Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

৫০ বছর পরে ফের মেট্রোর জন্য ঘরহারা

দুই সময়েরই সাক্ষী ১৩এ দুর্গা পিতুরি লেনের বাসিন্দা জয়ন্ত শীল, আপাতত সপরিবার চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ সংলগ্ন চাঁদনি চকের হোটেলে থাকছেন।

উদ্বাস্তু: বাড়ি থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে বেরিয়ে আসছেন এক বাসিন্দা। বুধবার, দুর্গা পিতুরি লেনে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

উদ্বাস্তু: বাড়ি থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে বেরিয়ে আসছেন এক বাসিন্দা। বুধবার, দুর্গা পিতুরি লেনে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

দীক্ষা ভুঁইয়া
শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:২৯
Share: Save:

সে বার মেট্রো কেড়েছিল জমি-বাড়ি। এ বার মেট্রো কেড়ে নিল আশ্রয়, ব্যবসা এবং সঞ্চয়। মাঝে পেরিয়েছে পঞ্চাশ বছর।

দুই সময়েরই সাক্ষী ১৩এ দুর্গা পিতুরি লেনের বাসিন্দা জয়ন্ত শীল, আপাতত সপরিবার চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ সংলগ্ন চাঁদনি চকের হোটেলে থাকছেন। বদ্ধ ঘরের দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে জয়ন্তবাবু উদাস ভাবে বলেন, ‘‘এই প্রথম নয়। কলকাতায় টালিগঞ্জ থেকে দমদম পর্যন্ত মেট্রো রেল তৈরির সময়েই ১৯৬৯ সালে হারাতে হয়েছিল জমি-বাড়ি। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ এবং বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের সংযোগস্থলে সেন্ট্রাল মেট্রো স্টেশনের জন্য অনেক পরিবারকেই জায়গা ছেড়ে দিতে হয়েছিল। তাদের মধ্যে ছিল শীল পরিবারেরও জমি-বাড়ি। জয়ন্তবাবুর বাবা বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত নিতাইচাঁদ শীলের জমিও ছিল সেই তালিকায়। সরকারি প্রকল্পের জন্য সে সব ছেড়ে দিয়েছিলেন তাঁরা।

জয়ন্তবাবুর দাবি, সে বার বাড়ি-জমি বাবদ ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে তাঁদের বিস্তর কাঠখড় পোড়াতে হয়। অবশেষে ১৯৯৯ সালে জয়ন্তবাবুর বোনের বিয়ের সময়ে ক্ষতিপূরণের টাকা মেলে। মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তিরিশ বছর লড়াই চালিয়ে প্রায় ১৩ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলেন তাঁর বাবা।

২০১৯ সালের ৩১ অগস্ট। গত শনিবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ আচমকা কম্পন অনুভব করেন বাসিন্দারা। এর পরেই ১৩এ দুর্গা পিতুরি লেনের বাসিন্দা জয়ন্ত শীলের দু’শো বছরের পুরনো বাড়ির দেওয়াল ফাটল দেখা গেল। সঙ্গে সঙ্গে মেঝেতেও গভীর ফাটল। রাতের মধ্যেই সেই ফাটল বাড়তে থাকে। ভেঙে পড়তে থাকে ছাদের চাঙড়। তার পরেও বাড়ির খাঁচাটুকু দাঁড়িয়ে ছিল। বাড়ির একতলায় গত ২৩ বছর ধরে ছাপাখানার ব্যবসা ছিল জয়ন্তবাবুর।

মঙ্গলবার সকালে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে খাঁচাটুকু। সেই সঙ্গে শেষ হয়ে যায় কাগজ এবং গুরুত্বপূর্ণ নথি পাওয়ার আশা। শেষ হয়ে গিয়েছে ব্যবসাও। গলা প্রায় বুজে যাওয়া অবস্থায় জয়ন্তবাবু বলেন, ‘‘মেট্রো আমাদের পরিবারের পিছু ছাড়ছে না। এক বার বাড়ি-জমি নিল। এ বার সব কেড়ে নিল! পার্থক্য একটাই। সে বার আগে থেকে বলে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জমি নিয়েছিলেন। এ বার সময়টুকুও পাইনি।’’ তাঁর দাবি, বছরখানেক আগে যখন মেট্রোর তরফে মাপজোক করে ছবি তুলতে আধিকারিকেরা আসেন, তখন তিনি বারবার জানতে চেয়েছিলেন, তাঁদের সরতে হবে কি না। মেট্রোর তরফে জানানো হয়, মাটির অনেক নীচ দিয়ে সুড়ঙ্গ হবে। উপরে ক্ষতি হবে না। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘মেট্রো আগাম বলে রাখলে, সব সরিয়ে নিতে পারতাম।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Bowbazar Building Collapse Kolkata Metro
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy