হুল্লোড়: বিশ্বকাপ নিয়ে কচিকাঁচাদের উচ্ছ্বাস। সোমবার, কুমোরটুলিতে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
‘টিম যতই স্ট্রং হোক, শিল্ড গ্রামের বাইরে যাচ্ছে না। যাবে না!’
বিপক্ষ সর্বমঙ্গলা স্পোটিং ক্লাবের সঙ্গে লড়াইয়ে নামার আগেই ঘরোয়া আড্ডায় এমন দাবি তুলেছিলেন হাড়ভাঙার জমিদার গোবর্ধন চৌধুরী। তাতে কিঞ্চিৎ আপত্তি জানিয়ে গাঁয়ের হেডমাস্টার বলেছিলেন, ‘গায়ের জোরে তো শিল্ড রাখা যায় না গোবর।’
‘ধন্যি মেয়ে’র গোবরবাবুর মতোই ‘বিশ্বকাপ’-কে কোনও মতেই আর হাতছাড়া করতে চান না শহর কলকাতা থেকে শহরতলির ব্রাজিল সমর্থকেরা। তাঁদের মনের বাসনা, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, পর্তুগাল ও স্পেন-এর মতো চারটি ‘ভাল’ দল ফুটবল মহারণের ময়দান থেকে ছিটকে যাওয়ার পরে বিশ্বকাপ আসুক নেমারের হাতেই। আর তাই সোমবার সকাল থেকেই আশায় বুক বেঁধেছেন নেমার ভক্তেরা।
কেউ টেনশনে দুপুরের ভাতটাও ঠিক মতো খাননি, কেউ আবার তড়িঘড়ি অফিস থেকে বাড়ি ফেরার আগে পাড়ার মন্দিরে প্রসাদ চড়িয়েছেন। কোনও পাড়ায় আবার প্রিয় দল জিতলেই হাঁড়িতে হলুদ বেশি দিয়ে মাংস রাঁধার তোড়জোড় করা রয়েছে। সিনেমায় সর্বমঙ্গলা দলের খেলোয়াড় বগলার সতীর্থ তথা ফরোয়ার্ড খেলা অশোক কর অবশ্য নিশ্চিত, মেক্সিকোকে ২ গোল দেবেই নেমারের দল। হাওড়ার হালদার পাড়ার বাসিন্দা অশোকবাবু বলেন, ‘‘মনে একটা টেনশন থাকলেও, ব্রাজিলের জয়ের বিষয়ে প্রায় নিশ্চিতই বলা চলে।’’
বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও মনের দিক থেকে এখনও নিজেকে ‘স্পোর্টসম্যান’ বলেই ভাবেন অশোকবাবু। ব্রাজিলের অন্ধ ভক্ত ছেলে অরুণাভ আগামী ৪ জুলাই খেলা দেখতে রাশিয়া পাড়ি দেবেন, এতে বেজায় খুশি ‘ধন্যি মেয়ে’র ওই অভিনেতা। অরুণাভ বলেন, ‘‘ফাইনাল দেখে তবেই ফিরব। আশা করছি ব্রাজিলের হাতে বিশ্বকাপ উঠছে এটা মোবাইলে বন্দি করে আনতে পারব।’’ নিজের পুরো বাড়িই সবুজ-হলুদে সাজিয়ে তুলেছেন বাগবাজারের হৃষিকেশ ঘোষ। সার্বিয়াকে হারানোর পরেই বাজার থেকে খুঁজে ব্রাজিলের জার্সির রঙের মোবাইল কভার নিয়ে এনেছেন তিনি। বললেন, ‘‘আগের দিন যেখানে বসে খেলা দেখেছি, সেখানেই বসে দেখব। টিভির গায়ে জড়িয়ে রাখব হলুদ-সবুজ পতাকা।’’
আর্জেন্টিনা, পর্তুগালের বিদায়ের পরেই ধর্মতলার বাজারেও চাহিদা বেড়েছে হলুদ-সবুজ পতাকা থেকে জার্সির। ব্যবসায়ী এম রহমানের কথায়, ‘‘আগে থেকেই ব্রাজিলের জার্সির চাহিদা বেশি ছিল। এখনও তো আরও বেড়েছে। প্রায় পাওয়াই যাচ্ছে না।’’ রবিবার সকাল থেকেই সরকারি ভবন ছাড়া আর সর্বত্রই সরে গিয়েছে আকাশি-সাদা রং। শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ আরও বেশি করে হলুদ সবুজ, নেমারের কাট আউট, পতাকায় ছেয়ে গিয়েছে।
এমনকি সপরিবার দিঘা বেড়াতে গেলেও ব্রাজিলের পতাকা নিতে ভোলেননি এয়ারপোর্ট এলাকার একটি নামী রেস্তরাঁর শেফ আবিরলাল চট্টরাজ। বছর পঁয়ত্রিশের ওই যুবকের কথায়, ‘‘ঘুরতে এসেছি তো কী হয়েছে। খেলা দেখতেই হবে। ব্রাজিলের ঢেউ আছড়ে পড়বে মেক্সিকোয়।’’ আর সেই ঢেউ আছড়ে পড়া ভাল ভাবে দেখতে ৫৬ ইঞ্চি এলইডি স্ক্রিন পাড়ার মাঠে বসিয়েছেন হাওড়া পুরসভার মেয়র পারিষদ শ্যামল মিত্র। তাঁর ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের উমেশ ব্যানার্জি লেন, ধর্মতলা লেন জুড়ে শুধু নেমারের ছবি, কাট আউট। সার্বিয়াকে হারিয়ে ব্রাজিলের জয় আসতেই এলাকায় রসগোল্লা বিলিয়েছিলেন শ্যামল। এ দিন মাংসের আয়োজন রয়েছে বলেই জানালেন তিনি। ব্রাজিলের জয়ের উন্মাদনায় ভাসছেন লেকটাউনের বাসিন্দা মন্দিরা দেবনাথ। একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্মী ওই তরুণী রবিবার দুপুরেই পৌঁছে গিয়েছিলেন পরিচিত মেকআপ আর্টিস্টের কাছে। প্রিয় দলের হলুদ-সবুজ রঙে সেজে নিয়েছিলেন তিনি। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে সেই সাজে ঘুরে বেরিয়েছেন ভিক্টোরিয়া থেকে পার্ক স্ট্রিট। রাস্তায় ব্রাজিল ভক্তদের সঙ্গে তুলেছেন নিজস্বী। আর সোমবার অফিস গিয়েও বিকেল হতেই বেরিয়ে পরেছেন বাড়ির পথে। বললেন, ‘‘শিল্ড থাকবে আমাদের হাতেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy