Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Bank Fraud

অনলাইনে খাবারের টোপ জামতাড়া গ্যাংয়ের

গত সপ্তাহে সাইবার অপরাধে জড়িত সন্দেহে ধৃত দুই দুষ্কৃতীকে জামতাড়া থেকে গ্রেফতার করে কলকাতায় এনে জেরা করেছে লালবাজারের ব্যাঙ্ক প্রতারণা দমন শাখা। ব্যাঙ্ককর্মীর ভুয়ো পরিচয় দিয়ে সঞ্জীবকুমার সিংহ ও বিদেশ রক্ষিত নামে ধৃত ওই দু`জন এক মহিলার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ৪ লক্ষ ৬৩ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

শিবাজী দে সরকার
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২০ ০৩:১৪
Share: Save:

ব্যাঙ্ককর্মীর ভুয়ো পরিচয় দিয়ে গ্রাহকে বোকা বানিয়ে নয়তো অনলাইনে অন্য কোনও ভাবে এত দিন অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতাচ্ছিল প্রতারকেরা। এ বার ফেসবুক কিংবা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে নামী বিভিন্ন রেস্তরাঁর ভুয়ো বিজ্ঞাপন দিয়ে লোক ঠকানোর নয়া কারবার শুরু হয়েছে। করোনার পরিস্থিতিতে অনলাইনে খাবার আনাতে বাধ্য হচ্ছেন বহু মানুষই। রেস্তরাঁর ভুয়ো বিজ্ঞাপন কিংবা নানা ছাড়ের টোপ দিয়ে সেই সুযোগে ক্রেতার অ্যাকাউন্ট খালি করে দিচ্ছে প্রতারকেরা। ঘটনার পিছনে হাত রয়েছে অনলাইনে প্রতারণায় সিদ্ধহস্ত ঝাড়খণ্ডের কুখ্যাত জামতাড়া গ্যাংয়ের। সম্প্রতি লালবাজারের হাতে এমনই তথ্য এসেছে। কলকাতার কয়েকটি নামী রেস্তরাঁর নাম করেই ওই প্রতারণা করা হয়েছে।

গত সপ্তাহে সাইবার অপরাধে জড়িত সন্দেহে ধৃত দুই দুষ্কৃতীকে জামতাড়া থেকে গ্রেফতার করে কলকাতায় এনে জেরা করেছে লালবাজারের ব্যাঙ্ক প্রতারণা দমন শাখা। ব্যাঙ্ককর্মীর ভুয়ো পরিচয় দিয়ে সঞ্জীবকুমার সিংহ ও বিদেশ রক্ষিত নামে ধৃত ওই দু`জন এক মহিলার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ৪ লক্ষ ৬৩ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ। ধৃতদের জেরা করে অনলাইনে খাবার সরবরাহের টোপ দিয়ে প্রতারণার কৌশলের কথা জানতে পেরেছে পুলিশ। দু`জনেই জামতাড়ার বাসিন্দা।

তদন্তকারীদের দাবি, সম্প্রতি ফেসবুক কিংবা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে নামী বিভিন্ন রেস্তরাঁর ভুয়ো বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছিল। প্রতারকদের ফাঁদে পা দিয়ে প্রচুর টাকা খুইয়েছেন অনেকেই।

লালবাজার সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে ওই কায়দায় প্রতারণার মামলা দায়ের হয়েছে পার্ক স্ট্রিট, শেক্সপিয়র সরণি, যাদবপুর এবং নেতাজিনগর থানায়। ব্যাঙ্ক প্রতারণা দমন শাখাই তদন্ত করছে ওই সব অভিযোগের। কিছু মামলার দায়িত্বে রয়েছে কলকাতা পুলিশের সাইবার অপরাধ বিভাগও।

আরও পড়ুন: রিপোর্ট না-দিলে হতে পারে জেলও

গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, ফেসবুকে নামী রেস্তরাঁর নাম দিয়ে বিজ্ঞাপনে নিজেদের নম্বর দিচ্ছিল প্রতারকেরা। বিজ্ঞাপনে দেওয়া নম্বরে ক্রেতা ফোন করলেই তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য প্রতারকেরা পেয়ে যাচ্ছিল। কোন ওয়ালেটের মাধ্যমে দাম দেওয়া হচ্ছে তা জেনে নিয়ে গ্রাহকের মোবাইলে অনলাইন পেমেন্ট এবং খাবার বুকিংয়ের জন্য একটি লিঙ্ক মেসেজ পাঠানো হচ্ছিল। ওই মেসেজের লিঙ্কে গ্রাহক ক্লিক করলেই তাঁর মোবাইলের নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছিল দুষ্কৃতীদের কাছে। কারণ সেটি একটি ‘টিম ভিউয়ার সফটওয়্যার’। যার মাধ্যমে প্রতারকেরা গ্রাহকের মোবাইলের বিস্তারিত বিষয় জামতাড়ায় বসে দেখতে পেত। সন্দেহ এড়াতে তাই সামান্য কিছু টাকা বুকিং চার্জ হিসাবে দিতে বলা হয়। এর পরে গ্রাহকের মোবাইলে একটি ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) আসে। সেই পাসওয়ার্ড গ্রাহকের কাছ থেকে জেনে নিলেই কেল্লা ফতে প্রতারকদের।

গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, ওই পদ্ধতিতে কখনও ওটিপি দরকার হয় না। মোবাইলের নিয়ন্ত্রণ চলে আসার পরে গ্রাহকের লেনদেন সংক্রান্ত বিষয় ধরা পড়ে যায় প্রতারকদের কম্পিউটার বা ল্যাপটপে। আর গ্রাহকের তথ্য জেনে নিয়ে তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নেয় জামতাড়া গ্যাং। আবার প্যানকার্ড এবং আধার কার্ডের সংযুক্তির নামেও জালিয়াতি করছে ওই অভিযুক্তেরা।

পুলিশ জানিয়েছে, ব্যাঙ্ক তথ্য ফোনে জানতে চায় না। বিভিন্ন ব্যাঙ্ক বার বার ওই প্রচার করার পরে কিছুটা সতর্ক হয়েছেন গ্রাহকেরা। তাই জালিয়াতির নতুন উপায় বার করছে অপরাধীরা।

কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই প্রতারণা ঠেকাতে হলে মানুষকে সজাগ হতে হবে। ব্যাঙ্কের নথি ফোনে বলা যাবে না। অচেনা কোনও লিঙ্কে ক্লিক করা যাবে না। বন্ধ করতে হবে ওটিপি-র তথ্য কাউকে বলা। একই ভাবে ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত কাস্টমার কেয়ারের নম্বরে ফোন করার আগে তা যাচাই করে নেওয়া উচিত। ওই কয়েকটি বিষয়ে সতর্ক হলেই ওই ঠগবাজদের আটকানো যাবে।’’

আরও পড়ুন: পুলিশে সংক্রমণ বৃদ্ধিতে চিন্তা বিধাননগরে

গোয়েন্দারা জানান, ধৃত সঞ্জীব ও বিদেশ গত কয়েক বছর ধরে ওই জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত। আর তা করেই দামি গাড়ি, মোটরবাইক এবং প্রাসাদোপম বাড়ির মালিক ধৃতেরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Bank Fraud Online Banking Cyber Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy