারাচ্ছেন গঙ্গার শাশুড়ি লতিকা ঘড়াই। ওই বাড়িতেই থাকেন সুশান্তর দাদা জয়ন্ত এবং ভাই প্রশান্ত। একতলায় প্রৌঢ়া একা থাকলেও দোতলায় ঘর রয়েছে ভাইদের। সে দিকে দেখিয়েই লতিকা বললেন, ‘‘বার বার বলেছিলাম, নিজেরা গেলে যাও। নাতনিটাকে আমার কাছে রেখে যাও। কেউ কথা শুনল না। শুনল না বলেই সব শেষ হয়ে গেল। এর পরে ওদের ঘরে যাব কী করে?’’ প্রৌঢ়া বলতে থাকেন, সৃজিতা নয়, আদরের নাতনিকে তিনি সুন্দরী বলে ডাকতেন। ঘর জুড়ে সাজানো সেই সুন্দরীরই নানা কায়দার ছবি আর খেলনা। ওই সমস্ত খেলনার মধ্যে থেকেই দু’টিকে আলাদা করে বেছে দাদুর বাড়িতে গিয়েছিল সে। দেখিয়ে রেখেছিল, ভাই হলে কোন খেলনাটা দেবে, আর বোন হলে কোনটা!

নাতনির শোকে ফের কথা হারানোর মুখে লতিকা বলেন, ‘‘কাকে দোষ দেব? আমিই বা কেন সুন্দরীকে জোর করে রেখে দিলাম না!’’

ওই বাড়িতেই হাজির গঙ্গার বাবা মদন গড়াই জানালেন, ঘটনার কিছু ক্ষণ আগেই তিনি বেরিয়েছিলেন নাতনির জন্য দুধ কিনতে। প্রতিদিন সকালে দুধ-বিস্কুট খাওয়া ছিল তার অভ্যাস। আর সে ভালবাসত মাংস। প্রৌঢ় বলেন, ‘‘আজ মাংস খাবে বলে রেখেছিল। দুধ কিনে ফেরার পরেই মাংস আনতে বাজারে যাব বলে ঠিক করেছিলাম। কিন্তু তার আগেই শুনি, আমাদের বাড়ি ভেঙে পড়েছে। বৃহস্পতিবার ওর মাকে নিয়ে ব্যস্ততা থাকবে বলে আজই মাংস খাইয়ে দেব ভেবেছিলাম। কিন্তু আর কিছুই করে উঠতে পারলাম না।’’ কথা বলার মধ্যেই গলা বুজে আসে প্রৌঢ়ের।

রাস্তার ধারে দাঁড় করানো ছিল সৃজিতার বাবার স্কুটার। জামাইয়ের সেই স্কুটারের দিকে দেখিয়ে মদনবাবু বললেন, ‘‘বাবার সঙ্গে বাজারে যাবে বলে কে আর বায়না ধরবে? কে চেঁচাবে স্কুটার কিনে দাও বলে? আমার পরিবারটাই তো শেষ হয়ে গেল!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Dilapidated House Death Child death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy