Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
বিধাননগর

নয়া ফাঁদ, টাকা দিচ্ছেন প্রতারিতই

এ যেন আক্ষরিক অর্থেই মাছের তেলে মাছ ভাজা। বিদেশি গ্রাহকদের তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্য দেওয়ার নামে প্রথমে চুক্তি করা হচ্ছে। তার কয়েক মাসের মধ্যে সংস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ার মিথ্যে তথ্য দিয়ে চুক্তির জন্য নেওয়া টাকার কয়েক গুণ ফেরত দেওয়া হচ্ছে। অনলাইনে গ্রাহক এই বাড়তি টাকা ফেরতের কারণ জানতে চাইলে বলা হচ্ছে ভুলবশত বেশি টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। গ্রাহক যেন তা ফেরত দেন।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৫ ০০:০৩
Share: Save:

এ যেন আক্ষরিক অর্থেই মাছের তেলে মাছ ভাজা।
বিদেশি গ্রাহকদের তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্য দেওয়ার নামে প্রথমে চুক্তি করা হচ্ছে। তার কয়েক মাসের মধ্যে সংস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ার মিথ্যে তথ্য দিয়ে চুক্তির জন্য নেওয়া টাকার কয়েক গুণ ফেরত দেওয়া হচ্ছে। অনলাইনে গ্রাহক এই বাড়তি টাকা ফেরতের কারণ জানতে চাইলে বলা হচ্ছে ভুলবশত বেশি টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। গ্রাহক যেন তা ফেরত দেন। চুক্তির অতিরিক্ত টাকা গ্রাহক ফেরত দিচ্ছেন। তার পরেই বুঝতে পারছেন বাড়তি টাকা আসলে তাঁরই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘হ্যাক’ করে তাঁকেই পাঠিয়েছিল প্রতারকেরা। বাড়তি টাকা ফেরত দেওয়ার ফাঁদে পড়ে যে টাকা তিনিই ফের প্রতারকদের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিয়েছেন।

মাস দেড়েক হল বিধাননগর কমিশনারেটে সাইবার বিভাগ চালু হয়েছে। ইতিমধ্যেই এই ধরনের অন্তত ৫০টি ঘটনা গোচরে এসেছে সাইবার গোয়েন্দাদের। যেখানে তাঁরা দেখেছেন, নিউটাউন এবং সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টরের বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার ভিতরেই এই ধরনের প্রতারণা চক্রের পাণ্ডাদের ‘ঘুঘুর বাসা’ রয়েছে। এফআইআর দায়ের হওয়ায় ১৬-১৭টি মামলার তদন্ত শুরুও হয়েছে বলে জানান গোয়েন্দারা।

গোয়েন্দারা জানান, এই ধরনের প্রতারণায় বিদেশি গ্রাহকদেরই বেশি নিশানা করা হচ্ছে। কারণ তাঁরা তথ্যপ্রযুক্তির উপর বেশি নির্ভরশীল। অনলাইনে কেনাকাটা থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজই করে থাকেন। তাই তথ্যপ্রযুক্তিতে সহয়তাকারী (টেক সাপোর্ট) সংস্থার সঙ্গে তাঁদের অনলাইনে যোগাযোগ রাখতেই হয়। আর সেই সুযোগকেই কাজে লাগাচ্ছে নিউটাউন এবং পাঁচ নম্বর সেক্টরে ঘাপটি মেরে থাকা সাইবার প্রতারকেরা।

কী ভাবে হচ্ছে এই প্রতারণা?

গোয়েন্দাদের দাবি, ওই সাইবার প্রতারকেরা বড় বড় সংস্থাগুলির কর্মীদের একাংশের থেকে গ্রাহকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য নিচ্ছে। তার পরে কোনও একটি অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকেরই জমানো টাকা (যা চুক্তির অঙ্কের থেকে বেশি) প্রথমে নিজেদের অ্যাকাউন্টে নিয়ে আসছে। তার পরে পাঠিয়ে দিচ্ছে গ্রাহকের সেই অ্যাকাউন্টে, যার মারফত তথ্যপ্রযুক্তি সহায়তার জন্য প্রতারক সংস্থাকে তিনি চুক্তির টাকা দিয়েছিলেন। এর পরে গ্রাহককে ই-মেল পাঠিয়ে জানানো হচ্ছে, সংস্থা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। গ্রাহককে তাঁর টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে। এবং তার পরে গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে ‘ভুলবশত’ পাঠানো বাড়তি টাকা ফেরত চাওয়া হচ্ছে। গ্রাহক না বুঝতে পেরেই নিজের টাকা নিজের হাতে করেই তুলে দিচ্ছেন প্রতারকদের।

কমিশনারেটের গোয়েন্দাপ্রধান কঙ্করপ্রসাদ বারুই বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে, অপরাধীরা ভাবছে বিদেশের পুলিশ এখানে তদন্তে আসবে না। আর এখান থেকে বিদেশে গিয়ে পুলিশের তদন্ত করাও জটিল প্রক্রিয়া। তবে সব ঘটনারই তদন্ত চলছে।’’

তদন্তকারীরা জানান, মূলত বিপিও এবং কল সেন্টারগুলির উপরেই তাঁরা নজর রাখছেন। কারণ প্রতারণা চক্রগুলি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে ওই সব জায়গা থেকেই। তাই বিপিও আর কল সেন্টারগুলির আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকের পরিকল্পনাও করছে সাইবার শাখা।

ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪১৯ ধারার আওতায় এই অপরাধ পড়ছে বলে জানান গোয়েন্দারা। উল্লেখ্য এক সময়ে নাইজেরিয়া এই ধরনের অপরাধের আঁতুড়ঘর ছিল। এই ধরনের অপরাধকে ‘নাইজেরিয়ান স্ক্যাম’ বলত পুলিশ। কিন্তু বিধাননগর কমিশনারেটের সাইবার গোয়েন্দাদের দাবি, তাঁদের নজরে আসা এই সাইবার প্রতারণা নাইজেিরয়া কেলেঙ্কারির আধুনিক রূপ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE