Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

ব্যাঘ্রচর্মেই বেঁচে রইল পূর্বপুরুষের স্মৃতি

টিভি ফ্রিজ, খাট— সবই ছিল। প্রয়োজনীয় নথিপত্র, টাকা-পয়সা ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী তিনি দু’টি ব্যাগে ভরে নেন। তার পরে হাতে তুলে নেন তাঁর সব চেয়ে পছন্দের বস্তুটি।

উদ্ধার হওয়া সেই রয়্যাল বেঙ্গলের চামড়া। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

উদ্ধার হওয়া সেই রয়্যাল বেঙ্গলের চামড়া। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:৪০
Share: Save:

উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া একটি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের চামড়া। আফশোস আর হতাশার পরিবেশেও বৌবাজারের দুর্গা পিতুরি লেনে সোমবার সেই ব্যাঘ্রচর্ম নিয়ে তৈরি হল কৌতূহল। হেলে পড়া বাড়ির ভিতরে ঢুকে পূর্বপুরুষের স্মৃতি পূর্ণবয়স্ক সেই রয়্যাল বেঙ্গলের চামড়া ও মুখ বার করে আনতে পেরে বেজায় স্বস্তিতে দুর্গা পিতুরির বাসিন্দা দিলীপ লাহা।

ওই বাসিন্দা জানান, মেট্রো জানিয়েছিল, সোমবার থেকে দুর্গা পিতুরি লেনের বিপজ্জনক ভাবে হেলে পড়া কয়েকটি বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু হবে। দিলীপবাবুদের ১১/১ নম্বর ঠিকানার তেতলা বাড়িটিও সেই তালিকায় ছিল। বাড়ি ভাঙার আগে দিলীপবাবুদের সোমবার সকালে কিছু ক্ষণের জন্য বাড়িতে ঢোকার অনুমতি দিয়েছিল মেট্রো। তিনি বলেন, ‘‘গত কয়েক দিন ধরে বাড়ির বাইরে। আজ যখন বাড়িতে ঢুকছি, তখন সেখানে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর লোকজনও ঢুকতে ভয় পাচ্ছিলেন। সাহস করে আমিই ঘরে ঢুকে পড়ি। দেখি ঘরগুলি ভেঙে পড়েনি ঠিকই, তবে বাড়িটি হেলে রয়েছে। বুঝতে পারি, খুব কম সময়ের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র নিয়ে নিতে হবে। ’’

তিনি জানান, বাড়িতে ঢুকে নানা জিনিসের মধ্যে কী নেবেন প্রথমে বুঝে উঠতে পারছিলেন না। টিভি ফ্রিজ, খাট— সবই ছিল। প্রয়োজনীয় নথিপত্র, টাকা-পয়সা ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী তিনি দু’টি ব্যাগে ভরে নেন। তার পরে হাতে তুলে নেন তাঁর সব চেয়ে পছন্দের বস্তুটি। দেওয়ালে টাঙানো সেই রয়্যাল বেঙ্গলের চামড়া।

দিলীপবাবু জানান, ওই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের চামড়া ও মুখ কয়েকশো বছরের পুরনো। তাঁদের কোনও পূর্বপুরুষকে কোনও এক রাজা নাকি সেটি উপহার দিয়েছিলেন। ছোট থেকে ঘরের দেওয়ালে তিনি ওই বাঘের চামড়া ঝুলতে দেখেছেন। দিলীপবাবু বলেন, ‘‘পূর্বপুরুষের ওই স্মৃতি কোনও ভাবেই ধ্বংসস্তূপের নীচে হারিয়ে যেতে দিতে চাইনি। ঠিক করেছিলাম, জীবন বিপন্ন

করেও ওটা নিয়ে আসবই। ব্যাগে করে কিছু শ্বেতপাথরের বাসনপত্রও বার করে এনেছি।’’

দিলীপবাবুর তিন শরিকও থাকেন ওই তেতলা বাড়িতে। ফুটপাতেই একটি চেয়ারে বসেছিলেন বাড়িরই দুই মহিলা সোমা লাহা ও অঞ্জলি লাহা। সোমাদেবী বলেন, ‘‘কত দুষ্প্রাপ্য, প্রাচীন জিনিসপত্র রয়ে গেল। বাড়ি ফের তৈরি হবে হয়তো। কিন্তু ওই সব জিনিসপত্র কিছুই আর ফিরে পাব না। সব ওই ধ্বংসস্তূপের নীচে হারিয়ে যাবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy