Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Justice Rajasekhar Mantha

বিচার প্রক্রিয়ায় বাধা! আদালত অবমাননার রুল জারি করলেন বিচারপতি মান্থা

সোমবার থেকেই হাই কোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন আইনজীবীদের একাংশ। যা মঙ্গলবারও সমানে চলেছে। এমনকি, বিচারপতির এজলাস বয়কটেরও ডাক দিয়েছিলেন এই আইনজীবীরা।

মঙ্গলবারই আইনজীবীদের একাংশ হাই কোর্টের গণ্ডগোল নিয়ে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

মঙ্গলবারই আইনজীবীদের একাংশ হাই কোর্টের গণ্ডগোল নিয়ে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২৩ ১৬:০৮
Share: Save:

তাঁর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়ে বিচারপ্রক্রিয়ায় বাধা দিচ্ছেন আইনজীবীদের একাংশ। এই মর্মে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা বিক্ষোভকারী আইনজীবীদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করলেন। স্বতঃপ্রণোদিত মামলাটির শুনানি হবে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চে।

সোমবার থেকেই হাই কোর্টের বিচারপতি মান্থার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন আইনজীবীদের একাংশ। এই মুহূর্তে বিচারপতি মান্থার বিচারাধীন রাজ্যের বেশ কয়েকটি মামলা। তার অনেকগুলি আবার গুরুত্বপূর্ণও। এই পরিস্থিতিতে আদালত চত্বরে বিচারপতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখানোয় সোমবার ৪০০টি মামলার বিচারপ্রক্রিয়া থমকে যায়। কারণ ১০০টি মামলার আইনজীবীই এসে পৌঁছননি বিচারপতির এজলাসে। মঙ্গলবারও প্রায় একই অবস্থা হয়। সেই প্রেক্ষিতেই আদালতের কাজে বাধা সৃষ্টির অভিযোগ আনেন বিচারপতি মান্থা।

উল্লেখ্য, সোমবার বিচারপতির বিরুদ্ধে আইনজীবীদের বিক্ষোভ একটা সময়ে হাতাহাতির পর্যায়ে পৌঁছয়। পাশাপাশি, তাঁর নামে পোস্টারও পড়ে। সেই পোস্টারের বক্তব্য ছিল— ‘‘বিচারপতি মান্থা বিচারপ্রক্রিয়ার কলঙ্ক।’’ যদিও কেন এই অভিযোগ তা স্পষ্ট নয় পোস্টারে। কারা সেই পোস্টার দিয়েছিল তা-ও জানা যায়নি । এর পরে মঙ্গলবার আইনজীবীদের সংগঠন বার অ্যাসোসিয়েশনের বেশ কয়েক জন সদস্য বিচারপতি মান্থার এজলাস বয়কটেরও ডাক দেন। একটি প্রস্তাব এনে বিচারপতির এজলাসে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। যা নিয়ে মঙ্গলবার সকাল থেকে হাই কোর্ট চত্বরে গণ্ডগোল শুরু হয়।

মঙ্গলবার, এ ব্যাপারে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করার প্রস্তাব দেন হাইকোর্টের কয়েক জন আইনজীবীই। বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, সপ্তাংশু বসুর মতো আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, ‘‘যা হচ্ছে তা ভাল হচ্ছে না। বিষয়টি নিন্দনীয়। এ ব্যাপারে আদালত অবমাননার রুল জারি করে বিক্ষোভকারীদের কাছে জবাব চাওয়া উচিত।’’ বিকাশের যুক্তি, ‘‘কোর্ট রুম বন্ধ করে দেওয়া আদালতের অবমাননা। বিচারপতির বাসভবনের সামনে পোষ্টার দেওয়াও অপরাধ।’’ এই সব কাজ বিচার প্রক্রিয়ায় বাধা দিচ্ছে জানিয়ে আইনজীবীরা বলেন, এজলাস বয়কটের পাশাপাশি পোস্টার দেওয়ার ঘটনাও মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হোক। আবার কেন্দ্রের ডেপুটি সলিসিটর জেনারেল বিল্বদল ভট্টাচার্য কেন্দ্রীয় বাহিনী এনে বিক্ষোভ থামানোর প্রস্তাবও দেন। বিল্বদল বলেন, ‘‘আদালত চাইলে তিনি সেই ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন।’’ কিন্তু হাই কোর্ট তখনই এ বিষয়ে কোনও মতামত জানায়নি। বরং আদালত কক্ষে বিক্ষোভরত আইনজীবীদের ধমক দিয়ে সাবধান করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘এই ঘটনা রেকর্ড করতে বাধ্য করবেন না। কারণ সেটা হলে আপনাদের জন্য ভাল হবে না।’’ আদালতে এই সমস্ত যুক্তি তর্কের পরেই স্বতঃপ্রণোদিত আদালত অবমাননার রুল জারি করেন বিচারপতি মান্থা।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার সকাল থেকে এই বিক্ষোভকারী আইনজীবীরা বিচারপতি মান্থার এজলাসে যাননি। কাউকে যেতেও দেননি। শেষে মামলার শুনানি থমকে যাওয়ায় একটা সময় বিচারপতি মান্থা তাঁর এজলাসের বাইরে পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশ দেন, যাতে কেউ যেন তাঁর এজলাসে ঢুকতে বাধা না পান। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি হয়নি। এর পরই বিচারপ্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেন বিচারপতি মান্থা।

অন্য দিকে, বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাস বয়কটের ঘটনায় প্রধান বিচারপতি শ্রীপ্রকাশ শ্রীবাস্তব কাছে দুঃখপ্রকাশ করেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। তিনি প্রধান বিচারপতির এজলাসে গিয়ে বলেন, যা ঘটেছে তাতে আমি লজ্জিত। এটা দুঃখজনক। জবাবে প্রধান বিচারপতি তাঁকে জানিয়েছেন এই বিষয়ে আগেই সংগঠিত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE