Advertisement
৩০ নভেম্বর ২০২৪
Death

‘হাজতে মৃত্যু’ বিজেপি কর্মীর, দেহ নিয়ে দিনভর টানাপড়েন শহরে

মদন ঘোড়ই নামে যে বিজেপি-কর্মীর মৃত্যু পুলিশ হেফাজতে হয়েছে বলে বিজেপি অভিযোগ করছে, তিনি পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুরের বাসিন্দা ছিলেন।

বৌবাজার মোড়ে পুলিশের সঙ্গে বচসা লকেটের। নিজস্ব চিত্র।

বৌবাজার মোড়ে পুলিশের সঙ্গে বচসা লকেটের। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২০ ২২:১৪
Share: Save:

পুলিশ হেফাজতে বিজেপি-কর্মীর মৃত্যুর অভিযোগ পূর্ব মেদিনীপুরে। আর সেই মৃতদেহ ঘিরে দিনভর প্রশাসন-বিজেপি টানাপড়েন কলকাতায়। এক দিকে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হল বিজেপি। সেই আর্জি মেনে কলকাতা হাইকোর্ট দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্তের নির্দেশও দিল। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানাল ডিভিশন বেঞ্চে। অন্য দিকে, দলীয় কর্মীর দেহ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির উদ্দেশে মিছিল শুরু করলেন বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু সে মিছিলকে বৌবাজার পেরতে দিল না পুলিশ।

মদন ঘোড়ই নামে যে বিজেপি-কর্মীর মৃত্যু পুলিশ হেফাজতে হয়েছে বলে বিজেপি অভিযোগ করছে, তিনি পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুরের বাসিন্দা ছিলেন। তাঁর মৃতদেহের ময়নাতদন্ত অবশ্য পূর্ব মেদিনীপুরে হয়নি। কলকাতায় এসএসকেএম হাসপাতালে তাঁর ময়নাতদন্ত করা হয়।

বিজেপি এই ময়নাতদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে তীব্র আপত্তি তুলতে শুরু করে। মদন ঘোড়ইয়ের পরিবারকে কিছুই না জানিয়ে তাঁর দেহ কলকাতায় নিয়ে আসা হয়েছে এবং ‘চুপিচুপি’ ময়না তদন্ত সেরে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ করতে শুরু করে মুরলীধর সেন লেন। শুক্রবার সকালে মামলা গড়ায় হাইকোর্ট পর্যন্ত। দলের রাজ্য কমিটির সদস্য শঙ্কুদেব পন্ডা এবং আইনি সেলের প্রধান ব্রজেশ ঝা-কে আইনি লড়াই সামলানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। দুপুরে আদালত রায় দেয় যে, মদন ঘোড়ইয়ের দেহের দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্ত করতে হবে।

শুধু নতুন করে ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিয়েই আদালত থামেনি। এসএসকেএমে আর নয়, এ বার ময়নাতদন্ত আর জি কর হাসপাতালে করতে হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। আর জি করে ময়নাতদন্ত বিভাগের প্রধানকেই সে কাজ করতে হবে বলেও হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়। আর জানানো হয় যে, পুরো ময়নাতদন্ত প্রক্রিয়ার ভিডিয়োগ্রাফিক রেকর্ডিং করতে হবে এবং ২১ অক্টোবর তা আদালতে জমা দিতে হবে।

আরও পড়ুন: নমনীয়তার ইঙ্গিত দিয়েও মিছিলে গরহাজির শুভ্রাংশু, রয়ে গেল জল্পনা

আদালতের এই নির্দেশ পেয়েই রাস্তায় নেমে পড়ে বিজেপি। মদন ঘোড়ইয়ের দেহ নিয়ে মিছিল শুরু হয় রাজ্য বিজেপির সদর দফতর থেকে। নেতৃত্বে রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ লকেট। মৃত কর্মীর দেহ নিয়ে কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে যাওয়া হবে বলে লকেট ঘোষণা করেন। বিজেপির এই মিছিলকে অবশ্য পুলিশ বৌবাজার মোড়েই আটকে দেয়। তাতে প্রথমে লকেটের সঙ্গে তীব্র বচসা শুরু হয় পুলিশের। তার পরে বৌবাজার মোড়ে রাস্তাতেই বসে পরেন লকেটরা। শুরু হয় অবস্থান বিক্ষোভ। তবে সে বিক্ষোভ আধ ঘণ্টা পরে তুলেও নেওয়া হয়।

লকেট আনন্দবাজার ডিজিটালকে বলেন, ‘‘আইনি লড়াইয়ে যে হেতু আমরা জয় পেয়েছি, সে হেতু আমরা অবস্থান বিক্ষোভ কিছু ক্ষণ পরে তুলে নিই। আমরা স্থির করি যে, শনিবার সকালে ময়নাতদন্ত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করব।’’ কিন্তু সে অপেক্ষা যে আরও অনেকটাই দীর্ঘায়িত হতে চলেছে, বিজেপি নেতা-নেত্রীরা তখন বুঝতে পারেননি। বৌবাজার থেকে অবস্থান উঠে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জানা যায়, দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্তের যে নির্দেশ হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ দিয়েছে, রাজ্য সরকার তাকে ডিভিশন বেঞ্চে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে।

আরও পড়ুন: সরকারি টাকায় পুজোর খরচ নয়, অনুদান মামলায় নির্দেশ হাইকোর্টের

রাতেই ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি হয়। নতুন করে ময়নাতদন্তের নির্দেশ স্থগিত হয় সেখানে। বিজেপি নেতা শঙ্কুদেব বলেন, ‘‘ডিভিশন বেঞ্চকে রাজ্য সরকার বলেছে যে, সরকার এখনই এই মামলার জন্য প্রস্তুত নয়। তাই বেঞ্চ সোমবার পর্যন্ত সরকারকে সময় দিয়েছে। সোমবার ফের শুনানি হবে। সে দিনই স্থির হবে যে, নতুন করে ময়নাতদন্ত হবে কি না। তত দিন পর্যন্ত মদন ঘোড়ইয়ের মৃতদেহ যথাযথ ভাবে সংরক্ষণ করার নির্দেশ আদালত দিয়েছে।’’

দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্ত আটকাতে যে ভাবে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছে রাজ্য, তাকে হাতিয়ার করে নিয়েছে বিজেপি। শঙ্কুর প্রশ্ন, ‘‘দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্তে এত আপত্তি কেন? যদি প্রথম ময়নাতদন্ত ঠিকঠাকই থাকে, তা হলে দ্বিতীয় বারেও একই রিপোর্ট আসবে। তা হলে রাজ্য সরকার এটা আটকাতে চাইছে কেন?’’ পুলিশ বা প্রশাসনের তরফে অবশ্য এ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া এ দিন দেওয়া হয়নি।

অন্য বিষয়গুলি:

Death BJP Calcutta High Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy