হাসপাতালে শুকদেব মাল। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
ক্যানসারে আক্রান্ত, বাঁ পায়ের যন্ত্রণায় কাতর নবম শ্রেণির ছাত্রের অবিলম্বে চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সেই চিকিৎসা পেতে লাগল দু’দিন। ছেলেকে স্ট্রেচারে শুইয়ে বুধবার সকাল থেকে হাসপাতালের এক বিভাগ থেকে আর এক বিভাগে ছুটলেন বাবা। বৃহস্পতিবার সকালেও ছবিটা বদলাল না। শেষে বৃহস্পতিবার বিকেলে বীরভূমের বাসিন্দা ওই কিশোরের হয়রানির খবর পেয়ে তাকে ভর্তি করাতে তৎপর হলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
গত জুন থেকে বাঁ পায়ের ব্যথায় কাবু হয়ে পড়ে বীরভূমের মাড়গ্রামের বাসিন্দা, বছর পনেরোর শুকদেব মাল। এ দিন শুকদেবের বাবা সুরেন মাল জানান, জেলার একাধিক চিকিৎসককে দেখিয়ে লাভ হয়নি। তাই জুলাইয়ে শুকদেবকে এসএসকেএমের অস্থি বিভাগে দেখান তাঁরা। কিন্তু ব্যথা কমছে না দেখে ছেলেকে নিয়ে তিনি বেঙ্গালুরু যান। সুরেন বলেন, ‘‘চার লক্ষ টাকা দেনা করে বেঙ্গালুরু গিয়েছিলাম। ওখানের চিকিৎসকেরা জানান, সংক্রমণের জন্য অস্ত্রোপচার করতে হবে।’’ অস্ত্রোপচার শেষে ছেলেকে নিয়ে মাসখানেক হল বাড়ি ফিরেছেন সুরেন। সম্প্রতি বেঙ্গালুরুর বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হোয়াটসঅ্যাপে কিশোরের বায়োপসি রিপোর্ট পাঠিয়েছে। সুরেন বলেন, ‘‘বর্ধমানের এক চিকিৎসককে ওই রিপোর্ট দেখানো হলে তিনি বলেন, ছেলের বাঁ পায়ে টিউমার রয়েছে। সেটি ক্যানসারে পরিণত হয়েছে। অবিলম্বে চিকিৎসা প্রয়োজন।’’
সময় নষ্ট না করে বুধবার সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ ছেলেকে নিয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছন সুরেন। হয়রানির সেই শুরু। সুরেন জানান, বহির্বিভাগের টিকিট কেটে প্রথমে ছেলেকে রেডিয়োথেরাপি বিভাগে দেখানো হয়। সেখান থেকে পাঠানো হয় অঙ্কোলজি বিভাগে। সুরেনের কথায়, ‘‘অঙ্কোলজি বিভাগে বলা হয়, ছেলেকে অস্থি শল্য চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে। সেখানে গেলে বলা হয়, পরের দিন বহির্বিভাগের টিকিট কেটে আসতে হবে।’’ ছেলেকে নিয়ে রাতভর আকাশের নীচে হাসপাতাল চত্বরেই ছিল পরিবার।
পরের দিন সকালে শুরু হয় হয়রানির দ্বিতীয় অধ্যায়। অস্থি শল্য চিকিৎসার বহির্বিভাগ থেকে শুকদেবকে ক্যানসার শল্য চিকিৎসা বিভাগে পাঠানো হয়। সেখানে গিয়ে কিশোরের পরিজনেরা জানতে পারেন, ওই দিন ক্যানসার শল্য চিকিৎসার বহির্বিভাগ বন্ধ। চিকিৎসকেরা না থাকায় আসতে হবে অন্য দিন। দু’দিন ধরে স্ট্রেচারে এক বিভাগ থেকে আর এক বিভাগে ঘুরে তত ক্ষণে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত শুকদেব। তার কান্না শুনে হাসপাতালে উপস্থিত কয়েক জন বিষয়টি সুপারকে জানানোর পরামর্শ দেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ওই কিশোরকে ভর্তি নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। শুকদেবের প্রতিবেশী সুদীপ সাহা এ দিন বলেন, ‘‘মানুষ যে কত অসহায়, সেটা সরকারি হাসপাতালে এলে বোঝা যায়।’’
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘হয়রানির বিষয় নয়। অঙ্কোলজি বিভাগে রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছিল। নিয়ম হল, পরবর্তী চিকিৎসা পদ্ধতি কী হবে, তা ঠিক করবে টিউমার সংক্রান্ত মেডিক্যাল বোর্ড। সেই মতো রোগীর পরিবারকে অন্য দিন আসতে বলা হয়। চাইলেও অনেক সময়ে হাসপাতালে রোগীকে ভর্তি করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যায় না। তবে বিষয়টি জানা মাত্র কিশোরকে ভর্তির ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy