বইয়ে মগ্ন এই যমজ খুদে। কলকাতা বইমেলায়। ছবি: শৌভিক দে
বইপ্রেমীদের ‘দুগ্গা পুজো’য় অসুরের নাম লিঙ্ক বিভ্রাট!
ফলে, রবিবারের ভরা মেলায় মেয়ের সামনে অপ্রস্তুত বাবা শুশ্রূত সমাদ্দার। বাগুইআটি থেকে মেলায় ঢুকেছেন ৬০০ টাকা পকেটে। আশা ছিল, বাকিটা ‘প্লাস্টিক মানি’তে পুষিয়ে যাবে। মেয়ের ফরমায়েশে রবিনহুড আর রোয়াল্ড ডালের বই কেনার পরেই মজাটি টের পেলেন। ‘গাংচিল’ আর ‘প্রতিক্ষণ’-এর স্টলেও ডেবিট কার্ড এগিয়ে দিয়ে ‘হায়-হায়’ দশা! বেশির ভাগ স্টলেই যন্ত্র কাজ করছে না।
গাংচিল-এর অধীর বিশ্বাস বলছিলেন, ‘‘১৬-১৭ জনকে ফিরিয়ে দিতে হল। কত ঝামেলা করে মেশিন বসিয়ে এই হাল।’’ বড় প্রকাশকেরা অবশ্য একাধিক কার্ড যন্ত্র বসিয়ে খানিকটা ঝক্কি সামলেছে। বইমেলার উদ্যোক্তা গিল্ডের কর্তা ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘গিজগিজে ভিড়ে নেট কানেকশন ঢিলে হওয়ায় যত ঝামেলা। তবে ফোন লাইনের তার গুঁজে যে-সব মেশিন চলছে, তাতে সমস্যা কম!’’
বইমেলার প্রথম তিন দিন মেশিন ভোগায়নি বড় একটা। বরং নোট-বন্দির ধাক্কায় বইপাড়ার সাম্প্রতিক মন্দা কাটিয়ে মেলার মাঠে ভালই ব্যবসা জমেছিল বলে হাসছিলেন প্রকাশকেরা। রবিবার মেলার ‘বিগ ডে’তে সেই সব হাসি মিইয়ে গেল। বইমেলায় এটিএমে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েও তিরিক্ষে গাঁইগুঁই।
এই ডামাডোলেও অবশ্য দেখা গেল, হাঁটু সামলে ঠেলেঠুলে ‘ধানসিঁড়ি’র স্টলে পাকা চুল চশমা-নাকে প্রৌঢ়া। ’৭০-এর কবিদের সংকলন ‘বজ্রমানিক দিয়ে গাঁথা’, আর তরুণ কবি-কাম-বিজ্ঞানী রাকা দাশগুপ্তের দক্ষিণ কোরিয়াবাসের অভিজ্ঞতা ‘চেরিবসন্ত’ দেখতে দেখতে ভারী খুশি তিনি।
কার্ডে সড়গড় নয়, এমন কিছু দোকানে নিখরচায় ভার্চুয়াল ওয়ালেটের ব্যবস্থা করে দিয়েছে কয়েকটি সংস্থা। তাতে খুশি কৃত্তিবাস-এর কর্মকর্তা তথা কবি অংশুমান কর। তবে তাঁর মতে, ‘‘এই দু’হাজারি নোটের যুগে মেলার আসল ত্রাতা হল খুচরো।’’ একদা ঘরে-বাইরে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সহকারী ধনঞ্জয় পৈড়া তাঁর সারা বছরের জমানো খুচরো জড়ো করে স্টলের মুশকিল আসান হয়েছেন।
কৃত্তিবাস-এর বইমেলা সংখ্যায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের তিনটি দুর্লভ কবিতা পাণ্ডুলিপি সমেত ছাপা হয়েছে। স্বপন চক্রবর্তী ও চিন্ময় গুহের দু’টি সুনীল-স্মারক বক্তৃতাও রয়েছে তাতে। রিনা দেবের ‘হৃদয় সিঁচে’ ও অশোক দেবের ‘শঙ্কুমামার কাণ্ডকারখানা’ ইতিমধ্যে ব্রাত্য বসু প্রকাশ করেছেন। কিশোর ভারতীর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক-প্রকাশক তথা লেখক দীনেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের শতবর্ষের স্মৃতিতর্পণেও বিকেলটি স্মরণীয় হয়ে থাকল। প্রকাশক সবিতেন্দ্রনাথ রায়, সুধাংশু দে, লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদাররা কত পুরনো কথা বললেন। সন্ধ্যায় বাংলা রক ম্যাগাজিনের স্টলে আসর মাতালেন রূপম ইসলাম। দিনভর ধুলো আর গিজগিজে ভিড়।
বাঙালির সংস্কৃতি নিয়ে টুকরো লেখার বই ‘ওগো মায়া, ওগো বাতায়ন’ (খোয়াবনামা)-এ সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় যথার্থই লিখেছেন, কলকাতায় দু’ধরনের লোক। যাঁরা বইমেলায় যান, আর যাঁরা যান না!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy