Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪
Abandoned Cars

আইনি জটিলতার ‘ভয়’, থানা সাফ হলেও ভাঙা গাড়ি সরে না সর্বত্র

পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ যদিও জানাচ্ছে, এই সময়ে যে কোনও জায়গায় জমে থাকা জলই বিপজ্জনক। গত বছরের বর্ষার মরসুম আরও এক বার দেখিয়েছে, আগাম সতর্ক না হলে ডেঙ্গির বিপদ কেমন আকার ধারণ করতে পারে।

Abandoned Car

বিপজ্জনক: রাস্তার ধারে পরিত্যক্ত গাড়িতে জমে রয়েছে আবর্জনা। সোমবার, ক্যানাল ইস্ট রোডে।  ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৩ ০৭:৪৪
Share: Save:

পুলিশের তরফে জানানো হয়, বিষয়টি পুরসভার দেখার কথা। পুরসভা আবার বলে, পুলিশেরই তো দেখা উচিত। কারণ, মামলা রয়েছে কি না, তা জানার কথা পুলিশেরই। প্রতি বছর বর্ষা এলেই এই দায় ঠেলাঠেলির জটিলতাতেই আটকে থাকে শহরের রাস্তা থেকে ভাঙা গাড়ি সরানোর কাজ। থানা চত্বরের গাড়ি নিয়ে তবু পুরসভা পুলিশকে চিঠি দেয়। উচ্চপদস্থ কর্তারাও থানা চত্বর সাফ করাতে পড়ে থাকা গাড়ি দ্রুত সরানোর নির্দেশ দেন। কিন্তু থানা থেকে দূরে কোনও গলি বা বড় রাস্তার পাশে মাসের পর মাস পড়ে থাকা গাড়ি নিয়ে কারও হেলদোল দেখা যায় না। ফলে প্রশ্ন উঠছে, চলতি বর্ষার মরসুমেও কি একই ব্যাপার হবে?

পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ যদিও জানাচ্ছে, এই সময়ে যে কোনও জায়গায় জমে থাকা জলই বিপজ্জনক। গত বছরের বর্ষার মরসুম আরও এক বার দেখিয়েছে, আগাম সতর্ক না হলে ডেঙ্গির বিপদ কেমন আকার ধারণ করতে পারে। রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্ত ও ডেঙ্গি-মৃত্যুর নিরিখে কার্যত নতুন রেকর্ড তৈরি হচ্ছিল প্রতিদিন। চলতি বছরে তাই পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে মেয়রের কাছে পড়ে থাকা গাড়ি নিয়ে সতর্ক হওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। মেয়রের দফতর নগরপাল বিনীত গোয়েলকে এ নিয়ে চিঠিও দিয়েছে। সোমবার থেকেই একাধিক থানা এবং ট্র্যাফিক গার্ড তাদের গেটের বাইরে পড়ে থাকা গাড়ি, মোটরবাইক সরানোর কাজ শুরু করেছে। কিন্তু থানা চত্বর ছাড়া অন্য কোথাও পড়ে থাকা গাড়ি সরানোর অভিযানের কথা শোনা যায়নি রাত পর্যন্ত। পূর্ব কলকাতার এক থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক বলেন, ‘‘থানা চত্বর সামলেই পারছি না, এর পরে গোটা এলাকার পড়ে থাকা গাড়ি সরানোর ভার নিলে তো হিমশিম খেতে হবে। কলকাতা পুলিশের এত গাড়ি তুলে নিয়ে গিয়ে রাখার জায়গা কোথায়?’’

এ দিন উত্তর থেকে দক্ষিণের নানা এলাকা ঘুরে দেখা গেল, এমন পড়ে থাকা গাড়ির সংখ্যা নেহাত কম নয়। ই এম বাইপাস জুড়েই দু’পাশে এই রকম অন্তত আটটি গাড়ি চোখে পড়ল। সেগুলির কোনওটিই আর চালানোর অবস্থায় নেই। বাসন্তী হাইওয়ে জুড়ে কলকাতা পুলিশ এলাকায় এমন গাড়ির সংখ্যা আরও বেশি। অধিকাংশেরই শুধুমাত্র কাঠামো অবশিষ্ট রয়েছে। গাড়ির মধ্যেই ফেলে রাখা টায়ার বা ভাঁড়ে জমছে জল। ক্যানাল ইস্ট এবং ক্যানাল ওয়েস্ট রোডের পাশে এমন একাধিক গাড়ির আবার ছাদ নেই। সিটের নীচে জমছে জল। হুঁশ নেই সেই পড়ে থাকা গাড়ির আশপাশের বাড়ির বাসিন্দাদেরও। নিমাই হালদার নামে তাঁদেরই এক জন বললেন, ‘‘পুলিশ কী করবে? এই গাড়ি তো পাড়ার এক জনের। তিনি চালাতে পারেন না, তাই পড়ে পড়ে এই অবস্থা হয়েছে।’’ গলির রাস্তাতেও এমন গাড়ির সংখ্যা প্রচুর। বেহালা, পর্ণশ্রী, কসবা, তিলজলা, ট্যাংরা, বেলেঘাটার নানা গলিতে এমন গাড়ি ফেলে রাখার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ, মানিকতলা মুরারিপুকুরে ১ নম্বর বস্তির একটি গলিতে রাস্তা জুড়ে এমন ভাবে গাড়ি ফেলে রাখা হয়েছে যে অন্য গাড়ি যেতে পারে না। টায়ার ফেটে যাওয়ার উপক্রম হওয়া সেই গাড়ি স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি গিয়েও সরাতে পারেননি বলে স্থানীয়দের একাংশের দাবি।

পুরসভার মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল অপসারণ) দেবব্রত মজুমদার এ ব্যাপারে বলেন, ‘‘বেআইনি পার্কিং বা স্বাস্থ্য বিষয়ক আইন ব্যবহার করে এমন গাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করাই যায়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে মামলার ব্যাপার থাকে বলে আমরা বুঝে হাত দিই। পুলিশ বললে পুরসভা এমন গাড়ি সরিয়ে দেবে।’’ কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার এক অফিসার অবশ্য বললেন, ‘‘থানা চত্বর সাফ করার নির্দেশ দেওয়া হলেও ব্যক্তি মালিকানার গাড়ি চাইলেই তুলে নেওয়া যায় না। ডেঙ্গির চেয়েও আইনি জটিলতার ভয় বেশি। সে ক্ষেত্রে নোটিস দিয়ে ডেকে পাঠাতে হয়। কিন্তু নোটিস পেয়ে লোক আসতে আসতেই বর্ষা চলে যায়।’’

তা হলে উপায়? স্পষ্ট উত্তর মেলে না কারও থেকেই।

অন্য বিষয়গুলি:

KMC Kolkata Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy