Advertisement
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
R G Kar Hospital Incident

তরুণী চিকিৎসক পড়ুয়ার দেহ উদ্ধারের পরে নমুনা সংগ্রহের প্রক্রিয়া ‘ভুল’, দাবি করছেন তদন্তকারীরা

দেহ উদ্ধারের দিন যে দুই ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ ঘটনাস্থলে দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন, তাঁদের সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজখবর করছে সিবিআই। দু’জনকে ইতিমধ্যেই দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

Representative Image

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২৪ ০৭:১৯
Share: Save:

তরুণী চিকিৎসক-পড়ুয়ার দেহ উদ্ধারের পরে নমুনা সংগ্রহে দেরি ও টালবাহানার অভিযোগ আগেই উঠেছিল। তাতে আরও বেনিয়মের তথ্য এ বার উঠে এসেছে সিবিআইয়ের হাতে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকদের সূত্রে দাবি, ঘটনাস্থলে দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ যে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের করার কথা ছিল, তাঁরা করেননি। বদলে তা করেছেন অন্য ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সাধারণত ফরেন্সিক মেডিসিনের বিশেষজ্ঞেরা মৃতদেহ থেকে বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করেন। তাঁরা চিকিৎসক। আর ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন ফরেন্সিক গবেষকেরা। তাঁরা চিকিৎসক নন, কিন্তু বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। দেহ থেকে যাঁরা নমুনা সংগ্রহ করেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও বিশেষ বিশেষ ঘটনায় বিশেষ পারদর্শিতার প্রয়োজন থাকে। যেমন, বিষক্রিয়ার ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ দিক থাকে। আবার, ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রেও কিছু বিশেষ দিক থাকে।

জানা যাচ্ছে, দেহ উদ্ধারের দিন যে দুই ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ ঘটনাস্থলে দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন, তাঁদের সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজখবর করছে সিবিআই। দু’জনকে ইতিমধ্যেই দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কখন, কোন কর্তার নির্দেশে তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন তা ওই দু’জনের থেকে জানার চেষ্টা করেছেন তদন্তকারীরা।

পাশাপাশি, বেলগাছিয়ায় রাজ্য ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির কর্তাদেরও চিঠি পাঠানো হয়েছে সিবিআইয়ের তরফে। এমনকি ওই ফরেন্সিক পরীক্ষাগারের কর্তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকেরা। তবে এখনও পর্যন্ত রাজ্যের ফরেন্সিক পরীক্ষাগারের তরফে কোনও রিপোর্ট সিবিআইকে দেওয়া হয়নি। এবং তাতে টালবাহানা অব্যাহত বলেও দাবি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকদের। উচ্চ আদালতে আগামী শুনানিতে তথ্যপ্রমাণ লোপাট ও কলকাতা পুলিশের অসহযোগিতার বিষয়ে লিখিত ভাবে জানানো হবে বলে দাবি করেছেন সিবিআইয়ের এক কর্তা।

সম্প্রতি একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে। তাতে দেখা গিয়েছে, আর জি করের সেমিনার রুমে থিকথিকে ভিড়। যদিও লালবাজার দাবি করেছিল, ওই কক্ষের মাত্র ১১ ফুট অংশ ঘেরা ছিল না। সেখানেই লোকজন দাঁড়িয়েছিল। জানা যাচ্ছে, ওই দিন সেমিনার রুমে প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ আইনজীবী, আর জি করের ফরেন্সিক মেডিসিনের শিক্ষক-চিকিৎসক দেবাশিস সোম-সহ আরও কয়েক জন চিকিৎসক, হাসপাতালের ফাঁড়ির কয়েক জন পুলিশকর্মী ছিলেন।

সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের কথায়, “ঘটনাস্থলে আততায়ীর পায়ের ছাপ এবং হাতের ছাপের নমুনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেমিনার হলে উপস্থিত অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও আইনজীবীদের প্রত্যেকেরই ওই বিষয়ে জানার কথা। তা সত্ত্বেও এমন হল কী ভাবে?” এই ধোঁয়াশা কাটাতে সন্দীপ এবং দেবাশিসকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে সিবিআই। কিন্তু দু’জনেই বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে চলেছেন বলেও সূত্রের দাবি। আরও দাবি, জিজ্ঞাসাবাদে দেবাশিস জানিয়েছেন, তাঁকে সকাল থেকে সেমিনার রুমে ‘পোস্টিং’ করা হয়েছিল। কিন্তু কে সেই নির্দেশ দিয়েছিলেন, তা খোলসা করছেন না দেবাশিস।

অন্য দিকে, ভিডিয়োটি সামনে আসার পরেই সেখানে দেবাশিস-সহ ফরেন্সিক মেডিসিনের চার জনকে থাকতে দেখে সংশয় প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকদের বড় অংশ। তাঁদের অভিযোগ, কোনও তথ্যপ্রমাণ লোপাট করতে হলে সেই বিষয়ে সব থেকে ভাল পরামর্শ দিতে পারেন এক ফরেন্সিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞই। তা হলে কি প্রথম থেকেই প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা শুরু করা হয়েছিল? যদি তা হয়ে থাকে, তা হলে কেন? কাকে আড়াল করতে?

সিবিআইয়ের এক কর্তা বলেন, “মৃতদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহে ধোঁয়াশা রয়েছে। আবার, তথ্য-প্রমাণ লোপাট করে মামলা দুর্বল করে দেওয়ারও চেষ্টা করা হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে।” ঘটনাস্থলের তথ্যপ্রমাণ লোপাটের আরও তথ্য হাতে এসেছে বলে দাবি করেছেন তদন্তকারীরা। তাঁরা এটাও জানাচ্ছেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন সকাল ৯টার পরে দেহ দেখা গিয়েছিল। কিন্তু বাস্তব তেমন নয়। বরং দেহ উদ্ধারের দিন সাতসকালেই ওই সেমিনার রুমে ভিড় করার সমস্ত প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।

খুন ও ধর্ষণের মামলার আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “একের পর এক তথ্যপ্রমাণ লোপাটের নজির উঠে আসছে। এখন মনে হচ্ছে মৃতদেহটি যে পাওয়া গিয়েছে, সেটাই অনেক। সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারলে হয়তো মৃতদেহও লোপাট হয়ে যেতে পারত।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE