ভোরের লোকাল ট্রেনে মহিলা যাত্রীর সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে গলার হার ছিঁড়ে নিয়ে পালাল দুষ্কৃতীরা।
রবিবার ভোরের ট্রেনে নৈহাটি থেকে উঠেছিলেন চুঁচুড়ার কামার পাড়া ব্রজচন্দ্র পল্লির বাসিন্দা সুস্মিতা গোস্বামী। স্বাস্থ্য দফতরের কর্মী সুস্মিতা একটি বৈদ্যুতিন মাধ্যমে স্বাস্থ্য বিষয়ক অনুষ্ঠান সঞ্চালনাও করেন। ৫টা ৫৫’র ডাউন নৈহাটি লোকালের একটি কামরায় উঠে বসার জায়গাও পেয়েছিলেন তিনি। ট্রেন ছাড়ার পরেই তিনি খেয়াল করেন সাদা জামা পরা সুদর্শন এক যুবক তাঁর উপরে নজর রাখছে। কিছুক্ষণ পরে ওই সাদা জামা পরা লোকটি চোখের ইশারায় আর একজনকে ডেকে বসতে বলে নিজের জায়গায়। একটু পরে দ্বিতীয়জনও উঠে যায়। কাঁকিনাড়া ঢোকার আগে রেল সাইডিং এর কাছে দু’জনই পিছন থেকে সুস্মিতাকে আক্রমণ করে। একজন তাঁর গলা টিপে ধরে গলায় থাকা হারটি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। সুস্মিতা বলেন, ‘‘ট্রেনটা কাঁকিনাড়া স্টেশনে ঢোকার আগেই বছর পঁয়তিরিশের টি-শার্ট পরা লোকটি আমার ঘাড় চেপে ধরে হারটা টানছিল। গলায় ফাঁস লাগার মতো যন্ত্রণা হচ্ছিল। তবু লোকটার হাত চেপে ধরে আমিও ঘুরে দাঁড়াই।’’ মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তখন ধস্তাধস্তি বেধে যায়।
ঘটনার আকস্মিকতায় সহযাত্রীরা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে প্রথমে চুপ করে থাকলেও পরে হৈ হৈ করে ওঠেন। সেই সুযোগে দুই দুষ্কৃতী সুস্মিতার হার ছিনিয়ে নিয়ে চলন্ত ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে যায়। টানা হ্যাঁচড়ায় হীরে বসানো সোনার লকেটটি সুস্মিতার হাতেই থেকে যায়। যে হারটি ছিনতাই হয়েছে সেটি ইমিটেশনের বলেই সুস্মিতা জানিয়েছেন।
আর এই ঘটনা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, মেইন লাইনের ট্রেন যাত্রা এখন আর নিরাপদ নয়। মাস কয়েক আগে ডাউন রানাঘাট লোকালের মহিলা কামরায় ছিনতাইবাজদের কবলে পড়েছিলেন ব্যারাকপুরের বাসিন্দা সুদেষ্ণা সাহা। টিটাগড় স্টেশনে ব্যাগ ছিনতাই করে নেমে যাওয়ার সময় দুই মহিলা ছিনতাইবাজকে হাতেনাতে ধরেছিলেন তিনি। দমদম জিআরপিতে অভিযোগ দায়ের করার সাত দিন পরে ফের টিটাগড় স্টেশনে ওই ছিনতাইবাজদের দেখতে পান তিনি। টিটাগড় আর ব্যারাকপুরের মাঝে ট্রেনে বিষ্ফোরণের ঘটনাতেও প্রকাশ্যে এসেছিল দুই কেপমারের কাহিনী। যাদের কাছে কৌটো বোমাটি ছিল। চলতি বছরের গোড়াতেই শিয়ালদহ আর বিধাননগরের মাঝে কারশেডের কাছে এক কাপড়ের ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নগদ টাকা ও আংটি লুঠ করে দুষ্কৃতীরা। ট্রেনের গতি একটু কমতেই নেমে পালিয়ে যায়। যেমনটা সুস্মিতার ক্ষেত্রেও ঘটেছে। নারকেলডাঙা কারশেড, কাঁকিনাড়ার ৫ নম্বর রেল সাইডিং, দমদম, টিটাগড় স্টেশনগুলি ট্রেনের কেপমার আর ছিনতাইবাজদের আখড়া। মূলত ভিড় ট্রেন যেমন কেপমারদের লক্ষ্য থাকে তেমনি অপেক্ষাকৃত ফাঁকা ট্রেন থাকে ছিনতাইবাজদের নজরে।
মাসখানেক আগেই কাঁকিনাড়ায় পুলিশের তাড়ায় এক ছিনতাইবাজের হাত থেকে রেল লাইনে পড়ে একটি হাত বোমা ফেটে গিয়েছিল। ৫ নম্বর সাইডিংয়ে রীতিমতো চিরুনি তল্লাশি চালিয়েছিল পুলিশ। কয়েকজন ছিনতাইবাজকে গ্রেফতার করলেও যথারীতি জামিনে তারা ছাড়াও পেয়ে গিয়েছে। রেল পুলিশের খতিয়ান অনুযায়ী চলতি বছরে মেইন লাইনে ছিনতাইয়ের সংখ্যা সাকুল্যে আটটি। এর মধ্যে পাঁচটিতেই পুলিশ ছিনতাইবাজদের ধরে আদালতেও পাঠিয়েছে। পাঁচটি ঘটনাতেই কিছু উদ্ধার হয়েছে, কিছু হয়নি। কিন্তু আখেরে লাভ কিছু হয়নি ওই ছিনতাইবাজরা কিছু দিন পরেই ছাড়া পেয়ে যাওয়ায়। রেল পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘অনেক কসরৎ করে ধরার পরেও যদি আইনজীবীদের হাত করে অল্প দিনেই এই দুষ্কৃতীরা ছাড়া পেয়ে যায়, তা হলে আর ধরার তাগিদটাই থাকে না। তবু অভিযোগ এলে তো ব্যবস্থা নিতেই হয়।’’ কিন্তু অভিযোগই যে ঠিকমতো হয় না বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। কারণ জিআরপি থানা সব স্টেশনে নেই। শিয়ালদহের পরে দমদম তারপর সেই ব্যারাকপুর। এরপর নৈহাটি এবং কল্যাণী। কোন স্টেশন কার আওতায় জানেন না সাধারণ যাত্রীরা। ফলে ঘুরতে গিয়ে বিভ্রান্ত হয়েই অনেকে অভিযোগ করার আগেই হাল ছেড়ে দেন। আবার অনেকে অভিযোগ করে আর এগোন না। রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনের রেল পুলিশ সুপার দেবাশিস বলেন, ‘‘ছিনতাইবাজদের ধরতে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি অভিযান হয়েছে। আরও হচ্ছে। আমরা এখন ছিনতাইবাজ ও কেপমারদের ফাইল তৈরি করেছি। সকলের ছবিও রাখা হচ্ছে। কোনও ঘটনা ঘটলে ছবি দেখিয়ে শনাক্ত করানো হচ্ছে। এ ক্ষেত্রেও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy