আদালতে ফৌজদারি মামলা বিচারাধীন। ওই কারণ দর্শিয়ে কোনও ব্যক্তির বিদেশযাত্রায় বাধা দেওয়া যেতে পারে না বলে আগেই জানিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় গত এক বছরে বিদেশভ্রমণ করেছেন বা কোনও কাজে বিদেশে গিয়েছেন, এ রাজ্যের এমন সকল ব্যক্তির তালিকা চাইল কলকাতা হাই কোর্ট। বুধবার বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের নির্দেশ, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসকে হলফনামা দিয়ে ওই তালিকা জমা দিতে হবে। সেখানে স্পষ্ট করে জানাতে হবে মামলা বিচারাধীন থাকা সত্ত্বেও কাদের বিদেশযাত্রায় অনুমতি দেওয়া হয়েছে এবং কাদের দেওয়া হয়নি। মামলাটির পরবর্তী শুনানি রয়েছে আগামী ৬ জানুয়ারি।
আদালতে ফৌজদারি মামলা বিচারাধীন। ওই কারণ দর্শিয়ে কোনও ব্যক্তির বিদেশযাত্রায় বাধা দেওয়া যেতে পারে না বলে আগেই জানিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। কিন্তু যে মামলার প্রেক্ষিতে ওই নির্দেশ দেওয়া হয়, পাসপোর্ট অফিস সেই বিচারাধীন ব্যক্তিকে ‘ক্লিয়ারেন্স’ দেয়নি। কারণ হিসাবে ওই মামলার কথা বলা হয়েছে। এ নিয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন মামলাকারী। তাঁর আইনজীবী শারওয়ার জাহান এবং বিনয় সাউ জানান, তাঁদের মক্কেলের বিদেশযাত্রায় হাই কোর্ট সদর্থক পদক্ষেপ করেছে। কিন্তু তার পরেও অনুমতি মিলছে না।বুধবার সংশ্লিষ্ট মামলার শুনানিতে বিচারপতি সেনগুপ্তের পর্যবেক্ষণ, গুরুতর মামলায় জড়িত এমন অনেককেই বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয় মন্ত্রক। সেখানে একটি মামলাকে কেন ব্যতিক্রম হিসাবে দেখা হল, সেটাই বিস্মিত করেছে আদালতকে। বিচারপতির আরও পর্যবেক্ষণ, কী ভাবে কর্তৃপক্ষ ধরে নিলেন যে, অভিযুক্তের শাস্তি হবে আদালতে তাই তাঁর বিদেশযাত্রায় অনুমতি দেওয়া হবে না!
আদালতের এই পর্যবেক্ষণের পর কেউ কেউ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বা রাজ্য তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের মতো রাজনৈতিক এবং প্রভাবশালী ব্যক্তির মামলাও বিচারাধীন। তাঁরাও বিদেশে গিয়েছেন। কেউ চিকিৎসার কারণে, কেউ বা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে। তবে সকলেই আদালত এবং তদন্তকারী সংস্থার অনুমতি নিয়েই বিদেশে গিয়েছেন।
যে প্রেক্ষিতে আদালতের এই পর্যবেক্ষণ, সেই মামলাটি করেছিলেন কলকাতার এক তরুণী। সম্প্রতি তিনি আদালতের দ্বারস্থ হন। তাঁর অভিযোগ, তিনি প্রেমিকের কাছে আমেরিকায় যাবেন বলে ভিসার আবেদন করেছিলেন। কিন্তু আমেরিকার দূতাবাস থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, নিয়ম অনুযায়ী ভিসা পেতে একটি পুলিশি ছাড়পত্র বা পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট (পিসিসি) প্রয়োজন। যেটি ভারতীয় পাসপোর্ট অফিস থেকে দেওয়া হবে। এর পর পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করেন। কিন্তু ওই ছাড়পত্র তাঁকে দেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দেয় আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। কারণ দর্শানো হয়, পুলিশ তাদের জানিয়েছে, ওই তরুণীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে। সেটি বিচারাধীন। ফলে ‘পিসিসি’ দেওয়া যাবে না। ঘটনাক্রমে শিয়ালদহ আদালতের দ্বারস্থ হন তরুণী। তারা প্রথমে দিতে রাজি না হলেও পরে হাই কোর্টের নির্দেশে বিচারক (শিয়ালদহ আদালতের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট) একটি নির্দেশনামায় জানিয়ে দেন, ওই তরুণীর বিদেশ যেতে কোনও বাধা নেই। কিন্তু তরুণীর অভিযোগ, এর পরেও পুলিশ বা পাসপোর্ট অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনও লাভ হয়নি। তারা বিচারকের নির্দেশনামা পেয়েও কোনও সদর্থক পদক্ষেপ করেনি। হাই কোর্টে তিনি দাবি করেছেন, তাঁর প্রেমিক আমেরিকায় থাকেন। সেখানে একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় চাকরি করেন। দু’জনে বিয়ে করবেন বলে স্থিরও করেন। দু’জনেই সেই চিন্তাভাবনা করে বাড়ির লোকেদের জানানোর সিদ্ধান্ত নেন। তাঁদের বিষয়টি জানানোও হয়। তরুণীর পরিবার এই বিয়েতে সম্মতি দিলেও তাঁর প্রেমিকের পরিবার আপত্তি জানায় বলে তরুণীর দাবি। প্রেমিকের বাড়ি থেকে জানানো হয় যে, ছেলের জন্য পাত্রী দেখা হয়ে গিয়েছে। সেই পাত্রীকেই বিয়ে করবে ওই যুবক। কিন্তু পরিবারের পছন্দের পাত্রীকে বিয়ে করতে রাজি হননি তরুণীর প্রেমিক। তিনিও বাড়িতে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, বিয়ে করলে তাঁর প্রেমিকাকেই করবেন।
অন্য দিকে, ওই যুবকের জন্য যে পাত্রী দেখা হয়েছিল তাঁর বাড়ি বিহারে। গত বছরের ১৭ জানুয়ারি ওই পাত্রী বিহার থেকে এসে যুবকের প্রেমিকা এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে চুরি ও মারধরের মামলা করেন বেনিয়াপুকুর থানায়। মামলাটি শিয়ালদহ কোর্টে ওঠে। গত বছরের অক্টোবরে তরুণী এবং তাঁর পরিবারকে বিনা শর্তে জামিন দেয় আদালত। তার পরই আমেরিকার ভিসার জন্য আবেদন করেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy