E-Paper

টাকা চেয়েও না পাওয়ার আক্রোশে দিদিকে খুন, ধৃত মামাতো ভাই

তদন্তে নেমে পুলিশ রাতেই ঘটনাস্থল থেকে নাফিজ়ার মামাতো ভাই সাবির-সহ কয়েক জন সন্দেহভাজনকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদের পরে গ্রেফতার করা হয় ৩৮ বছরের সাবিরকে।

জিজ্ঞাসাবাদের পরে গ্রেফতার করা হয় ৩৮ বছরের সাবিরকে। পুলিশের দাবি, জেরায় অপরাধ স্বীকার করেছে ধৃত।

জিজ্ঞাসাবাদের পরে গ্রেফতার করা হয় ৩৮ বছরের সাবিরকে। পুলিশের দাবি, জেরায় অপরাধ স্বীকার করেছে ধৃত। — প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫ ০৯:৪১
Share
Save

গল্ফ গ্রিন থানার রাজেন্দ্রপ্রসাদ কলোনিতে মহিলাকে কুপিয়ে খুনের ঘটনায় তাঁরই মামাতো ভাইকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃতের নাম সাবির আলি। বুধবার সন্ধ্যায় নিজের ফ্ল্যাটের একটি ঘরে খাটের নীচ থেকে উদ্ধার হয় ৪০ বছরের নাফিজ়া খাতুনের ক্ষতবিক্ষত দেহ। তদন্তে নেমে পুলিশ রাতেই ঘটনাস্থল থেকে নাফিজ়ার মামাতো ভাই সাবির-সহ কয়েক জন সন্দেহভাজনকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদের পরে গ্রেফতার করা হয় ৩৮ বছরের সাবিরকে। পুলিশের দাবি, জেরায় অপরাধ স্বীকার করেছে ধৃত।

পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে, ঋণ মেটানোর জন্য নাফিজ়ার কাছে ১০ হাজার টাকা ধার চেয়েছিল সাবির। নাফিজ়া টাকা দিতে অস্বীকার করায় সে ছুরি দিয়ে তাঁকে কুপিয়ে খুন করে। সাবির হরিদেবপুরের ঢালিপাড়ার বাসিন্দা হলেও টালিগঞ্জে শ্বশুরবাড়িতে থাকত বলে পুলিশ সূত্রের খবর।

মা খয়রুন্নিসার সঙ্গে একটি চারতলা আবাসনের একতলার ফ্ল্যাটে থাকতেন অবিবাহিত নাফিজ়া। খয়রুন্নিসা চায়ের দোকান চালান। দক্ষিণ কলকাতার একটি শপিং মলে বিস্কুটের প্যাকেট তৈরির কাজ করতেন নাফিজ়া। বুধবার সকালেখয়রুন্নিসা চায়ের দোকানে চলে গেলে কাজে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন নাফিজ়া। সেই সময়ে এসে তাঁর কাছে ১০ হাজার টাকা ধার চায় সাবির। জানায়, ওই টাকা দিয়ে ঋণ শোধ করবে। পুলিশ জানিয়েছে, এর আগে একাধিক বার টাকা চেয়েও না পাওয়ায় নাফিজ়াকে অপমানকরেছিল সাবির। বুধবার ফের নাফিজ়া টাকা দিতে অস্বীকার করায়সাবিরের ক্ষোভ চরমে ওঠে। ভাই-বোনের মধ্যে বচসা চলার মাঝেই সাবিরের মুখে ঘুষি মারেন নাফিজ়া। এর পরে নাফিজ়ার উপরে চড়াও হয় সাবির। আত্মরক্ষার জন্য রান্নাঘর থেকে ছুরি নিয়ে আসেন নাফিজ়া। সেই ছুরি কেড়ে নিয়ে নাফিজ়াকে একাধিক বার কোপায় সাবির। এর পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে তাঁর গলা টিপে ধরে। নাফিজ়া ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়লে তাঁর দেহ ঘরের খাটের নীচে রেখে বেরিয়ে যায় অভিযুক্ত। পুলিশের অনুমান, টাকা চেয়েও না পাওয়ার রাগে নাফিজ়াকে খুন করে সাবির। সে সম্ভবত ওই পরিকল্পনা করেই এসেছিল। সন্ধ্যায় পরিবারের তরফে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে নাফিজ়ার দেহ উদ্ধার করে।

বৃহস্পতিবার কলকাতা পুলিশের ডিসি (এসএসডি) বিদিশা কলিতা দাশগুপ্ত গল্ফ গ্রিন থানায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ‘‘ধৃত সাবির তেমন কিছু কাজ করত না। ব্যাঙ্ক ঋণ-সহ বাজারে তার প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা দেনা ছিল। সেই দেনা মেটানোর জন্য সে মাঝেমধ্যেই নাফিজ়ার কাছ থেকে টাকা ধার নিত। নাফিজ়া তা দিতে না চাওয়ায় দু’জনের মধ্যে মনোমালিন্য ছিলই। খয়রুন্নিসা অবশ্য মাঝেমধ্যে সাবিরকে টাকা দিতেন।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনার পরে সাবির ফলস সিলিংয়ের কাজ করতে চলে যায়। এ দিকে, বার বার ফোন করেও খয়রুন্নিসা মেয়েকে না পেয়ে দুপুর দেড়টা থেকে তাঁর খোঁজ শুরু করেন। পরে বাড়ি এসে বৃদ্ধা দেখেন, জিনিসপত্র লন্ডভন্ড। নাফিজ়া নেই। খবর পেয়ে আত্মীয়স্বজনেরা এসে খোঁজ শুরু করেন। সেই সময়ে সাবিরও এসে দিদিকে খোঁজার ভানকরতে থাকে। বিকেলে ফ্ল্যাটের একটি ঘরের খাটের তলা থেকে উদ্ধার হয় নাফিজ়ার দেহ। মৃতার মা কয়েক জনের উপরে সন্দেহ প্রকাশ করেন পুলিশের কাছে। তার ভিত্তিকে রাতেই আটক করা হয় সাবিরকে। তবে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটি এখনও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। বিদিশা জানান, জেরায় সাবির এক-এক বার এক-একটি জায়গায় ছুরিটি ফেলেছে বলে জানাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় পুলিশি প্রহরা রয়েছে। গোটা এলাকা থমথমে। বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চাননি কেউ। এক মহিলা বলেন, ‘‘কী হয়েছে জানি না। আমি কিছু বলতে পারব না।’’

এ দিন ধৃত সাবিরকে আলিপুর আদালতে তোলা হয়। সরকারি আইনজীবী সৌরীন ঘোষাল জানান, খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করতে, খুনের কারণ জানতে এবং ঘটনার পুনর্নির্মাণের স্বার্থে ধৃতকে পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হোক। বিচারক ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত সাবিরকে পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

KP Golf Green

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।