আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে বিজ্ঞানী সমাজের ডাকে মিছিল শহরে। শনিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সদ্য প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে শুক্রবার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য বিক্রি, দরপত্র ও আর্থিক অনিয়ম-সহ সন্দীপের বিরুদ্ধে দায়ের করা প্রতিটি অভিযোগ খতিয়ে দেখবে ওই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনিক মহলের একাংশের বক্তব্য, মেডিক্যাল বর্জ্য বিক্রি-সহ যে সমস্ত অভিযোগের ভিত্তিতে সন্দীপের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের অনুমতি দিয়েছে আদালত, সেই সব বিষয়ে দুর্নীতি করার মতো পরিবেশ আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল আর জি করে। যেমন, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক রিপোর্ট জানাচ্ছে, আর জি করে অন্য বর্জ্যের থেকে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের পৃথকীকরণ ব্যবস্থার দশা ছিল শোচনীয়। বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অনুমোদনের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল ২০১২ সালের জুন মাসে। ‘কনসেন্ট টু অপারেট’-এর মেয়াদও উত্তীর্ণ হয় ২০১২ সালের ডিসেম্বরে। এখানেই শেষ নয়। অব্যবস্থার চিত্র ধরা পড়েছিল আরও বহু ক্ষেত্রে। যেমন, হাসপাতালের সমস্ত ওয়ার্ডে জীবাণুনাশক ও ‘নিডল-কাটার’ ছিল না। পর্ষদের রিপোর্ট আরও জানাচ্ছে, আর জি করে স্যালাইনের বোতল এক বার ব্যবহারের পরে পুরো নষ্ট করা হয় না। অথচ নিয়ম হল, এই বোতল এক বার ব্যবহারের পরে দুমড়ে-মুচড়ে ফেলে দেওয়ার। যাতে তা পুনর্ব্যবহারের সুযোগ না থাকে। সন্দীপের বিরুদ্ধেও বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।
অবশ্য শুধু আর জি কর নয়, কলকাতার একাধিক সরকারি হাসপাতালের বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দুর্দশার ছবি ধরা পড়ে পর্ষদের ওই রিপোর্টে। যার পরিপ্রেক্ষিতে এক সময়ে জাতীয় পরিবেশ আদালত ভর্ৎসনা করে মন্তব্য করে, শহরের প্রধান সরকারি হাসপাতালগুলি জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষাকে বিপন্ন করে তুলেছে। ২০১৫-’২১ সাল পর্যন্ত চলা ওই মামলার মোট ৩০টি শুনানিতে আগাগোড়াই আদালত বিরক্ত, ক্রুদ্ধ ছিল আর জি কর-সহ শহরের অন্যান্য প্রধান সরকারি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনার উপরে।
প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, আর জি কর-সহ শহরের প্রধান সরকারি হাসপাতালগুলিতে ন্যূনতম পরিবেশবিধি পালিত হয় না। অথচ, এই সব নিয়ম তৈরিই হয়েছে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিকে নজর রেখে। তাঁরা আরও জানাচ্ছেন, কোভিড সংক্রমণের আগে পর্যন্ত বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য নিয়ে কোনও সচেতনতাই ছিল না। এখনও যে খুব একটা হয়েছে, তা নয়। পরবর্তী কালে এই ব্যবস্থায় পরিবর্তন এলেও তা মূলত বাহ্যিক বলে অভিযোগ স্বাস্থ্য প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত একাংশের। অর্থাৎ অব্যবস্থার বাহ্যিক পরিবর্তন হলেও মূলটা একই থাকে বলে অভিযোগ। যার সদ্ব্যবহার করেছেন সদ্য প্রাক্তন অধ্যক্ষ। এক কর্তার অভিযোগ, ‘‘এ দিকে নজর কম। অথচ এর একটা কালোবাজার রয়েছে, যেখানে ব্যবহৃত জিনিসের দর রয়েছে। সন্দীপ এই সুযোগটাকেই কাজে লাগিয়ে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য বাইরে বিক্রি করতে পেরেছেন। আসলে অব্যবস্থা ছিলই, সন্দীপ প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির রূপ দিয়েছিলেন।’’
কিন্তু কার ‘বদান্যতায়’ সন্দীপ চিরাচরিত অব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার সাহস পেলেন? প্রশ্ন আদালতের। আর জি কর-কাণ্ডের পরে এই প্রশ্ন সাধারণ মানুষেরও!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy