ছেলে সৌমেনের ছবি হাতে অনিতাদেবী। —নিজস্ব চিত্র।
‘‘মাঝেরহাট সেতু উদ্বোধন হবে শুনছি। আমার ছেলেকে কি কেউ মনে রেখেছে? বোধহয় না, তা হলে তো আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করত সরকার। নাই করুক, কিন্তু ছেলের নামে সেতুর নামকরণ হোক এটাই চাই। অন্তত ওর ছবি দিয়ে একটা ফলক বসুক ওখানে!’’
কয়েক ঘণ্টা পর নবরূপে উদ্বোধন হতে চলেছে মাঝেরহাট সেতু। তার ঠিক আগেই অভিমানের সুর সৌমেন বাগের মা অনিতার গলায়। সেতু বিপর্যয়ে প্রাণ যায় বেহালা শীলপাড়ার বাসিন্দা সৌমেন বাগের। ছেলের ছবি বুকে জড়িয়ে দুর্ঘটনার দিনের স্মৃতি আউড়ে যাচ্ছিলেন তিনি।
ছেলের মৃত্যুর পর, শীলপাড়ায় বাপের বাড়িতেই স্বামী প্রদীপ বাগের সঙ্গে থাকেন অনিতা। প্রদীপকে সিভিক ভলান্টিয়ারের চাকরি দিয়েছে রাজ্য সরকার। পরিবারকে দেওয়া হয়েছিল ৫ লক্ষ টাকাও। অনিতার প্রশ্ন, “টাকা দিলেই কি সব ভুলে থাকা যায়? সাময়িক সুরাহা হয় ঠিকই। কিন্তু এটুকু সম্মান কি পাওয়া উচিত নয় সৌমেনের? ছেলে ওষুধের দোকানে কাজ করে সংসার চালাত। বিয়ের কথা বলতে ও বলেছিল, মা আমি রোজগার করে তোমাদের এবং দাদুকে আগে ভাল রাখি। তার পর সব হবে।”
মুখ্যমন্ত্রীর হাতে সেতুর উদ্বোধন।
আরও পড়ুন: নাইসেড-এ করোনা টিকা পরীক্ষার সূচনায় রাজ্যপাল, প্রথম ডোজ নেবেন ফিরহাদ হাকিম
সৌমেন ছোটবেলা থেকেই শীলপাড়ায় দাদু বসন্ত ঘোষের বাড়িতে মানুষ হয়েছিলেন। পড়তেন সরশুনা কলেজে। বাণিজ্য বিভাগে স্নাতক হয়ে ওষুধের দোকানে কাজে যোগ দেন তিনি। লেখালেখির শখও ছিল তাঁর। একটা বই লেখার প্রস্তুতিও চালাচ্ছিলেন সৌমেন। অনিতা বলেন, “আমাকে ও বলেছিল, মা একটা বই লিখেছি। ছাপাবে বলেছিল। একটা দুর্ঘটনা আমাদের একমাত্র সন্তান কেড়ে নিল। শেষ হয়ে গেল সব স্বপ্ন।”
সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সাল। কলেজস্ট্রিট থেকে বন্ধুর সঙ্গে বই কিনে ফিরছিল সৌমেন। তখনই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে মাঝেরহাট সেতু। টিভিতে এই খবর দেখে ভাইকে ফোন করেন অনিতা। সে দিনের ঘটনার বিবরণ শোনালেন অনিতা। তিনি বলেন, “দুর্ঘটনার পর অনেক চেষ্টা করেও ছেলের ফোন পাচ্ছিলাম না। অনেকক্ষণ পর একজন ফোন তুলল। তিনি বললেন, আপনারা তাড়াতাড়়ি চলে আসুন। ছেলের কিছু হয়নি। হাত ভেঙেছে। শ্যামবাজার থেকে মাঝেরহাটে পৌঁছে বুঝে গিয়েছিলাম, অন্য কিছু হয়েছে। পিজি-তে যাওয়ার পর আমি অজ্ঞান হয়ে যায়। কিছু মনে নেই। তার পর সবাই জানেন কী হয়েছে।” সৌমেনের মামি সুমিতা ঘোষ বলেন, “নানা কারণে সরকারের দরজায় এখনও ঘুরতে হচ্ছে। বিমার টাকা পেতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ব্যাঙ্কে গেলে নানা ধরনের কাগজপত্র আনতে বলেছে। এর স্থায়ী সমাধান চাই।”
আরও পড়ুন: প্রকাশ্যে কবে মুখ খুলবেন শুভেন্দু, অপেক্ষায় পূর্ব মেদিনীপুর
মাঝেরহাট সেতুতে শেষ মুহূর্তে রঙের পোচ পড়ছে। শামিয়ানা খাটানো হচ্ছে অতিথিদের বসার জন্য। সব ঠিক থাকলে আগামী কাল, বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টের সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ই সেতু উদ্বোধন করবেন। এখনও সৌমেনের পরিবার ডাক পায়নি বলে অভিযোগ। ছেলের নামে ফলক বসানো হবে কি না, তা-ও তাঁরা জানেন না। রাজ্য এবং রেলের মধ্যেই চলেছে টানাপড়েন। কিন্তু এই দুর্ঘটনার দায় কার? এই বিপর্যয়ে কারও শাস্তি হল না কেন,সেই প্রশ্নের এখনও উত্তর খুঁজছে সৌমেনের পরিবার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy