ফ্ল্যাটের এই ঘর থেকেই উদ্ধার হয়েছে মাদক। নিজস্ব চিত্র।
একটি বহুতলের পাঁচতলায় চারটি ফ্ল্যাটের মধ্যে তিনটি ফ্ল্যাট একসঙ্গে জুড়ে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে ঠাসা দামি দামি আসবাব। আর তার সঙ্গেই একটি ঘরে বাঁধা তিনটি ছাগল! সেই ছাগলের ব্যবসার আড়ালে চলছে মাদকের কারবার— গোপন সূত্রে এই খবর পেয়ে বুধবার ওই ফ্ল্যাটে হানা দিয়ে চার কোটি টাকা মূল্যের হেরোইন এবং মাদক তৈরির রাসায়নিক উদ্ধার করলেন রাজ্য পুলিশের এসটিএফের গোয়েন্দারা। গ্রেফতার করা হয়েছে ফ্ল্যাটমালিক দম্পতিকে।
বুধবার রাত আটটা নাগাদ বিধাননগর (দক্ষিণ) থানার নাওভাঙা এলাকার ওই ফ্ল্যাটটি যখন ঘিরে ফেলেন রাজ্য পুলিশের এসটিএফের গোয়েন্দারা, তখন সেখানেই ছিল মালিক দম্পতি। এর পরে ফ্ল্যাটে ঢুকে তল্লাশি চালানো শুরু হলে প্রথমে ঘরের একটি আলমারি থেকে মেলে টাকা ভর্তি ব্যাগ। কালো ব্যাগটির মধ্যে থরে থরে টাকার বান্ডিল রাখা ছিল। দীর্ঘক্ষণ তল্লাশি চালানোর পরে অপর একটি আলমারিতে রাখা জামাকাপড়ের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে একটি সবুজ রঙের ব্যাগ। তার ভিতরেই রাখা ছিল প্রায় সাড়ে তিন কিলোগ্রাম হেরোইন, যার বাজারদর প্রায় চার কোটি টাকা! এর পরে অন্য একটি আলমারি থেকে উদ্ধার হয় দেড় কিলোগ্রাম মাদক তৈরিররাসায়নিক, যা হেরোইন ও ব্রাউন সুগার তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়াও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে নগদ পাঁচ লক্ষ টাকা।
এসটিএফের গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ধৃতদের নাম মোবিন খান ও মেহেতাব বেগম। মোবিন খান ছাগলের ব্যবসা করে। অন্য দিকে, মেহেতাবকে এর আগে দু’বার নার্কোটিক্স কন্ট্রোল বুরো (এনসিবি) গ্রেফতার করেছিল। দু’দফায় প্রায় ১৭ বছর জেল খেটেছে সে। এই মেহেতাবই মাদক-চক্রের মূল মাথা বলে প্রাথমিক তদন্তের পরে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই ফ্ল্যাটে লুকিয়ে রাখা মাদক কোথা থেকে আনা হয়েছিল এবং তা কোথায় কোথায় পাচারের পরিকল্পনা ছিল, সে সব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। উদ্ধার হওয়া টাকা গোয়েন্দারা ট্রাঙ্কে করে নিয়ে গিয়েছেন। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বেশ কিছু নথিও। তদন্তকারীরা জানান, অন্য জায়গা থেকে মাদক নিয়ে এসে ওই ফ্ল্যাটে তা পুরিয়ার মধ্যে পুরে অন্যত্র সরবরাহ করা হত। মাদকের পুরিয়া বানানোর জন্য লোকও রেখেছিল ওই দম্পতি। এর পরে এজেন্ট মারফত ওই মাদক ছড়িয়ে পড়ত ট্যাংরা, পার্ক সার্কাস, তপসিয়া, বেনিয়াপুকুর, তিলজলা প্রভৃতি এলাকায়। এসটিএফের দাবি, এই মাদক কারবারের সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত রয়েছে। ধৃত দম্পতিকে জেরা করে চক্রের সঙ্গে জড়িত বাকিদের হদিস পাওয়া যাবে বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা।
গোয়েন্দারা আরও জানতে পেরেছেন, নাওভাঙার যে আবাসনের ফ্ল্যাট থেকে ওই মাদক উদ্ধার হয়েছে, তার মালিক মোবিন। এলাকায় সে নিজেকে ব্যবসায়ী বলেই পরিচয় দিত। ওই ফ্ল্যাটে বাইরের লোকেদেরও যাতায়াত ছিল। বছরখানেক আগে ওই ফ্ল্যাটটি কিনেছিল মোবিন এবং মেহেতাব। ধাপার মনপুর এলাকাতেও তাদের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে বলে জেনেছেন তদন্তকারীরা। ধৃতদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে বিধাননগর (দক্ষিণ) থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে। যেখান থেকে মাদক উদ্ধার হয়েছে, তার পাশেই ছাগল বাঁধা ছিল। যা থেকে মনে করা হচ্ছে, ছাগলের ব্যবসার আড়ালেই রমরিয়ে চলছিল মাদকের এই কারবার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy