উৎসব: কাঠামো পুজোর আয়োজন। উত্তর কলকাতায়। নিজস্ব চিত্র
দিনটা জন্মাষ্টমী। শ্রীকৃষ্ণের জন্মের অনুষ্ঠানে সচরাচর কে আর মনে রাখে, এ হল তাঁরও জন্মতিথি। যশোদার গর্ভসম্ভুতা কৃষ্ণের এই বোনকেই দেবকীর অষ্টম গর্ভ ভেবে কংস আছড়ে মারতে গিয়েছিলেন। পুরাণের গল্প অনুযায়ী, তখনই তিনি তরুণী নারীবেশে ভবিষ্যদ্বাণী করে যাবেন, ‘তোমারে বধিবে যে, গোকুলে বাড়িছে সে...।’
এই করোনাকালে দুর্গাপুজোর সম্ভাবনা যেন সুদূর গোকুলে বেড়ে ওঠার মতোই ঝুঁকির বলে মনে হচ্ছে! তবু সঙ্কটের আবহে কৃষ্ণের সেই বোন কাত্যায়ণী বা মহামায়া ওরফে মা দুর্গার জন্মদিনই কিন্তু এ বার কিছুটা অন্য মাত্রা পেয়ে গেল।
প্রাচীন রীতিমাফিক জন্মাষ্টমীর দিনটিতে দুর্গারও জন্মদিন হিসেবে বহু বড় বাড়ির পুজোয় প্রতিমার মাটিপুজো বা কাঠামো পুজোর রীতি পালন করা হয়। ইদানীং দুর্গাপুজোর ‘ব্র্যান্ডিং’-এর সুবাদে থিমের মাঠে খুঁটিপুজোর রমরমা। কিন্তু পরিকল্পনামাফিক থিমের যা চাপ, তাতে কাজ শুরুর জন্য জন্মাষ্টমী পর্যন্ত বসে থাকা পোষায় না বারোয়ারি পুজোর কর্তাদের। খুঁটিপুজো তাই রথ বা উল্টোরথেই সারা হয়।
‘‘এ বার থিমের চাপ নেই। তা ছাড়া, ভাদ্র-আশ্বিন মল মাস বলে শুভ কাজ অনেকে এড়িয়ে চলছেন। পুজো যে ভাবেই হোক, অনুষ্ঠানের ঢাকে কাঠি পড়ার কাজটা অনেকে জন্মাষ্টমীতে সারছেন,’’ বললেন বিভিন্ন পুজো কমিটির ফোরামের অন্যতম প্রধান মুখ পার্থ ঘোষ। লেক টেম্পল রোডের শিবমন্দিরে পার্থবাবুদের পুজোর কল্যাণ কামনাতেও এ দিন বিশেষ পুজো হয়ে গেল। কাশী বোস লেনের পুজোকর্তা সোমেন দত্তের কথায়, ‘‘খুঁটিপুজো আলাদা! তবে মা দুর্গার জন্মতিথি উপলক্ষে জন্মাষ্টমীতে কাঠামো পুজোটা আমরা বরাবরই সেরে রাখি।’’ আজ, বুধবার জন্মাষ্টমীর তিথি থাকতে থাকতে ওঁরা কাঠামো পুজো সারবেন। কিন্তু মঙ্গলবারই কাঠামোর কাঠ কিনে এনে শহরের এই পুরনো পুজোর কয়েক দশকের পুরোহিত কালীপ্রসন্ন ভট্টাচার্যের ঠাকুরঘরে রাখা হয়েছে। ভিড়বিহীন, কিন্তু আচারনিষ্ঠ ভাবে সে পুজো সম্পন্ন হবে।
‘‘শ্রীকৃষ্ণ ভাবগ্রাহী। ভক্তের ভাব অনুযায়ী পুজো নেন। অনেকে সূর্যের উদয়তিথি কোন দিনে পড়ছে দেখেও জন্মাষ্টমীর পুজো করেন। সে দিনই বাড়ির দুর্গাদালানে অনেকের মৃত্তিকা পুজোর প্রথা,’’ বলছিলেন বৈষ্ণব ভক্ত তথা শ্রীকৃষ্ণ তত্ত্ব বিষয়ক প্রাবন্ধিক চৈতন্যময় নন্দ। এ শহরেরও অনেক বাড়িতে, যেমন দর্পনারায়ণ ঠাকুর স্ট্রিটে মার্বেল প্যালেসের মল্লিকদের জ্ঞাতিদের বাড়িতে জন্মাষ্টমীতেই দুর্গা প্রতিমার কাঠামো পুজো হয়। ফলে কৃষ্ণ, বিষ্ণু বা দুর্গা একাকার৷ কুমোরটুলির বাবু পাল বলছিলেন, ‘‘পারিবারিক পুজোর বায়নাদারেরা কেউ কেউ আজ এসে কাঠামো পুজো দিলেন। এই দুঃসময়েও দুর্গাপুজোর একটা ঘোষণা হয়ে গেল।’’ মিন্টু পালের ফাইবার গ্লাসের দুর্গাও সম্পূর্ণ হওয়ার পরে এই দিনে বাক্সবন্দি হয়েছেন। এ বার জাহাজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পোর্ট অব স্পেনে যাবেন।
পারস্পরিক দূরত্ব রেখে খুঁটিপুজো হয়েছে আলিপুরের ৭৮ পল্লিতে। উল্টোডাঙার অরবিন্দ সেতু সর্বজনীন বা নিউ সন্তোষপুর সর্বজনীনেও মোটামুটি একই ছবি। অনেকেই বলছেন, মহালয়ার পরে এক মাস হাতে থাকবে। তখনই যা কাজ হওয়ার হবে। এর আগে শেষ শুভ দিন হিসেবে জন্মাষ্টমীতেই হল মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান।
বিভিন্ন পুজোর ট্যাগলাইন জুড়েও ‘করোনা যাক বিসর্জনে’ বা ‘দুঃসময়ের ইতি টানা’র ডাক। তা-ও বহু বড় পুজোই করোনাকালে খানিক ‘ব্যাকফুটে’। ত্রিধারার দেবাশিস কুমার সরকারি নির্দেশিকা মেনেই সামান্য যা করার করবেন। সুরুচি সঙ্ঘের কর্ণধার, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলছেন, ‘‘কতটুকু কী হবে, ৫ সেপ্টেম্বরের পরে দেখব। পুজো নয়, পুজোর সঙ্গে জড়িত মানুষের পুজোই আমাদের লক্ষ্য।’’ উৎসব সংক্রান্ত উপদেষ্টা ধ্রুবজ্যোতি বসুর কথায়, ‘‘আনুষ্ঠানিকতার গোঁ ধরে থেকে হঠকারি সিদ্ধান্তের এখন সময় নয়। অতিমারির সময়ে সঙ্কট বাড়লে বাঙালির ভাবমূর্তিরই দফারফা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy