Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

বিপজ্জনক, তবু ৩৭ বিল্ডিংকে ফি ছাড় পুরসভার!

২০১০ সালে স্টিফেন কোর্ট অগ্নিকাণ্ডের পরে গঠিত কমিটিতে পুরসভা, কলকাতা পুলিশ ও দমকলের দফতরের পদস্থ কর্তারা ছিলেন। প্রাথমিক ভাবে শহরের ৪২টি বিল্ডিংকে ‘এনডেঞ্জারড’ ও ‘ফায়ার প্রোন’ বলে চিহ্নিত করেছিল সেই কমিটি

সোমবার সন্ধ্যাতেও চলছে আগুন নেভানোর কাজ। বাগড়ি মার্কেটে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

সোমবার সন্ধ্যাতেও চলছে আগুন নেভানোর কাজ। বাগড়ি মার্কেটে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

দেবাশিস ঘড়াই
শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:০৪
Share: Save:

লেট-ফি মকুব। লেট-ফি জমা না-দেওয়া বাবদ জরিমানাও মকুব। শহরের ৩৭টি ‘বিপজ্জনক’ ও ‘অগ্নিকাণ্ডপ্রবণ’ বিল্ডিংয়ের ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্সের পুনর্নবীকরণের ক্ষেত্রে দু’বছর আগে এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কলকাতা পুরসভা। শনিবার রাতের অগ্নিকাণ্ড সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিল।

২০১০ সালে স্টিফেন কোর্ট অগ্নিকাণ্ডের পরে গঠিত কমিটিতে পুরসভা, কলকাতা পুলিশ ও দমকলের দফতরের পদস্থ কর্তারা ছিলেন। প্রাথমিক ভাবে শহরের ৪২টি বিল্ডিংকে ‘এনডেঞ্জারড’ ও ‘ফায়ার প্রোন’ বলে চিহ্নিত করেছিল সেই কমিটি। ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে সেগুলির মধ্যে পাঁচটি বিল্ডিংয়ে অগ্নি সুরক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার হওয়ায় সম্পূর্ণ ছাড়পত্র দেয় পুরসভা। নতুন তালিকায় পড়ে থাকে ৩৭টি বিল্ডিং। পরবর্তী পুর-নোটিস অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে ওই সব বিল্ডিংয়ের ট্রেড লাইসেন্সের পুনর্নবীকরণের ক্ষেত্রে যাবতীয় ‘লেট-ফি’ এবং সে বাবদ বকেয়া টাকা মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ‘নির্দেশে’ মকুব করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পুর লাইসেন্স দফতর।

কিন্তু যে সব বিল্ডিংয়ে যে কোনও মুহূর্তে আগুন লাগার আশঙ্কা, সেগুলির ক্ষেত্রে কড়া ব্যবস্থার পরিবর্তে ফি মকুব করা হয়েছিল কেন? মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় সোমবার বলেন, ‘‘শুধুমাত্র ৩৭টি বিল্ডিং নয়, যে সমস্ত ব্যবসায়ীদের লেট ফি দীর্ঘদিন ধরে বাকি ছিল, তাঁদের আবেদনের ভিত্তিতেই তা মকুব করা হয়েছিল। আমি তো আর ৩৭টি বিল্ডিং আলাদা করতে পারি না। আর ট্রেড লাইসেন্স পুনর্নর্বীকরণ বন্ধ করার অর্থ এই নয় যে তাঁরা আর ব্যবসাই করতে পারবেন না। সেটাও মনে রাখতে হবে।’’ যদিও সংশ্লিষ্ট পুর নোটিসে শুধুমাত্র ৩৭টি বিল্ডিংয়ের লেট-ফি এবং তা বকেয়া বাবদ ফি মকুবের কথাই বলা হয়েছে।

পুর লাইসেন্স দফতরের সেই নোটিস।

কংগ্রেস নেতা প্রকাশ উপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘ব্যবসায়িক স্বার্থে না কি অন্য কারও স্বার্থে লেট-ফি মকুব করা হয়েছিল, তা দেখতে হবে।’’ আর বাম নেতা চয়ন ভট্টাচার্যের অভিযোগ, ‘‘এক শ্রেণির ব্যবসায়ীকে সুবিধা দিতেই ওই ফি মকুবের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।’’ শুধু বিরোধীরা নন, পুর-প্রশাসনের একাংশেরও বক্তব্য, পুরসভার আর্থিক ক্ষতি করে ওই ছাড় দেওয়ার পরও ৩৭টি বিপজ্জনক ও অগ্নিপ্রবণ বিল্ডিংয়ে যে সামান্যতম অগ্নি-সুরক্ষা ব্যবস্থা রাখা হয়নি, শনিবার রাতের অগ্নিকাণ্ড তারই প্রমাণ। পুর-তথ্যই বলছে, বাগড়ি মার্কেটে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যবসায়ীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৪০০। পুরসভাকে নিয়মিত ফি দেন, এমন ব্যবসায়ী সাড়ে ৬০০। তাঁদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত ট্রেড লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ করিয়েছেন, এমন ব্যবসায়ীর সংখ্যা মাত্র ৩০০! তা হলে তখনকার ছাড়ের সিদ্ধান্ত কীসের ভিত্তিতে?

আরও পড়ুন: ৯০ কোটির ওষুধ গিলেছে আগুন, সঙ্কট জেলায়

পুরসভা সূত্রের খবর, শহরে ট্রেড লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যবসায়ীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ছ’লক্ষ। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে ট্রেড লাইসেন্সের পুনর্নবীকরণ না করা হলে ব্যবসায়ী পিছু প্রতি মাসে ৫০ টাকা ‘লেট ফি’ জমা দিতে হয়। ফলে ‘লেট-ফি’ বাবদ পুরসভার আয় উল্লেখযোগ্য। সে ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হল কেন, তা নিয়ে প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক মহলে চর্চা কিন্তু বেড়েই চলেছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy