রবিকান্ত সিংহ। ছবি সংগৃহীত
বিজেপির নবান্ন অভিযানের দিন পুলিশ আধিকারিককে রাস্তায় ফেলে মারধর এবং পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগানোর ঘটনার তদন্তে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে কয়েক জনকে। সেই ধৃতদের মধ্যে তিন জন হলেন রবিকান্ত সিংহ এবং তাঁর সঙ্গী অনুপ সিংহ ও সাহিল রায়। যাঁদের মধ্যে সব থেকে চর্চিত নাম রবিকান্ত।
কে এই রবিকান্ত? পুলিশ আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, নিজেকে বিজেপি-র কলকাতা জেলার পদাধিকারী বলে দাবি করে থাকেন রবিকান্ত। গত পুরসভা নির্বাচনে এই রবিকান্তই বিজেপি-র টিকিটে বেলেঘাটা এলাকায় ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে লড়েছিলেন। কলকাতায় পুর ভোট শান্তিপূর্ণ হলেও ওই দিন তাল কেটেছিল বেলেঘাটার ওই ওয়ার্ডে। দু’-দু’বার বোমা পড়েছিল এলাকায়।
তদন্তকারীরা জেনেছেন, নবান্ন অভিযানের দিন একটি মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। হাওড়া পর্যন্ত না গেলেও বড়বাজার এলাকায় ঘুরে মিছিলের শেষে তাঁরা মহাত্মা গান্ধী রোড ও রবীন্দ্র সরণির সংযোগস্থলে জড়ো হন। সেখানেই কিছু ক্ষণ থাকার পরে আচমকা তাঁদের একটি দল মহাত্মা গান্ধী রোড ধরে ছুটতে শুরু করে। তত ক্ষণে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর ও একটি পিসিআর ভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ‘মার মার’ বলে সেই সময়ে রবিকান্তকে সঙ্গীদের উত্তেজিত করতে শোনা গিয়েছে বলেও দাবি। অভিযোগ, সেই প্ররোচনায় রাস্তায় নেমে পড়েন অনেকে। পতাকা লাগানো লাঠি, বাঁশ নিয়ে রবিকান্তের দল এক পুলিশকর্মীর উপরে চড়াও হয়। আত্মরক্ষার্থে তিনিও লাঠি চালান। তদন্তকারীদের দাবি, এর পরে দূরে দাঁড়ানো কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিকের দিকে নজর যায় রবিকান্তদের। অভিযোগ, বিজেপি-র পতাকা হাতে ওই আধিকারিককেও রবিকান্ত মারধর করেছিলেন। মাথায় হেলমেট পরা থাকলেও দেবজিৎ চট্টোপাধ্যায় নামে সেই পুলিশ আধিকারিকের হাতে আঘাত লাগে। ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, সেই অবস্থায় দেবজিৎ ছুটতে শুরু করলে সাদা পাঞ্জাবি পরা এক ব্যক্তি তাঁর কলার ধরে মারমুখী ভিড়ের সামনে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছেন। তদন্তকারীরা জেনেছেন, সাদা পাঞ্জাবি পরা ব্যক্তিটিও পূর্ব কলকাতার বাসিন্দা। দেবজিৎ পালাতে গেলে তাঁকে একটি পুলিশের ব্যারিকেডের সামনে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হয়। অভিযোগ, ধাক্কা মারেন রবিকান্তের ছায়াসঙ্গী, যিনি পাড়ায় নেটো নামে পরিচিতি। নেটো, রবিকান্ত ও অন্যরা দেবজিৎকে ফেলে মারধর করেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, পুরভোটে বোমা পড়েছিল শিয়ালদহের খন্না হাইস্কুলের সামনের রাস্তায়। যেখানে দেখা গিয়েছিল প্রার্থী রবিকান্তকে। তিনি দাবি করেন, তৃণমূলের গুন্ডারা ভোটারদের ওই বোমা ছুড়েছিল। ফের বোমা পড়ে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোডের টাকি স্কুলের সামনে। আহত হন তিন জন। এক ট্যাক্সিচালকের পায়ের পাতা বোমায় উড়ে যায়। সেখানেও রবিকান্তকে দেখা গিয়েছিল বলে অভিযোগ। তাঁর দাবি ছিল, তাঁকে মারতেই বোমা ছোড়া হয়েছে। দু’টি ঘটনায় ধৃতদের সঙ্গে রবিকান্তের যোগ মিলেছিল বলে দাবি পুলিশের।
এ দিকে, বিজেপির নবান্ন অভিযানের দিনে গোলমালের তদন্তে নেমে মঙ্গলবার রাত ও বুধবার সকাল থেকে বেলেঘাটা অঞ্চলে দফায় দফায় তল্লাশি চালায় পুলিশ। তল্লাশি মূলত চলেছে কলকাতা পুরসভার ৩৪, ৩৫ এবং ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে। রাজারহাট, নিউ টাউন ও উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গায় গুন্ডা দমন শাখার অফিসারেরা ছেয়ে গিয়েছেন। কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগানোয় রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার একটি দল। পুলিশ আধিকারিককে মারধরে জড়িত বেলেঘাটার একদল যুবক। যাঁদের নেতৃত্বে ছিলেন রবিকান্ত।
অভিযোগ প্রসঙ্গে রবিকান্তের পরিবারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে এক মহিলা বলেন, ‘‘রবিকান্ত যাদের সঙ্গে সে দিন মিছিলে গিয়েছিল, তারাই ঝামেলা করেছে। ছেলেটা ফেঁসে গিয়েছে।’’ কারা ছিল? মহিলা বলেন, ‘‘যারা ছিল, তাদের পুলিশ ধরেছে। বাকিরা এলাকা ছাড়া।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy