Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

পাল্টেছে বাগড়ি, বাকিরা এখনও সেই তিমিরেই

গত সেপ্টেম্বরে বাগড়ি মার্কেটে আগুন লাগায় বেশ কয়েকটি ব্লক একেবারে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ওই ঘটনার পরে বেশ কয়েক মাসের জন্য গোটা বাগড়ি মার্কেটই বন্ধ করে দেয় দমকল।

বেহাল: তারের জট বাগড়ি মার্কেট ও মেহতা বিল্ডিংয়ের মাঝের অংশে। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

বেহাল: তারের জট বাগড়ি মার্কেট ও মেহতা বিল্ডিংয়ের মাঝের অংশে। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৯ ০১:২৭
Share: Save:

গত সেপ্টেম্বর মাসের সেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড থেকে শিক্ষা নিয়ে খোলনলচে বদলে ফেলেছে বাগড়ি মার্কেট। কিন্তু ক্যানিং স্ট্রিটে বাগড়ির আশপাশের বাজারগুলির এখনও একই অবস্থা। ঘিঞ্জি গলিতে ডাঁই করা মালপত্র, প্লাস্টিকের ছাউনিতে ঢাকা স্টল, বাজারের দেওয়াল ও বিদ্যুতের খুঁটি জুড়ে মাকড়শার জালের মতো তারের জট— বদলায়নি কিছুই। এখানকার ব্যবসায়ীদের একাংশ জানাচ্ছেন, বড় কোনও বিপদ এলে তখন ‘ভগবানই ভরসা’।

গত সেপ্টেম্বরে বাগড়ি মার্কেটে আগুন লাগায় বেশ কয়েকটি ব্লক একেবারে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ওই ঘটনার পরে বেশ কয়েক মাসের জন্য গোটা বাগড়ি মার্কেটই বন্ধ করে দেয় দমকল। দমকলকর্তারা জানিয়ে দেন, অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা ঠিকমতো বসানো হলে তবেই আবার ওই বাজার খোলার অনুমতি মিলবে। ‘বাগড়ি মার্কেট সেন্ট্রাল কলকাতা ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি আশুতোষ সিংহ বলেন, ‘‘আমরা দমকলের নির্দেশ অনুযায়ী সমস্ত কাজ করেছি। মাটির নীচে ৫২ হাজার লিটারের ও ছাদে মোট এক লক্ষ লিটারের জলাধার তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া, প্রতিটি দোকানে স্মোক ডিটেক্টর থেকে শুরু করে স্প্রিঙ্কলার বসানোর কাজও শেষ। সব কিছু পরিদর্শন করার পরে দমকল আমাদের মার্কেট খোলার অনুমতি দিয়েছে।’’

ওই বাজারের ভিতরে ঘুরে দেখা গেল, আগুন থেকে শিক্ষা নিয়ে বাগড়ি এখন সত্যিই অনেকটা পাল্টেছে। দু’টি দোকানের মাঝের জায়গায় আগে যে ভাবে মালপত্র ডাঁই করে রাখা থাকত, এখন আর তেমন কিছু নেই। দোকানে দোকানে স্মোক ডিটেক্টর থেকে স্প্রিঙ্কলার, সবই বসেছে। কিন্তু বাগড়ির দোকানিদের অভিযোগ, পাল্টেছে শুধু ভিতরটাই। আশপাশের বাজারগুলি যে ভাবে জতুগৃহ হয়ে রয়েছে, তাতে সেখানে বড়সড় আগুন লাগলে বাগড়ি কি রক্ষা পাবে? বাগড়ির এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘আমরা সচেতন হয়েছি ঠিকই, কিন্তু অন্যেরা হল কই? এত ঘিঞ্জি এলাকা। পাশের বাজারে আগুন লাগলে এখানে ছড়াতে কত ক্ষণ?’’

বাগড়ি মার্কেটের ঠিক পাশেই রয়েছে লক্ষ্মী কাটরা মার্কেট। ওই বাজারে দোকানগুলির আশপাশে বিপজ্জনক ভাবে ঝুলছে বিদ্যুতের তার। সেখানকার এক ব্যবসায়ী প্রণব রাঠৌর বলেন, ‘‘এত পুরনো বাজার। এ ভাবেই তো চলছে। ভগবানই আমাদের ভরসা। তারের জট সরাতে গেলে ওই তার মাটির নীচ দিয়ে নিয়ে যেতে হবে। গোটাটাই পাল্টাতে হবে। কিন্তু কোনও দিনও কি হবে?’’

বাগড়ির উল্টো দিকে মেহতা বিল্ডিংয়ের অবস্থাও একই রকম। ওই বাজারের এক ব্যবসায়ীর দাবি, বাগড়ির অগ্নিকাণ্ডের পরে তাঁরা কিছু ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। দোকানিদের বলা হয়েছিল, দুই দোকানের মাঝে মালপত্র ডাঁই করবেন না। এ ছাড়া, অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্রগুলি নিয়মিত পরীক্ষারও ব্যবস্থা করা হয়। যদিও বাস্তবে দেখা যায়, মেহতা বিল্ডিংয়ে দোকানগুলির মাঝে এত জিনিস ডাঁই করে রাখা হচ্ছে যে, দু’জন পাশাপাশি হাঁটতে পারবেন না।

২০০৮ সালে নন্দরাম মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের পরে শহর জুড়ে বিভিন্ন এলাকায় গভীর নলকূপ বসানো হয়েছিল। সেই সময়ে গভীর ও অগভীর নলকূপ মেরামতির দায়িত্বে থাকা মেয়র পারিষদ তারক সিংহ জানান, বাগড়ি মার্কেটের কাছেও একটি গভীর নলকূপ বসানো হয়েছিল। কিন্তু সেই গভীর নলকূপ ঠিক মতো কাজ করে না বলে অভিযোগ এলাকার ব্যবসায়ীদের।

এক দিকে পুরসভার গভীর নলকূপ ঠিক মতো কাজ করে না। অন্য দিকে, বেশির ভাগ বাজারেই নেই জলাধার বা অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্র। এ প্রসঙ্গে দমকলের ডিজি জগমোহন বলেন, ‘‘বড়বাজারের প্রতিটি বাজারেই পরিদর্শন হচ্ছে। সেখানে কী কী খামতি রয়েছে, তা দেখা হচ্ছে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy