—প্রতীকী ছবি
শীতের রোদ্দুর মেখে নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নিয়ে মেলা চত্বরে ঘোরাঘুরি। প্রকাশনা সংস্থার স্টলের সামনে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে পরিচিত কারও সঙ্গে অনেক দিন পরে দেখা হয়ে যাওয়া। আর প্রিয় লেখকদের কাউকে দেখতে পেয়ে তাঁর সই সংগ্রহ করতে পারলে তো ষোলো আনাই উসুল। করোনা অতিমারির দাপটে এ বার জানুয়ারি মাসে অন্তত কলকাতা বইমেলার এই সব চেনা দৃশ্যের দেখা মিলবে না। কারণ কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার আয়োজক পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ড মঙ্গলবার জানিয়ে দিয়েছে, নির্দিষ্ট সময়ে বইমেলা হচ্ছে না। পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে এবং দেশ-বিদেশের বিমান চলাচল শুরু হলে কলকাতা বইমেলা হবে। এই বছরই হয়তো মেলা হবে, তবে ঠিক কবে হবে তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।
গিল্ডের সদস্যরা মিলে এই সিদ্ধান্ত নিলেও মুষড়ে পড়েছেন বইপ্রেমীরা। হতাশ প্রকাশকেরাও। কিছু কিছু প্রকাশক মনে করছেন, ছোট করে হলেও বইমেলার আয়োজন করা যেতে পারত। তাঁদের প্রশ্ন, গঙ্গাসাগর মেলা হচ্ছে, কলকাতা শহরেই বিভিন্ন মেলা হচ্ছে, এমনকি জেলাগুলিতেও বইমেলা হচ্ছে, তা হলে কলকাতা বইমেলা স্থগিত রাখা হল কেন? তবে প্রকাশকদের একটা বড় অংশই অবশ্য অতিমারি পরিস্থিতিতে বইমেলা না করার পক্ষে। তাঁদের বক্তব্য, করোনার টিকা সাধারণের মধ্যে আসার পরেই বইমেলা হোক।
কলেজ স্ট্রিটের এক প্রকাশক অনিল আচার্য মনে করেন, কলকাতার অন্যান্য মেলার সঙ্গে বইমেলাকে এক কে দেখলে চলবে না। বইমেলায় রোজ লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়। ফলে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা সেখানে অনেক বেশি। তা ছাড়া, সল্টলেকের মতো জনবহুল এলাকায় বইমেলা করার পরে সেখানে সংক্রমণ বাড়লে তার দায় বর্তাবে আয়োজকদের উপরেই। অনিলবাবু বলেন, ‘‘এ বার বইমেলা পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঠিক। তবে আমরা একটি বিকল্প প্রস্তাবও দিয়েছি। ২৩ এপ্রিল বিশ্ব বই দিবস। ওই তারিখ থেকে সাত দিন কলেজ স্ট্রিটেই বিশ্ব বই দিবস উদ্যাপন করা হোক। সব প্রকাশনা সংস্থাকে সাজিয়ে, বইয়ে একটু বেশি ছাড় দিয়ে এই উৎসব করা যেতে পারে। তত দিনে করোনা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে বলেই আশা করা যায়। তখনই ঘোষণা করা হবে এই বছর বইমেলা কবে হবে।’’
তরুণ বিশ্বাস নামে এক প্রকাশক আবার জানালেন, তিনি রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন জেলার বইমেলায় অংশগ্রহণ করেছেন। সেখানে মানুষ করোনা-বিধি মেনেই বই কিনতে এসেছেন। তরুণবাবু বলেন, ‘‘তবে এ বার জানুয়ারিতে কোনও ভাবেই আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা করা যেত না। কিন্তু একটু ছোট পরিসরে বইমেলা করা যেতে পারত বলে আমার মনে হয়।’’
তবে জানুয়ারি মাসে বইমেলা হলে বই বিক্রি এবং নতুন বই প্রকাশের হার কেমন হত, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন আর এক প্রকাশক পার্থশঙ্কর বসু। পার্থবাবু বলেন, ‘‘প্রতি বছর এই সময়ে কত নতুন বইয়ের বিজ্ঞাপন বেরোয়। এ বার সেসব কোথায়? এই অতিমারির মধ্যে মানুষ কি আগের মতো ভিড় করে বইমেলায় আসতেন? স্টল দেওয়ার পরে বিক্রি না হলে তো প্রকাশকেরা আরও বেশি ক্ষতির মুখোমুখি হতেন।’’
পাঠকের কাছে নতুন বই পৌঁছে দেওয়ার অন্যতম বড় মাধ্যম হল বইমেলা। তাই স্বাস্থ্য-বিধি মেনে একটু ছোট পরিসরে নির্দিষ্ট সময়েই বইমেলা করার পক্ষপাতী ছিলেন বুলবুল ইসলাম নামে কলকাতার এক প্রকাশক। বুলবুলবাবু বলেন, ‘‘যদি বইমেলা পিছিয়ে গিয়ে বর্ষাকালে হয়, তখনই বা কত জন বইমেলায় আসবেন? বর্ষায় প্রকাশকেরা স্টল দিতে উৎসাহিত হবেন তো? ঠিক সময়ে বইমেলা না হওয়ায় ছোট প্রকাশকদেরই বেশি ক্ষতি হবে বলে মনে করছেন কলেজ স্ট্রিটের আর এক প্রকাশক সুব্রত দত্ত। তিনি বলেন, ‘‘প্রথম লকডাউনের ধাক্কা, তার পরে আমপানের জেরে ছোট প্রকাশকেরা এ বার এমনিতেই অনেক ক্ষতির সন্মুখীন হয়েছেন। বইমেলা না হওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ বাড়ল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy