প্রতীকী ছবি।
টানা বৃষ্টিতে গুদামে জমা জল পেরিয়েই সোমবার সকালে শৌচাগারে যাচ্ছিলেন বছর পঁয়তাল্লিশের সীতাকান্ত রাও। ওই জমা জলে হঠাৎই পড়ে যান তিনি। এলাকার বাসিন্দারা ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, জলে ডুবে থাকা বিদ্যুতের তার থেকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে সীতাকান্তের মৃত্যু হয়েছে। তাঁকে নিয়ে গত তিন দিনের টানা বর্ষণে জমা জলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ঘটনায় শহরে চার জনের মৃত্যু হল বলে অভিযোগ। যদিও পুলিশ জানিয়েছে, ময়না-তদন্তের পরেই সীতাকান্তের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
এ দিন ওই ঘটনা ঘটেছে খিদিরপুরের সত্য ডাক্তার রোডের একটি গুদামে। পুলিশ জানিয়েছে, সীতাকান্তের বাড়ি ওড়িশার জাজপুরে। তিনি দূরপাল্লার রুটের বাসচালক ছিলেন। কলকাতা থেকে ওড়িশার সিংপুর রুটে বাস চালাতেন তিনি। স্থানীয়েরা জানিয়েছেন, রোজকার মতো রবিবার রাতে তিনি বাস নিয়ে কলকাতায় এসে বাসটিকে সত্য ডাক্তার রোডের ওই গুদামে গ্যারাজ করেন। গুদামেই রাত্রিবাস করতেন সীতাকান্ত। তিনি যে বাস চালাতেন সেটির খালাসি অরুণকুমার সোয়াইন বলেন, ‘‘আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে ও শৌচাগারে যায়। তার কিছু ক্ষণের মধ্যে আমিও শৌচাগারে যাওয়ার সময়ে দেখি ও জলের মধ্যে পড়ে রয়েছে।’’ অরুণ জানান, সীতাকান্তের দেহটি যেখানে পড়েছিল, তার কাছেই ছিল জলের একটি পাম্প। ওই পাম্পটিও জলে ডুবে ছিল। ফলে তাঁর মনে হয় হয়তো বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছেন সীতাকান্ত। তাই তিনি চিৎকার করে আশপাশের লোকজন জড়ো করে আগে গুদামের বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন করেন। তার পরে সীতাকান্তকে জল থেকে উদ্ধার করেন।
খিদিরপুরের ওই এলাকাটিতে প্রতি বছরই জল জমে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। কলকাতা পুরসভা বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে জানিয়েছে, ওই সব এলাকার জলযন্ত্রণা পুরোপুরি ঘুচতে আরও দু’বছর সময় লাগবে। জায়গাটি খিদিরপুরের ভূকৈলাস রোড এলাকায়। গত তিন দিন ধরে সেখানে জল জমে থাকার কারণ হিসেবে সোমবার কলকাতা পুরসভার নিকাশি দফতরের মেয়র পারিষদ তারক সিংহ জানান, ওই এলাকায় একটি নিকাশি নালা রয়েছে প্রায় দেড় কিলোমিটার জুড়ে। প্রায় ১২ ফুট চওড়া এবং ১৪ ফুট গভীর নালায় ভর্তি রয়েছে কাদা-মাটি। মাত্র ৬ ইঞ্চি গভীরতার মধ্যে দিয়ে জল যাচ্ছে। নালাটির সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। কাজ শেষ হতে দু’ বছর লাগবে। ফলে ভূকৈলাস রোড, রামকমল স্ট্রিট, রামনাথ পার্ক এলাকায় বৃষ্টি হলেই রাস্তায় জল উপচে যাচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, সীতাকান্তের দেহ ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে। সীতাকান্তের মৃত্যুর পরে ওড়িশায় তাঁর পরিবারকে খবর পাঠিয়েছে পুলিশ। সীতাকান্ত যে বাসটি চালাতেন সেটির খালাসি অরুণও থাকেন ওড়িশায়। তিনি বলেন, ‘‘সীতাকান্তের উপার্জনের উপরেই তাঁর পরিবার নির্ভরশীল। এ বার ওদের কী ভাবে চলবে কে জানে।’’
এলাকার বাসিন্দারা জানান, জলের পাম্পের কাছেই রয়েছে ৪৪০ ভোল্টের ট্রান্সফর্মার। তাঁদের অভিযোগ, সেটির থেকে আসা পাম্পের বিদ্যুতের লাইনে কোনও রকম গন্ডগোল থেকেই ওই দুর্ঘটনা ঘটে। তাঁরা জানান, অতীতেও ওই গুদামে ট্রান্সফর্মার থেকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে এ রকম বড় বিপদ হয়নি। গত তিন দিন ধরে টানা বৃষ্টিতে ট্রান্সফর্মারটিও জলে অর্ধেক ডুবে ছিল বলে অভিযোগ। স্থানীয়দের দাবি, বিপজ্জনক ওই ট্রান্সফর্মারের কথা তাঁরা সিইএসসিকেও জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোনও ফল হয়নি। যদিও সিইএসসি-র এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই ট্রান্সফর্মার নিয়ে কোনও অভিযোগ গত তিন দিনে আমাদের কাছে আসেনি। ট্রান্সর্ফমারে কোনও যান্ত্রিক গোলযোগ আছে, এ রকম কোনও অভিযোগও আমাদের কাছে নেই। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার কারণেই ওই ব্যক্তির মৃত্যু ঘটেছে কি না, তা পুলিশই বলতে পারবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy