হর্ষ ভলানি।
জামশেদপুরের এক ম্যানেজমেন্ট পড়ুয়ার রক্তাক্ত দেহ মিলল ধর্মতলার একটি হোটেলে। মৃতের নাম হর্ষ ভলানি (২৪)। তাঁর বাড়ি গুজরাতের রাজকোটে।
পুলিশ জানায়, জামশেদপুরের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমবিএ-র দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র হর্ষ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ ধর্মতলার ওই হোটেলে ওঠেন। শুক্রবার রাতে তাঁর বেরিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। সেই রাতে হর্ষের পরিবারের লোকেরা একাধিক বার ফোন করেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় ওই হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ফোন পেয়ে রাত দু’টো নাগাদ চারতলায় হর্ষের ঘরে যান হোটেলের কর্মীরা। ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে হোটেলের ঘরটি খুলে দেখা যায়, ভিতরে কেউ নেই। ঘর লাগোয়া বাথরুমের দরজাও ছিল ভিতর থেকে তালাবন্ধ। ভাঙা হয় সেই দরজা। তখন দেখা যায়, ভিতরে এক পাশে গলায় গভীর ক্ষত-সহ অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছেন হর্ষ। তাঁর পাশে পড়ে একটি ছুরি। রক্তে ভেসে যাচ্ছে গোটা বাথরুম। ওই ভাবে হর্ষকে পড়ে থাকতে দেখে নিউ মার্কেট থানায় খবর দেন হোটেলকর্মীরা। পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পুলিশ জানায়, প্রাথমিক ভাবে এটি আত্মহত্যার ঘটনা বলে মনে হলেও এই মৃত্যুর পিছনে অন্য কোনও রহস্য রয়েছে। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে শুরু হয়েছে তদন্ত।
কিন্তু সুদূর জামশেদপুরের একটি ম্যানেজমেন্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র কেনই বা কলকাতার এক নামী হোটেলে এসে আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন, সে বিষয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠে এসেছে। পুলিশ জানিয়েছে, হর্ষ আগেও দু’বার কলকাতায় এসেছেন। তবে এই মৃত্যুর পিছনে কোনও প্রেম ঘটিত কারণ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এ দিন বিকেলে জামশেদপুর থেকে হর্ষের দুই বন্ধু নিউ মার্কেট থানায় আসেন। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে মৃত্যুর কারণ জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। ওই যুবকের ফোনটি উদ্ধার করে কল ডিটেলস খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
মর্মান্তিক: থানায় হর্ষের (ডান দিকে) বাবা প্রভুদাস ভলানি। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র
শনিবার হোটেলের ঘরটি পরীক্ষা করেন ফরেন্সিক বিজ্ঞানীরা। কলকাতা পুলিশের মুখ্য ফরেন্সিক বিজ্ঞানী মীর ওয়াসিম রাজা বলেন, ‘‘হোটেলের ঘরটিতে এক জনই ছিলেন। গোট বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার তাপস দে এ দিন বলেন, ‘‘ওই যুবক বৃহস্পতিবার সকালে একাই হোটেলে উঠেছিলেন। হোটেলের যাবতীয় সিসি ক্যামেরার তথ্য আমরা পুলিশকে দিয়েছি।’’ এ দিন সন্ধ্যায় গুজরাত থেকে নিউ মার্কেট থানায় আসেন হর্ষের বাবা, পেশায় ব্যবসায়ী, প্রভুদাস মুলজিভাই ভলানি। তাঁদের দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। জামশেদপুরের ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে পুলিশের তরফে। পুলিশ জেনেছে, হর্ষ জামশেদপুরের ছাত্রাবাসে থাকতেন। বৃহস্পতিবার ওই ছাত্রাবাস থেকে বেরোনোর সময়ে খাতায় নিজের নাম না লিখে এক বন্ধুর নাম লিখেছিলেন তিনি।
হোটেল কর্তৃপক্ষ পুলিশকে জানান, হর্ষ বলেছিলেন ঘুরতে এসেছেন, তবে বৃহস্পতিবার সকালে হোটেলে ঢোকার পর থেকে আর বেরোননি। দরজায় ‘ডু নট ডিস্টার্ব’ বোর্ড ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। তদন্তকারীদের অনুমান, বৃহস্পতিবারই মৃত্যু হয় তাঁর। পুলিশ হোটেলের ঘর থেকে হর্ষের যে ব্যাগ ও ছুরি বাজেয়াপ্ত করেছে, দু’টিই নতুন। ব্যাগে মাথাব্যথার ট্যাবলেট পাওয়া গিয়েছে। হর্ষের মৃত্যুর খবর পেয়ে এ দিন বিকেলে ওড়িশা থেকে কলকাতায় ছুটে আসেন তাঁর আত্মীয় জগদীশ প্যাটেল। তিনি জানান, বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান হর্ষ ছোট থেকেই মেধাবী পড়ুয়া ছিলেন। খেলতেনও ভাল। তিনি বলেন, ‘‘হর্ষ কেন হঠাৎ আত্মহত্যা করবে, সেটাই আমরা বুঝতে পারছি না।’’ পুলিশ জানিয়েছে, মৃত্যুর কারণ জানতে দেহটি ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy