যোগাযোগ: বাজির দূষণও কি বাজের কারণ, জানতে শুরু হবে গবেষণা। ফাইল চিত্র
শব্দবাজি-আতসবাজির সঙ্গে দূষণের সম্পর্কের কথা এত দিন জানাই ছিল। এ বার যুক্ত হল আরও একটি বিষয়। বাজির সঙ্গে বজ্রপাতের সম্পর্ক কতটা সমানুপাতিক সেটাই খতিয়ে দেখতে চাইছেন গবেষকেরা।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাটমসফেরিক সায়েন্সেস বিভাগ সূত্রের খবর, এ শহরে প্রথম বার এমন কাজ হতে চলেছে। কাল, মঙ্গলবার কালীপুজো এবং পরদিন দীপাবলিতে বাজি ফাটানোর ফলে বাতাসে দূষণের পরিমাণ কতটা বাড়ল, সে সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করবে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
কারণ, গবেষকেরা জানাচ্ছেন, বাজ পড়ার সঙ্গে দূষণের একটি সম্পর্ক রয়েছে। সার্বিক দূষণ নাকি বিশেষ কোনও দূষক (পলিউট্যান্ট) বজ্রপাতের হারবৃদ্ধির জন্য দায়ী, সেটাই পরীক্ষা করে দেখা হবে। এখন বজ্রপাতের সময় না হলেও সেই গবেষণার কারণে আগামী সপ্তাহে, বিশেষ করে কালীপুজো ও দীপাবলির দিন শহরের বাতাসে দূষণের পরিমাণ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য কেন্দ্রীয় ও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হবে বলে অ্যাটমসফেরিক সায়েন্সেস বিভাগ সূত্রের খবর।
বিভাগ সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই গত মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বাজ পড়া সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এত দিন এ ধরনের গবেষণা স্যাটেলাইট-তথ্যভিত্তিক হয়েছে বলে জানাচ্ছেন গবেষকেরা। সেই সংক্রান্ত গবেষণা মূলত অনেকটা বড় এলাকা বা জোন ভিত্তিক। কিন্তু বজ্রপাত ও তার কারণ সংক্রান্ত ‘গ্রাউন্ড-বেসড’ গবেষণা শহরে এই প্রথম বলে দাবি গবেষকদের। তাতে দেখা যাচ্ছে, ধারাবাহিক ভাবে বজ্রপাতের সংখ্যা বেড়েছে শহরে। বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজের অ্যাটমসফেরিক সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক সুব্রতকুমার মিদ্যা বলেন, ‘‘এটা বাজ পড়ার সময় না হলেও দীর্ঘকালীন সময়ের ভিত্তিতে আমরা দূষণের তথ্য সংগ্রহ করছি। সে কারণেই কালীপুজো ও দীপাবলির সময়ে শহরে দূষণের তথ্য সংগ্রহ হবে।’’
কালীপুজোর ক’দিন শহরের বাতাসে দূষণের পরিমাণ যে বাড়ে, তা রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্যই বলছে। ২০১৬ সালে কালীপুজোর পরদিন, দীপাবলিতে শহরের বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার (পিএম১০) পরিমাণ ছিল ২০২ মাইক্রোগ্রাম এবং দীপাবলির পরদিন ওই মাত্রা ছিল ২৩৯ মাইক্রোগ্রাম! যেখানে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের উল্লিখিত মাপকাঠি অনুযায়ী, ওই ভাসমান ধূলিকণার সহনশীল মাত্রা হল প্রতি ঘনমিটারে ১০০ মাইক্রোগ্রাম। ওই নির্দিষ্ট মাত্রা ছাড়ালেই শ্বাসকষ্টের সমস্যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। ওই মাত্রা যথাক্রমে ২০০, ৩০০ ও ৪০০ মাইক্রোগ্রাম হলে পরিস্থিতি ‘খারাপ’, ‘খুব খারাপ’ ও ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অর্থাৎ, তথ্যানুযায়ী কালীপুজো-দীপাবলিতে শহরের শ্বাসযোগ্য বাতাসের মান ‘খারাপ’ থেকে ‘খুব খারাপ’ হয়। ইএনটি বিশেষজ্ঞ শান্তনু পাঁজা বলছেন, ‘‘আমাদের শ্বাসনালীর মধ্যে চলে যায় ওই কণা। ফলে ক্রনিক শ্বাসকষ্টের রোগীদের তো বটেই, সুস্থ মানুষেরও শ্বাসকষ্টের সমস্যা শুরু হয়।’’
তবে গত বছর ওই নির্দিষ্ট দিনে বাতাসে দূষণের পরিমাণ কম ছিল বলে পর্ষদ সূত্রের খবর। এ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের কোনও অবদান নেই বলেই জানাচ্ছেন পর্ষদ কর্তাদের একাংশ। কারণ, গত বছর বৃষ্টি হয়েছিল। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা পিএম ১০ ও অতিসূক্ষ্ম কণা পিএম ২.৫, উভয়েরই পরিমাণ বাড়ে শব্দবাজি বা আতসবাজিতে। কী ধরনের বাজি ফাটছে, তার উপরে নির্ভর করে কোন দূষকের পরিমাণ বাড়বে বাতাসে।’’
প্রসঙ্গত, কালীপুজো-দীপাবলির সময়ে শহরের দূষণ সংক্রান্ত গবেষণা বলছে, বালিগঞ্জ-সহ দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকায় শব্দবাজি-সহ অন্য বাজির দাপট বেশি। তাই বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজের অ্যানেক্স-টু বিল্ডিংয়ের ছাদে বসানো বজ্রনিরোধক যন্ত্রের (লাইটনিং ডিটেক্টর) মাধ্যমে বালিগঞ্জ ও তার ১০ কিলোমিটার সংলগ্ন এলাকার সব তথ্যই পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী গবেষকেরা। সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘সার্বিক দূষণ না বিশেষ কোনও পলিউট্যান্ট যেমন পিএম ১০, পিএম ২.৫, নাইট্রোজেন-ডাই অক্সাইড বা অন্য কিছু, কোনটার সঙ্গে বাজ পড়ার সম্পর্ক সব থেকে বেশি, সেটা খুঁজে বার করার চেষ্টা চলছে। সেটা যদি কমানো যায়, তা হলে বজ্রপাতের হার কমে কি না, তা-ও দেখা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy