Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

জলে কি নতুন বিপদ বৌবাজারে

সুড়ঙ্গ বিপর্যয়ের জেরে দুর্গা পিতুরি লেন ও সেকরাপাড়া লেন সংলগ্ন এলাকায় জলের সংক্রমণ ঘটতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিলেন বিজ্ঞানীরা।

বৌবাজারের সেকরাপাড়া লেনে। ফাইল চিত্র।

বৌবাজারের সেকরাপাড়া লেনে। ফাইল চিত্র।

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:১৩
Share: Save:

বৌবাজারের বাসিন্দাদের জন্য কি নতুন কোনও বিপর্যয় অপেক্ষা করছে?

সুড়ঙ্গ বিপর্যয়ের জেরে দুর্গা পিতুরি লেন ও সেকরাপাড়া লেন সংলগ্ন এলাকায় জলের সংক্রমণ ঘটতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিলেন বিজ্ঞানীরা। বৌবাজারের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগের গবেষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, অ্যাকুইফার বা ভূগর্ভস্থ জলের ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়ায় ওই এলাকায় জলের মান ঠিক রয়েছে কি না, তা অবিলম্বে পরীক্ষা করে দেখা উচিত। কারণ, ভূগর্ভস্থ অ্যাকুইফারগুলির ‘আন্তঃসংযোগ’ থাকে। টানেল বোরিং মেশিনের (টিবিএম) আঘাতে সংশ্লিষ্ট অ্যাকুইফারটির স্থিতাবস্থা বিঘ্নিত হওয়ায় সমস্যা হতে পারে। কারণ, সেখান থেকে জল বেরিয়ে যাওয়ায় জলের নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। জলের স্বাভাবিক ধর্মই হল উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপের দিকে যাওয়া। ফলে অন্য যে সমস্ত অ্যাকুইফারে আর্সেনিক, ফ্লোরাইড-সহ অন্য কিছু ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে, তা ওই এলাকায় চলে আসতে পারে। তা ঘটলে ওই এলাকায় জলের সংক্রমণ ঘটে স্বাস্থ্যের স্থায়ী সমস্যা তৈরি হতে পারে বলে গবেষকদের আশঙ্কা।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগের এক গবেষক বলেন, ‘‘ধরা যাক, অ্যাকুইফার বা ভূগর্ভস্থ কয়েকটি পুকুর পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। একটি পুকুর থেকে জল বেরোনোর ফলে যে ফাঁকা স্থান তৈরি হল, অন্য পুকুরগুলি থেকে সেই জায়গায় জল আসা শুরু হল। এ বার অন্য পুকুরগুলিতে যদি আর্সেনিক, ফ্লোরাইডের মতো ক্ষতিকর উপাদান থাকে, তা হলে জলের গতিপথের সূত্র ধরেই তা প্রথম পুকুরে চলে আসবে। ওই গবেষকের কথায়, ‘‘এ ক্ষেত্রে তেমন হচ্ছে কি না, সেটাই সবচেয়ে বড় চিন্তা। কারণ, কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় আর্সেনিক, ফ্লোরাইডের প্রকোপ ক্রমশ বাড়ছে। এ বার ওই এলাকার জলে তা মিশে গেলে বড়সড় স্বাস্থ্য বিপর্যয় ঘটতে পারে।’’

গবেষকরা জানাচ্ছেন, সাধারণত খুব গভীরে স্থিত অ্যাকুইফারের মধ্যে আর্সেনিক বা দূষিত পদার্থ থাকে না। সেগুলি সবই থাকে ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি অ্যাকুইফারগুলির মধ্যে। আর যে অ্যাকুইফারটির ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে, সেটি ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি ছিল বলে গবেষকেরা জানাচ্ছেন।

ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট এলাকার ৫০ মিটারের জলের পাইপলাইনের সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছে পুরসভা। জলের সংক্রমণ ঠেকাতে পাইপলাইনের সংযোগ বন্ধের কাজ ঠিকমতো হয়েছে কি না, তা দেখতে পুর ইঞ্জিনিয়ারেরা রবিবারও পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। জল সরবরাহ দফতরের এক পদস্থ ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, ‘‘ওখানে পুরসভার তরফে পরিস্রুত পানীয় জল ব্যবহার করা হয়। এখনও পর্যন্ত সংক্রমণের পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তবে সংশ্লিষ্ট এলাকায় জল-পকেটগুলির অবস্থা অবশ্যই সমীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন।’’

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগের শিক্ষক তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ’-এর ডিরেক্টর পঙ্কজকুমার রায়-ও বলেন, ‘‘ওই এলাকায় জলের গুণমানে পরিবর্তন হয়েছে কি না, তা এখনও অজানা। কিন্তু যে ভাবে অ্যাকুইফারে জলের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়েছে, তাতে অবিলম্বে এলাকার জল-পকেটগুলির সমীক্ষা করা দরকার।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Metro East West Metro Landslide Aquifer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy