আনন্দ: প্রথম বার ভোট দিয়ে বেরিয়ে পরিবারের সঙ্গে ভোটকেন্দ্রের সামনেই নিজস্বী। বৃহস্পতিবার, চেতলা গার্লস হাইস্কুলে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
খিদিরপুর এবং একবালপুর মোড়ের মাঝে ডায়মন্ড হারবার রোড তখনও জলে ভাসছে। গাড়ির চাকায় তাতে ঢেউ খেলছে। কিন্তু তাতে কী? সেই জল ঠেলেই একবালপুরের ইব্রাহিম রোডে কাজী নজরুল ইসলাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দিতে যাচ্ছিলেন শাহনাজ় বেগম, ফারুক আহমেদরা। বললেন, ‘‘সকাল সকাল ভোটটা দিয়ে দিলাম। রাস্তায় জল জমেছে তো কী হয়েছে? নেমেও যাবে। আর দিদিও (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) থেকে যাবেন।’’
শুধু ওই দু’জনই নয়। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা নাগাদ জল ঠেলেই খিদিরপুর, এলবালপুর এলাকায় ভোট দিতে আসতে দেখা গেল বহু মানুষকে। আবার ওই সময়েই আলিপুর পার্ক রোড, আলিপুর রোড-সহ যদুবাবুর বাজার এলাকার বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে তেমন ভিড় ছিল না। কার্যত ফাঁকা সেই সমস্ত কেন্দ্রে অবশ্য সকাল থেকে চরকিপাক খেলেন পদ্ম শিবিরের প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল। তার মধ্যেই এসএসকেএম হাসপাতালের সামনে একটি রেস্তরাঁ খোলা থাকতে দেখে গাড়ি থেকে নেমে আপত্তি জানান তিনি। বললেন, ‘‘ওই সব ধারা শুধু নামেই। ভবানীপুরে তো সকাল থেকেই ছাপ্পা, ভয় দেখানো শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল।’’ কিছু ক্ষণ আগেই তাঁর কাছে খবর এসেছে, কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্রের পাড়া ধীরেন্দ্রনাথ ঘোষ রোডের একটি বুথে কারচুপি হচ্ছে।
ভবানীপুরে তাঁর উপস্থিতি নিয়ে বিতর্ক থাকলেও কামারহাটির ভোটার তথা বিধায়ক মদন মিত্রের দাবি, ‘‘অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমার দিদি একা থাকেন। তাঁকে ভোট দিতে নিয়ে যাব বলে এসেছি।’’ কথা শেষ হতেই নিজেই গাড়ি চালিয়ে মদন রওনা দিলেন বুথের দিকে। অন্য দিকে, গাড়ি ছুটিয়ে তখন আলিপুর পার্ক রোডের একটি কেন্দ্রে হাজির প্রিয়াঙ্কা। ভিতরে ঢুকেই এক যুবকের বিরুদ্ধে ভুয়ো ভোটারের অভিযোগ তুললেন তিনি। কর্তব্যরত আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানদের ব্যবস্থা নিতে বলে ওই ভোটকেন্দ্র ছাড়লেন বিজেপি প্রার্থী। পৌঁছে গেলেন চেতলা হাট রোডের অন্য একটি কেন্দ্রে।
চেতলা গার্লস স্কুলে তখন জীবনের প্রথম ভোট দিতে এসেছিলেন একান্তিকা চৌধুরী। তাঁর কথায়, ‘‘মে মাসে ভুবনেশ্বরে থাকায় আসতে পারিনি। এ বার এসেছি, যাতে এলাকার উন্নয়ন বহাল থাকে।’’ ভবানীপুরের বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। সকালেই কাঁসারিপাড়ার একটি স্কুলে ভোট দিতে গিয়েছিলেন তিনি। বেরিয়ে বললেন, ‘‘আমি ২৮ হাজার ভোটে জিতেছিলাম। কিন্তু দিদি জিতবেন কয়েক গুণ বেশি ভোটে।’’ অন্য দিকে, বেলতলা রোডে একটি বালিকা বিদ্যালয়ে ভোটকেন্দ্রে হাজির প্রিয়াঙ্কা এবং তাঁর মুখ্য নির্বাচনী এজেন্ট সজল ঘোষ। সেই সময়েই জোড়াফুলের প্রতীক ছাপা ভোটার স্লিপ নিয়ে ভোট দিতে ঢুকছিলেন এক বৃদ্ধা। তা দেখে সজল বলেন, ‘‘ওঁদের ভোটার স্লিপ নিয়ে এলেও, ভোটটা ঠিক জায়গাতেই সকলে দিচ্ছেন।’’
সকালে যে সব ভোটকেন্দ্র প্রায় ফাঁকা ছিল, দুপুর গড়াতেই অবশ্য সেখানে ভোটারের সংখ্যা বাড়তে থাকে। সেই সময়েই পদ্মপুকুরের খালসা স্কুলে এক ভুয়ো ভোটারকে হাতেনাতে ধরে ফেলার পরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রিয়াঙ্কা। এ দিন গোটা ভবানীপুর বিধানসভা এলাকা নিজেদের মতো করে ভাগ করে ঘুরে বেড়িয়েছেন তৃণমূলের বিভিন্ন নেতা-মন্ত্রীরা। এমনকি, সিপিএমের ক্যাম্পে বসে চা-ও খেয়েছেন ফিরহাদ হাকিম। প্রতিপক্ষ প্রিয়াঙ্কা অবশ্য আলিপুর, চেতলা, ভবানীপুর এবং পার্ক স্ট্রিটের কয়েকটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে বার বার চক্কর কেটে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে রিগিং, ছাপ্পা-সহ বিভিন্ন অভিযোগ তোলেন। এক বিজেপি প্রার্থীকে কেন গ্রেফতার করা হয়েছে, তা জানতে ভবানীপুর থানায় গেলেও ঢুকতে বাধা পান।
এ দিন দুপুর সওয়া তিনটে নাগাদ মিত্র ইনস্টিটিউশনে ভোট দিতে আসেন ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিছু ক্ষণ পরেই আসেন অভিষেক। ভোটারদের উদ্দেশে হাত জোড় করে প্রণাম করা ছাড়া, কেউই অবশ্য প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কোনও মন্তব্য করেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy