বাড়ি খালি করে দিচ্ছেন গৌর দে লেনের বাসিন্দারা। নিজস্ব চিত্র
বৌবাজার বিপর্যয়ের ঘটনা পাল্টে দিয়েছে ভাড়াটে-মালিক সমীকরণও। এক দিকে মালিকপক্ষ, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে চাইছিলেন অল্প ভাড়ায় থাকা ভাড়াটেরা হয় উঠে যান, নয়তো ভাড়া বাড়ান। এই বিপর্যয়ে ভোগান্তি থাকলেও বাড়ি যে ভাড়াটেশূন্য হচ্ছে, তা ভেবেই এখন ‘স্বস্তির শ্বাস’ ফেলছেন তাঁদের অনেকে। অন্য দিকে, ভাড়াটেপক্ষ ভুগছেন ঘর ফিরে না পাওয়ার আশঙ্কায়। এমনকি, লিখিত প্রতিশ্রুতি না পেলে বাড়ি ছাড়বেন না বলে বৃহস্পতিবারই রাস্তায় বসে পড়েন তাঁদের অনেকে! পুনর্বাসনের সময়ে প্রশাসন যেন তাঁদের কথাও মাথায় রাখে, এটাই এখন ওই ভাড়াটেদের অন্যতম দাবি।
ওই এলাকার দীর্ঘদিনের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, দুর্গা পিতুরি লেনের অন্তত ১৫টি বাড়িতে ৪০ ঘর ভাড়াটে থাকেন। সেকরাপাড়া লেনে আবার সোনার কারবার, অন্যান্য দোকান ও ভাড়া বাড়ি মিলিয়ে আড়াইশোরও বেশি ঘর ভাড়ায় দেওয়া। একই অবস্থা পাশের গৌর দে লেনেরও। সেখানে ৯০ ঘর ভাড়াটে রয়েছেন। বুধবার রাত থেকেই গৌর দে লেনের বাড়িগুলি ফাঁকা করানোর কাজ শুরু হয়েছে। এ দিন সকালে সেখানকার ভাড়াটেদের অনেকেই বৌবাজারে রাস্তায় বসে পড়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। সৌম্য হাজরা নামে তাঁদেরই এক জন বললেন, ‘‘বাড়ির বদলে বাড়ি পাবেন বাড়িওয়ালা। টাকাও হয়তো তাঁরাই পাবেন। তা হলে আমাদের কী হবে? মেট্রো কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লিখিত আশ্বাস না পেলে আমরা জায়গা ছাড়ব না।’’ পরে অবশ্য পুলিশ ও মেট্রোর কর্মীরা বুঝিয়ে বিক্ষোভকারীদের তুলে দেন। মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ এ দিনই পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, এই মুহূর্তে বাড়িছাড়া প্রতিটি পরিবারকেই পাঁচ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
তবু এত সংশয় কেন? গৌর দে লেনের বর্ষীয়ান বাসিন্দা ও মালিকপক্ষের এক জন সুবীর আদকের বক্তব্য, ‘‘বেশির ভাগ ভাড়াই ১৫০-২০০ টাকার। বাড়িওয়ালারা বারবার বলেও ভাড়া বাড়াতে পারেননি। এর জন্য কত বাড়ির সংস্কারের কাজ যে বাড়িওয়ালারা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন, তার ঠিক নেই। এ বার বাড়িওয়ালাই বা ছাড়বেন কেন?’’ আর এক স্থানীয় বাসিন্দার বক্তব্য, ‘‘এমনও অনেক বাড়ি রয়েছে, যেখানে মালিক নিজে থাকতে পারেননি, প্রোমোটারকেও বিক্রি করতে পারেননি। ভাড়াটেরা দাবি করেছেন, নিজের জায়গার পাশাপাশি বহুতল তৈরির পরে একটি করে ফ্ল্যাটও বিনা পয়সায় তাঁদের দিতে হবে। সুতরাং, ভাড়াটে-মালিক ঝামেলা এ বার লাগল বলে।’’
বুধবারই যেমন দুর্গা পিতুরি লেনে নিজেদের হেলে পড়া বাড়িতে ঢোকার সময়ে মুখোমুখি হন রায় এবং বল্লভেরা। দীর্ঘদিন ধরেই বাড়িওয়ালা শ্যামল বল্লভের সঙ্গে মুখ দেখাদেখি নেই ভাড়াটে স্বর্ণকমল রায়ের। ভাড়া বাড়ানো ও চুক্তি নবীকরণ নিয়ে তাঁদের নানা বিবাদ। তবু রায়দের এগিয়ে দিয়ে শ্যামল বললেন, ‘‘আপনারাই আগে জিনিস বার করে আনুন। আমরা দাঁড়াচ্ছি।’’ স্বর্ণকমল বলেন, ‘‘তোমরা আগে গিয়ে নিয়ে এসো দাদা। কোন হোটেলে উঠেছ? সব মিটে গেলে আমাদের জায়গাটা নিয়ে একটু বসে কথা বলব। আগের ভাড়াটাই যদি রাখা যায়!’’ তাঁকে থামিয়ে দিয়ে শ্যামলবাবু বললেন, ‘‘অনেক দিন থেকে তোদের কাগজ নিয়ে বসতে বলেছি। শুনিসনি। এখন ও সব কথা নয়।’’
বৌবাজারের ওই এলাকা কলকাতা পুরসভার পাঁচ নম্বর বরোর অন্তর্গত। সংশ্লিষ্ট বরোর চেয়ারম্যান অপরাজিতা দাশগুপ্ত অবশ্য বলছেন, ‘‘সমস্যা হওয়ার কথা নয়। মুখ্যমন্ত্রী তো বলেই দিয়েছেন, যে যেখানে ছিলেন, সেখানেই জায়গা ফিরে পাবেন।’’
তবে ফিরবেন কি আগের ভাড়ার শর্তেই? সে প্রশ্নের অবশ্য উত্তর নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy