মৃত আখতার খান
এত দিন ছোটবড় দুর্ঘটনার মধ্যেই আটকে ছিল। এ বার চিনা মাঞ্জার সুতোয় গলা কেটে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটল শহরে। শনিবার বিকেলে এ জে সি বসু রোড উড়ালপুলের উপরে চিনা মাঞ্জার সুতোয় গলা কেটে মৃত্যু হয় এক মোটরবাইক চালকের। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম আখতার খান (৪৫)। কলকাতায় এ ভাবে চিনা মাঞ্জার সুতোয় গলা কেটে মৃত্যুর ঘটনা এই প্রথম বলেই প্রশাসন সূত্রের খবর। ঘটনার পরে কার বিরুদ্ধে ঠিক অভিযোগ দায়ের করা হবে, তা নিয়ে ধন্দে পড়েছে পুলিশও।
ওয়াটগঞ্জ থানা এলাকার কবিতীর্থ সরণির বাসিন্দা আখতারের বাইকের পিছনের আসন থেকে একটি অনলাইনে খাবার সরবরাহকারী সংস্থার ব্যাগ পেয়েছে পুলিশ। যা দেখে তদন্তকারীদের ধারণা, আখতার ওই ধরনের কোনও সংস্থার কর্মী।
পুলিশ জানতে পেরেছে, বিকেলের পরে রোজা ভাঙার সময় হয়ে আসায় আখতার তাড়াতাড়ি বাইক চালিয়ে ফিরছিলেন। সেই সময়ে চিনা মাঞ্জার ঘুড়ির সুতো তাঁর গলায় পেঁচিয়ে যায়। তিনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাইক থেকে ছিটকে পড়েন। তাঁর বাইকটিও উড়ালপুল থেকে নীচের দিকে গড়িয়ে যায়। পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে আখতারকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
চিনা মাঞ্জা বা কাচের গুঁড়ো দিয়ে বিশেষ ভাবে তৈরি এমন মাঞ্জা সুতোয় গলা কেটে গত বছর দেশের বিভিন্ন জায়গায় একাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। জয়পুরে গত বছরের জানুয়ারিতে পার্কে খেলার সময়ে ছ’বছরের এক বালকের গলায় চিনা মাঞ্জার সুতো পেঁচিয়ে গলা কেটে যায়। মৃত্যু হয় শিশুটির। জয়পুরেই আবার গত ডিসেম্বরে চিনা মাঞ্জায় গলা কেটেই মৃত্যু হয় একটি চার বছরের শিশুর। গত নভেম্বরে চিনা মাঞ্জায় গলা কেটে চেন্নাইয়ে তিন বছরের একটি শিশু মারা যায়। তার আগে অগস্টে দিল্লিতে এক ব্যক্তি স্কুটারে চড়ে যাওয়ার সময়ে একই রকম দুর্ঘটনায় মারা যান। মানুষের পাশাপাশি চিনা মাঞ্জার সুতোয় প্রচুর পাখির মৃত্যু হয়েছে। যার জেরে জাতীয় পরিবেশ আদালতের দ্বারস্থ হয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ২০১৬-র ডিসেম্বরে গোটা দেশে চিনা মাঞ্জা নিষিদ্ধ হয়।
আরও পড়ুন: বৃদ্ধ খুনে রেকি করে লুটের ছক কষে দুষ্কৃতীরা
আরও পড়ুন: রোগী-সহ পুলিশকে ফেরাল হাসপাতাল, মৃত্যু
বছর দুই আগে মা উড়ালপুলের উপরে গলা কেটে জখম হন এক চিকিৎসক। তপসিয়ার এক মোটরবাইক আরোহীর হেলমেটের তলায় সুতো আটকে গেলে তাঁর গলা কেটে যায়। তারও আগে মা উড়ালপুলের উপরে গলায় চিনা মাঞ্জার সুতো জড়িয়ে কোনও ভাবে প্রাণে বেঁচে যান ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এক ছাত্র।
একের পর এক এমন ঘটনা ঘটার পরে কলকাতা পুলিশের তরফে ওই দুই উড়ালপুলের আশপাশের এলাকায় লিফলেট বিলি করে চিনা মাঞ্জা ব্যবহার না করার অনুরোধ করা হয়। তার পরে কিছু দিন চিনা মাঞ্জার দাপট তপসিয়া, বেনিয়াপুকুর, তিলজলা, ট্যাংরার মতো উড়ালপুলের লাগোয়া এলাকাগুলিতে কমেছিল। শনিবারের ঘটনার পরে বোঝা গেল প্রশাসনের নির্দেশ উড়িয়ে আবারও চিনা মাঞ্জার ব্যবহার শুরু হয়েছে।
স্থানীয় ইস্ট এবং তিলজলা ট্র্যাফিক গার্ড সূত্রের খবর, লকডাউনের সময়ে দুই উড়ালপুলের আশপাশের বাড়ির ছাদ থেকে প্রচুর ঘুড়ি উড়তে দেখা যাচ্ছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে অভিযুক্তদের হদিস পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
পুলিশ জানায়, শনিবার বিকেল সওয়া ৫টা নাগাদ এসএসকেএমের দিক থেকে আখতার বাইক চালিয়ে পার্ক সার্কাস সাত মাথার মোড়ের দিকে যাচ্ছিলেন। তখন ওই দুর্ঘটনা ঘটে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy